Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
COVID19

Coronavirus: শাস্তির বদলে হাতজোড় করে অনুনয় আর কত দিন?

গণপরিবহণ থেকে উৎসবের দিনের গন্তব্য, বাজার থেকে শপিং মল— রোজই মাস্কবিহীন জনতার ভিড় বেড়ে চলায় সম্প্রতি অনেকটাই কড়া হয়েছে পুলিশ।

 অকুতোভয়: পুলিশের সামনে দিয়েই মাস্কহীন ঘোরাফেরা। ধর্মতলায়। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অকুতোভয়: পুলিশের সামনে দিয়েই মাস্কহীন ঘোরাফেরা। ধর্মতলায়। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:২৪
Share: Save:

কলকাতা শহরে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। নতুন স্ট্রেনের পজ়িটিভিটির হারও চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের। পরিস্থিতি বুঝে তড়িঘড়ি কড়া বিধিনিষেধ বলবৎ করার পথে হাঁটতে হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে। কিন্তু তাতেও মাস্ক পরানো যাচ্ছে না আমজনতার একাংশকে। উল্টে বর্ষবরণের উৎসবের নামে তাঁদের কেউ কেউ পথে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, দেশের বেশ কিছু শহর যেখানে ‘মার্শাল’ লাগিয়ে মাস্ক না পরার জন্য জরিমানা আদায় করছে, সেখানে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ হাঁটছে কোন পথে?

গণপরিবহণ থেকে উৎসবের দিনের গন্তব্য, বাজার থেকে শপিং মল— রোজই মাস্কবিহীন জনতার ভিড় বেড়ে চলায় সম্প্রতি অনেকটাই কড়া হয়েছে পুলিশ। উৎসবের দিনগুলিতে মাইক নিয়ে প্রচার করতেও দেখা গিয়েছে তাদের। বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, দয়া করে মাস্ক পরুন।’’ কিন্তু ওই পর্যন্তই। মাস্ক না পরায় কত জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই তথ্য লালবাজারের তরফে নিয়ম করে জানানো হলেও কোনও ক্ষেত্রেই জরিমানা করার কথা বলা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। মাস্কহীন অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়া ব্যক্তিরাও জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নয়তো বড়জোর থানা পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে নাম, ঠিকানা লিখে নিয়ে ছাড়া হয়েছে। এতেই প্রশ্ন উঠেছে, আইনে জরিমানার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ এখনও ‘হাতজোড়’ করার পথে হাঁটছে কেন? প্রশাসন কড়া না হলে যেখানে করোনা-বিধি পালনের দায়বদ্ধতা দেখা যায় না, সেখানে জরিমানা না করার এই ‘ছাড়’ই কি আরও বেপরোয়া করে তুলছে মাস্কহীন জনতাকে?

বর্ষবরণের রাতে পার্ক স্ট্রিটের ভিড়ে মাস্কহীন এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পুলিশ জরিমানা করলে কী করবেন? তমাল দত্ত নামে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘পুলিশ জরিমানা করে বলে তো শুনিনি! শুধু মাস্ক হাতে দিয়ে ছবি তুলিয়ে ছেড়ে দেয়। ওই ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনসংযোগ করে। আমাকে এক বার ধরেছিল। ছবি তুলিয়েই ছেড়ে দিয়েছে।’’ ভিক্টোরিয়ার সামনে মাস্কহীন এক তরুণী আবার বললেন, ‘‘এই তো, মাস্ক পরে নেই। একটু আগে পুলিশ দেখে বলল, মাস্ক পরে নিন, ব্যস! জরিমানা করার হলে তো করতই।’’ পয়লা জানুয়ারি চিড়িয়াখানার লাইনে দাঁড়ানো, মাস্কহীন এক মহিলার মন্তব্য, ‘‘জরিমানা হলে কি কেউ মাস্ক ছাড়া ঘুরত? জরিমানার ভয়ে বাইকে হেলমেট ছাড়া ওঠা কত কমে গিয়েছে দেখেছেন!’’

যদিও পুলিশ সূত্রের খবর, মহামারি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজ্যের সব কমিশনারেটের কমিশনারদের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। অনুজ শর্মা কলকাতার পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন একটি নির্দেশিকা জারি করেন। তাতে প্রকাশ্যে থুতু ফেলার মতো মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বেরোলেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা রয়েছে। বিধি অনুযায়ী, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট এলাকায় পালিত হওয়া বাধ্যতামূলক।

কলকাতার ক্ষেত্রে মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখলে প্রথমে সতর্ক করার কথা পুলিশের। পরে কলকাতা পুলিশ আইনের ৬২বি বা ৬৬ নম্বর ধারায় মামলা করতে পারে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে ১০০ টাকা বা তারও বেশি জরিমানা হতে পারে মাস্কহীন ব্যক্তির। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর দুপুর থেকে ১ জানুয়ারি রাত আটটার মধ্যে মাস্ক না পরায় ১০০০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও কোনও ক্ষেত্রেই জরিমানার কথা বলা হয়নি। বড়দিনেও তেমনটাই ঘটেছে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র খাতায়-কলমে। যদিও কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত যাবতীয় সাপ্তাহিক পরিসংখ্যানই লালবাজার থেকে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) ও নবান্নে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে পাঠানোর কথা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘কড়াকড়ি না থাকলেই সব সচেতনতা উধাও হয়ে যায়। সেটা যদিও হওয়ার কথা নয়। তবু বলব, পুলিশ-প্রশাসন আরও একটু কড়া হলে যদি কাজ হয়, তা হলে সেটাই হতে হবে। পুলিশেরও সর্বক্ষণ মাস্ক পরা উচিত। যাতে সাধারণ মানুষ তা দেখে সচেতন হন।’’ কলকাতার সদ্য নিযুক্ত পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর দফতর জানিয়েছে, নতুন কমিশনার সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন। বিষয়টি দেখা হবে। যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘প্রশাসনিক স্তর থেকেই জরিমানার পরিবর্তে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কার্যোদ্ধারের নির্দেশ এসেছে। করোনার জেরে নাগরিকদের বড় অংশের আর্থিক সমস্যার কথা ভেবে মানবিক কারণে জরিমানায় ছাড় দিতে বলা হয়েছে।’’

সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ানো সত্ত্বেও জরিমানায় এই ছাড় কত দিন চলতে থাকে, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID19 Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE