Advertisement
E-Paper

গরু চুরি থেকেই হাত পাকিয়ে এটিএম লুঠ

এ যেন ঘাস-খড় কাটতে কাটতে শেষমেশ গলা কাটার বিদ্যে রপ্ত করে ফেলা! ছিল গরু-চোরের দল। হয়ে গেল সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে এটিএম ভেঙে টাকা লুঠ করায় পারদর্শী। তা-ও ব্যাপারটা যদি শুধু কোটি কোটি টাকায় আটকে থাকত!

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:০০

এ যেন ঘাস-খড় কাটতে কাটতে শেষমেশ গলা কাটার বিদ্যে রপ্ত করে ফেলা!

ছিল গরু-চোরের দল। হয়ে গেল সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে এটিএম ভেঙে টাকা লুঠ করায় পারদর্শী। তা-ও ব্যাপারটা যদি শুধু কোটি কোটি টাকায় আটকে থাকত! তাদের লুঠের পরিমাণ কেবল গত পাঁচ বছরেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকা! অর্থাৎ, গড়ে ফি বছরে রোজগার ১০০ কোটি!

পথটা সহজ ছিল না যদিও। কারণ হাজার হোক, আসলে তো মামুলি ছিনতাইবাজ। তাই হাত পাকানো পর্বে, চার বছর আগে গ্যাস কাটার দিয়ে এটিএম কাটতে গিয়ে ৪০ লক্ষ টাকা পুড়িয়েই ফেলেছিল। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরে শিখে নেয়, কী করে গ্যাস কাটার দিয়ে এটিএম-ও কাটা যাবে, আবার আঁচও লাগবে না ভিতরে রাখা থরে থরে নোটের গায়ে!

গরু-চোর থেকে এটিএম লুটেরা হয়ে ওঠা এই দলটাই ‘হরিয়ানা গ্যাং’। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মিলে যারা সম্প্রতি কলকাতা-সহ রাজ্যে এক ডজনেরও বেশি এটিএমে গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে টাকা বার করে নিয়েছে। তদন্তে যাদের অতীত ও সেখান থেকে উত্তরণ অবাক করেছে গোয়েন্দাদের।

এটিএম ভেঙে টাকা লুঠের ঘটনায় হাওড়ার পিলখানার এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারের পরে হরিয়ানা গ্যাং সম্পর্কে বহু তথ্য এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে। তাঁদের একাংশের মতে, একটা সময়ে বিহার, উত্তরপ্রদেশের ডাকাতদের কারণে কলকাতা তথা রাজ্য পুলিশকে তটস্থ থাকতে হতো। ভিন্‌ রাজ্যের ওই দুষ্কৃতীরা গড়িয়াহাট, বড়বাজারে ব্যাঙ্ক ডাকাতি করে লক্ষ লক্ষ টাকা লুঠ করেছিল। সে সব ডাকাতি বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ। তবে এখন গোয়েন্দা অফিসারদের একাংশই বলছেন, এখন সতর্ক থাকতে হবে হরিয়ানা গ্যাং-কে নিয়ে। হাওড়ার পিলখানা থেকে কালাম শেখ নামে যে দুষ্কৃতী ধরা পড়েছে, সে হরিয়ানা গ্যাংয়ের দক্ষ দু’জনকে নিয়ে এসে এটিএম লুঠ করেছিল। আসানসোলে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে লুঠের একটা অংশ— নগদ ১৬ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে অবশ্য নিশ্চিন্ত থাকার জো নেই বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। কারণ, তাঁরা জেনেছেন, ওই দলের সদস্যেরা সংখ্যায় অনেক। আর এটিএম লুঠে লিপ্ত হরিয়ানা গ্যাংয়ের সংখ্যাই ১৫!

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আদতে তারা ছিল হরিয়ানার মেওয়াট জেলার লোক। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, উত্তর ভারতে একদা সক্রিয় মেওয়াট জেলার সেই গরু চোরেরাই ২০১২ সালের পর থেকে পাকাপাকি ভাবে এটিএম লুঠ শুরু করে দেয়। বছর দশেক আগে মেওয়াট জেলার গরু চোরেরা আশপাশের রাজ্যে গিয়ে গরু চুরি করত। তার পর ক্রমশ গরু চুরি ছেড়ে জয়পুর-দিল্লি হাইওয়েতে গাড়ি ছিনতাই শুরু করেছিল। বছর সাতেক আগে সেই সময়ে তাদের বিরুদ্ধে বছরে গড়ে প্রায় ৫০০টি গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগ জমা পড়ত। তখনই এটিএম ভাঙার চিন্তা মাথায় খেলে তাদের।

গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে মুম্বই পুলিশ জাহিদ ও আরিফ নামে দুষ্কৃতীর এটিএম ভাঙার দু’টি দলকে ধরেছে। গ্রেফতার হয়েছে আট-ন’জন। ধৃতদের জেরায় জানা গিয়েছে, কী ভাবে গরু চুরি থেকে এটিএম ভেঙে টাকা লুঠে হাত পাকিয়েছে মেওয়াট গ্রামের ওই চোরের দল। গত ক’মাসে সিআইডি, কলকাতা পুলিশ, ব্যারাকপুর কমিশনারেট ও হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা এটিএম লুটেরাদের ধরতে একযোগে তদন্ত শুরু করেন। মুম্বই পুলিশ সূত্রে এ রাজ্যের তদন্তকারীরা জেনেছেন, মেওয়াট গ্রামের ওই একদা গরু চোরের দল হাইওয়েতে গাড়ি ছিনতাইয়ের পরে সম্পন্ন আরোহীকে কাছাকাছি এটিএম কাউন্টারে নিয়ে গিয়ে তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে টাকা তোলাতে বাধ্য করত।

গোয়েন্দারা মনে করছেন, তা করতে করতেই ওই দুষ্কৃতীদের মাথায় এটিএম কাউন্টার ভাঙার ফন্দি খেলে। তারা মনে করে, এ কাজ করতে পারলে একলপ্তে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। তার উপরে গাড়ি ছিনতাই, গাড়ির মালিককে ভয় দেখানোর ঝক্কি, পরে শনাক্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি— কিছুই থাকছে না। এমনিতেই জয়পুর-দিল্লি হাইওয়েতে ছিনতাই করা গাড়ি দিল্লি ও মুম্বইয়ের নানা এলাকায় স্থানীয় দুষ্কৃতীদের মাধ্যমে বিক্রি করত হরিয়ানা ছিনতাইবাজরা। সেই সূত্রেই আলাপ হওয়া বিভিন্ন রাজ্যের দুষ্কৃতীদের সামিল করে এটিএম ভাঙার দেশজোড়া নেটওর্য়াক তৈরি করে ফেলে মেওয়াটের গরু-চোরেরা।

সিআইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, হাওড়ার বাঁকড়ার আকবর খান নামে এক দাগি দুষ্কৃতীর মাধ্যমেই হরিয়ানার মেওয়াট গ্রামের এটিএম লুটেরারা পিলখানার কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই রাজ্যে হানা দেওয়ার ছক কষে। শহরের পরপর এটিএম লুঠের পরে আকবরও গা-ঢাকা দিয়েছে।

ATM Burglars Money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy