Advertisement
E-Paper

আড্ডা আর রোড-শোয়ে জমজমাট রবিবারের প্রচার

এফ ই ব্লকের পুরনো পড়শিকে দেখতে রোববারের ব্যস্ত গেরস্থালি ফেলে বেরিয়ে পড়েছেন পাড়ার ভাবিজি। বেলা ১০টা থেকে ‘কাশ্মীর ভবন’-এর হলে হত্যে দিয়ে পড়ে আছেন তিনি।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১১
সল্টলেকে অসীম দাশগুপ্ত এবং রমলা চক্রবর্তী। — নিজস্ব চিত্র।

সল্টলেকে অসীম দাশগুপ্ত এবং রমলা চক্রবর্তী। — নিজস্ব চিত্র।

এফ ই ব্লকের পুরনো পড়শিকে দেখতে রোববারের ব্যস্ত গেরস্থালি ফেলে বেরিয়ে পড়েছেন পাড়ার ভাবিজি। বেলা ১০টা থেকে ‘কাশ্মীর ভবন’-এর হলে হত্যে দিয়ে পড়ে আছেন তিনি।

এখন সি এল ব্লকে পাততাড়ি গুটোলেও পুরনো পাড়ার মায়াই আলাদা। সুনীতা শ্যামসুখের সঙ্গে দেখা হতেই এফ ই ব্লকবাসী অসীম দাশগুপ্তের দু’চোখে স্নেহের ঝিলিক ফুটে উঠল।

অসীমবাবু থেমে জানতে চাইলেন, ‘‘হর্ষ, যশেরা কত বড় হল!’’ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে মাথায় ছাড়িয়ে যাওয়া শিবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ও সেন্ট জেভিয়ার্সের বি কম ছাত্র, দুই সদ্য তরুণ, ‘‘আঙ্কল, হাউ আর ইউ’’ বলে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। এর পরে কিছুক্ষণ স্মৃতিচারণ পর্ব। অনেক বছর আগে যখন যশ, হর্ষদের ‘আঙ্কলে’র সিকিওরিটি গার্ড স্বয়ং সা‌ইকেলে করে তাদের স্কুলবাসে তুলে দিত, কিংবা তখন বালিকা আর এক প্রতিবেশী কন্যা সিমা অগ্রবাল ইস্কুলের দেরি হলেই, ‘‘আঙ্কল পৌঁছে দেবে’’ বলে ‘স্মার্টলি’ মন্ত্রী অসীমবাবুর গাড়িতে উঠে পড়ত।

‘আঙ্কল’ বিধাননগর পুরনিগমের ভোটে ফের বামফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ার সুবাদেই পুরনো প্রতিবেশীদের এই পুনর্মিলন। খুনসুটিতে ভোটের গুরুগম্ভীর প্রচার কোথায় চাপা পড়ে গেল। বি ই ব্লকের গেস্ট হাউসের একতলায় আর একটি আসরেও ভোটের নামগন্ধ কই! সুবেশ দাদা-বৌদি, সব্যসাচী ও ইন্দ্রাণী দত্তের সঙ্গে তখন নিজস্বী তোলার ধুম লেগেছে। হংসি পটোডিয়া এসে সবাইকে ঠেলে-ঠুলে ‘দাদা’র পাশে দাঁড়িয়ে হুকুম করলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি তুলুন। ইন্ডিয়ানাপলিসে আমার মেয়ে আঙ্কলের ছবি দেখবে বলে পাগল করে দিচ্ছে!’’

গোটা হলঘরে একটাও ঝান্ডা নেই। স্লোগান-বক্তৃতার প্রশ্নই উঠছে না। প্রার্থী তথা বিধাননগর-নিউ টাউনে তৃণমূলের বিশিষ্ট মুখ সব্যসাচী অগত্যা প্রাতরাশের প্লেটে মালাই টোস্ট, গাঠিয়া, স্যান্ডউইচ, গুলাবজামুনে মনোনিবেশ করলেন। রিয়্যাল এস্টেট কারবারি রামবাবু ধনানিয়া, জগন্নাথ গুপ্ত, সত্যনারায়ণ সোনি, বিমল পটোডিয়ারা মিলে ‘‘কী দাদা, আমাদের ফেলে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছ?’’ বলে দাদার সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠলেন।

বাস্তবিক, প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা স্ত্রী ইন্দ্রাণীর আঁচলে ওয়ার্ডের সংসারের চাবি গুঁজে সব্যসাচী এখন মহা ব্যস্ত। পুরভোটের আগে শেষ রবিবারের এই প্রাতরাশ-বৈঠকের পরে নিজের ওয়ার্ডে তাঁকে প্রায় দেখাই গেল না। কখনও রাজারহাটের দশদ্রোণে শাসকদলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা, কখনও বা হাতিয়াড়ায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তথা ববি দা-কে‌ নিয়ে ‘নিজের ঘনিষ্ঠ’ শাহনওয়াজ আলি মণ্ডল ওরফে ডাম্পির হয়ে পদযাত্রা।

ভোটে না দাঁড়িয়েও খুব ব্যস্ত বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু। এই সকালে চিত্রতারকা হিরণকে নিয়ে বৈশাখীতে জিপে রোড-শো করছেন, তো সন্ধেয় ফুটবলার শৈলেন মান্নার কন্যা নীলাঞ্জনার জন্য সভায় ডাক্তারবাবু সুব্রত মৈত্রকে পাশে নিয়ে জমিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুরও ব্যস্ত রুটিন। সকালে কর্মিসভার পরে সন্ধ্যে থেকে কেষ্টপুর, জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া, তেঘরিয়া লোকনাথ মন্দিরে পরপর চারটে মিটিং ফেলা আছে। একদা পূর্ণেন্দুবাবুর সিএ দেবরাজ চক্রবর্তী অবশ্য শাসকদলকে খানিক অস্বস্তিতে ফেলেছেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে জোরকদমে ছুটছেন। দুপুরে কৈখালির আবাসনের সামনে তরুণ আইটি পেশাদার দেবরাজের দেখা মিলল। তিনি তখন অনেক দিন ধরে পড়ে থাকা কাটা গাছ সরানোর কাজে তদারকি করছেন।

সেই কাকভোরে এফ সি, এফ ডি, এফ ই ব্লকের পার্কে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের মাঝে পৌঁছেছেন এক মহিলা। ট্রেডমার্ক ছাপা শাড়ি, কাঁধে কালো ব্যাগ। প্রয়াত বামমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী-জায়া রমলা চক্রবর্তী টুকটুক হেঁটে জনসংযোগ জারি রাখছেন। পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী সকালে ক্যানসার কোয়ার্টার্স, অমর্ত্য আবাসনের আঁতিপাঁতি ঘুরেছেন। সন্ধেয় আবার জিপ নিয়ে বড়সড় রোড-শো করলেন।

বাম-শিবির থেকে সদ্য জার্সি বদলে তৃণমূল হওয়া সাবেক রাজারহাট-গোপালপুর পুর-চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায়কে এখন দিনভর এলাকায় তৃণমূল নেতাদের মিটিংয়ের খেয়াল রাখতে হচ্ছে। সকাল থেকে ডোর-টু-ডোর, বিকেল থেকে পরপর মিটিংয়ের ফাঁকে একটু লালকুঠিতে নিজের নেতাজি সঙ্ঘের চোখ জুড়নো সুইমিং পুলের হাওয়ায় বসতে পেয়েছিলেন। পার্ষদদের সঙ্গে কিছু গোপন শলা-পরামর্শের ফাঁকে একটু চিনিবিহীন চায়ে চুমুক দিয়ে মুখে একটা তৃপ্তির ভাব ফুটে উঠল।

সাতসকালে গান শুনে সল্টলেকের অনেক পাড়ার বাসিন্দাদের ঘুম ভেঙেছে। কথাগুলো ভালো বোঝা যাচ্ছিল না। তবে দু’টো শব্দ বার বার ফিরে আসছিল। ‘মমতা, মমতা!’ শাসকদলের প্রচারই যেন ছুটির দিনের ‘রাইজিং বেল’।

একটু বেলা বাড়তেই বিজেপি-র মিছিলে রণপাধারী শিল্পীদের কসরত দেখতে ভিড় জমে এ সি ব্লকের বিভিন্ন বারান্দায়। দেখা যায়, সল্টলেকের বিজেপি নেতা অশোক সরকার, প্রার্থী পারমিতা সাহাদের নিয়ে মিছিলে হাঁটছেন রাজ্যের একমাত্র বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য।

ছুটির দিনের নিস্তরঙ্গ মেজাজে এ সব দৃশ্য কৌতুকের উপাদান যোগ করল। তবে বিকেলের দিকে এক বার নিউ টাউন ইকো পার্ক লাগোয়া মাঠে কাশের বনে হঠাৎ হাওয়ার হিল্লোল উঠতে দেখা গেল। তখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা শুরু হব হব। ধুলো উড়িয়ে আসছে জনা পঞ্চাশ-ষাট তরুণ তুর্কির হেলমেটবিহীন বাইক-বাহিনী।

উপর উপর সব কিছুই শান্ত দেখাতে পারে! কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে সল্টলেক-নিউ টাউনের এই ‘প্রেস্টিজ ফাইট’-এ শাসকদল কাউকে এক ছটাক জমি ছাড়তেও রাজি নয়।

riju basu crowdy poll campaign saltlake vote howrah vote colourfull poll campaign saltlake poll campaign howrah poll campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy