Advertisement
E-Paper

বিপদে পড়লে চলে আসুন, আহ্বান ফেসবুকে

ফেসবুকে তাঁদের নিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক গ্রুপও। রাতে সোশ্যাল মিডিয়া ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে হাওড়া, কলকাতা, বারাসত, উত্তরপাড়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ জানিয়েছেন, বিপদে পড়লে তাঁদের কাছে মিলবে অাশ্রয়। সঙ্গে দিয়েছেন তাঁদের ফোন নম্বরও।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০১:০৬
ভোগান্তি: বৃষ্টি মাথায় করেই কাজে বেরোনো। শুক্রবার সকালে ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ভোগান্তি: বৃষ্টি মাথায় করেই কাজে বেরোনো। শুক্রবার সকালে ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

শুধুই ‘স্পিরিট অব মুম্বই’ নয়। আন্তরিকতায় পিছিয়ে নেই শহর কলকাতাও।

ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে শুক্রবার সকাল থেকেই থরোথরো ছিল কলকাতাবাসীর হৃৎপিণ্ড। রাস্তায় বেরিয়ে দুর্যোগে আটকে পড়লে কী হবে— তা নিয়ে সকাল থেকেই সর্বত্র চলেছে আলাপ-আলোচনা। কিন্তু বিকেলে দেখা যায় সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসছেন

এই শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই। এমনকি, ফেসবুকে তাঁদের নিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক গ্রুপও। রাতে সোশ্যাল মিডিয়া ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে হাওড়া, কলকাতা, বারাসত, উত্তরপাড়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ জানিয়েছেন, বিপদে পড়লে তাঁদের কাছে মিলবে অাশ্রয়। সঙ্গে দিয়েছেন তাঁদের ফোন নম্বরও।

যেমন, সল্টলেকের শ্রাবণী আবাসনের বাসিন্দা কাবেরী গোস্বামী। তিনি তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘‘এই তাণ্ডবে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বা অফিসফেরত মানুষ কোনও সমস্যায় পড়লে আমাদের বাড়িতে চলে আসবেন। এর জন্য আমাদের চেনা-পরিচিতির দরকার নেই। আমরা সল্টলেকে থাকি।’’

এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কাবেরীদেবীর এই পোস্ট দেখে অনেকেই তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এমন মানসিকতার জন্য। এ নিয়ে কথা বলতে ফোন করা হলে কাবেরীদেবী বলেন, ‘‘দুর্যোগে কেউ কোথাও আটকে পড়েছে বলে যদি খবর পান, কিংবা আপনার চেনা-পরিচিত কেউ যদি কোথাও আটকে পড়েন, তা হলে দয়া করে আমার ফোন নম্বর দিয়ে দেবেন। আমরা সেই অচেনা অতিথিকে আশ্রয় দেব আমাদের বাড়িতেই।’’

স্রেফ কারও চালচলন দেখেই তাঁকে চোর বলে সন্দেহ করে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা আকছারই ঘটে এ শহরে। রাজনীতির নামে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্বের ছবিও দেখা যায় অহরহ। এমনই একটা সময়ে ফণী নামের এক ঘূর্ণিঝড় যেন কিছু মানুষকে একে অপরের কাছে এনে দিল। ঝড়ের আতঙ্কে এ দিন মানুষ যেমন মানুষের সমস্যার কথা ভেবেছেন, তেমনই দুর্যোগ হানা দিলে রাস্তার অবোলা প্রাণীদের বিপদের আশঙ্কা নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় চলেছে আলোচনা। ফণীর তাণ্ডবের দোষ হয়তো খানিকটা মকুব হয় এমন সমাপতনে।

২০১৭ সালে বন্যায় ভেসে গিয়েছিল মুম্বই শহর। তখন রাস্তায় আটকে পড়া লোকজনকে সাহায্য করে নিজের বাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন শহরের সাধারণ বাসিন্দারাই। তবে কাবেরীদেবী অত কিছু ভাবছেন না। আপনার বাড়িতে ক’জনের জায়গা হবে? তাঁর জবাব, ‘‘কত ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে গিয়েছে। আইটি সেক্টরের লোকজনও রাতে ফিরবেন। শেষ পর্যন্ত সত্যিই দুর্যোগ শুরু হলে তাঁরা সবাই রাস্তায় আটকে পড়বেন। পনেরো-কুড়ি জনের জন্য রান্নার চাল, ডাল, আলু মজুত করা রয়েছে। ‘যদি হও সুজন, তেঁতুলপাতায় ন’জন।’ ছেলেবেলা থেকে তেমনটাই শিখেছি।’’

অবিশ্বাসের আবহে গা ভাসানো এই সময়ে এমন উদ্যোগ শিক্ষণীয় বলেই মনে করেন সমাজকর্মী দোলন গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এই ভাবে চলা আমরা ভুলে যাচ্ছি। যে ভাবে মুম্বইয়ের মতো এই শহরের কিছু বাসিন্দাও এগিয়ে আসছেন তাকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই। এটা আমাদের শেখা উচিত।’’

আবার সমাজকর্মী সাবির আহমেদের কথায়, ‘‘আমরা এখন মানুষের সঙ্গে মিশতে গেলে অনেক ধরনের হিসেবনিকেশ করি। এমন সঙ্কটের সময়ে একটা বিষয়ই টের পাওয়া যায় যে, বিপদের কোনও ধর্ম, বর্ণ হয় না। আমার এক বন্ধুও আজ আমাকে জানিয়েছে, রাস্তায় আটকে গেলে তাঁর বাড়িতে চলে যেতে।’’

Cyclone Fani Fani ফণী Social Media
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy