কলকাতার বাইপাসে শনিবার সকালের ছবি। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য জুড়ে ফণী মোকাবিলার কড়া প্রয়াসের মধ্যেই রাত ১২.৩০ নাগাদ ওড়িশা ছুঁয়ে বঙ্গে ঢুকে পড়ল ফণী। কলকাতায় ফণীর তেমন প্রভাব পড়ল না। মহানগরীর রাস্তা শনিবার সকালে ছিল একেবারে সুনসান। সকাল ৯টা বাজতেই ছন্দে ফিরেছে কলকাতা। স্বাভাবিক মহানগরের পরিস্থিতি। বেলা বাড়তেই মেঘ কেটে রোদের ঝিলিক মহানগরে। স্বাভাবিক হয়েছে জনজীবন।
সকাল ৭টা নাগাদ রাস্তায় খুব একটা বাসের দেখা মেলেনি। তবে অটো চলেছে এ দিন ভোর থেকেই। পুরসভার কন্ট্রোল রুমে জারি রয়েছে নজরদারি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় সরকারি বাস ও অন্যান্য যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। দুপুরের পর আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে শুরু করবে, জানিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশ কুমার বাস আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, কলকাতা ও রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় দুপুরের পর থেকেই কমবে বৃষ্টি। কলকাতা থেকে ৬০ কিমি দূরে রয়েছে ফণী। বাংলাদেশে সকাল ১০ টার পরেই ফণী প্রবেশ করবে। বাংলাদেশ সংলগ্ন জেলাগুলিতে তাই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা।
ধর্মতলা চত্বর অন্যদিনের চেয়ে বেশি ফাঁকা ছিল শনিবার সকালে। নিজস্ব চিত্র
যত রাত বেড়েছে ততই পাল্লা দিয়ে হাওয়ার গতিবেগ ও বৃষ্টি বেড়েছিল শহরে। কলকাতার কোনও কোনও জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর ছিল, যত সময় গড়াবে ততই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে এই দুর্যোগ। কিন্তু সকাল থেকে দুর্যোগ কমতে থাকে।
শুক্রবার সকাল থেকেই শহরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। সে দিন বিকেল থেকেই প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয় কলকাতায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খড়্গপুরে থাকাকালীনই শহরবাসীকে সতর্ক থাকার বার্তা দেন।
সিআর অ্যাভিনিউয়ে শনিবার সকালে। নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসনিক তরফে জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করতে দফায় দফায় বৈঠক সারেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও পুরকর্মীরা। এই মুহূর্তে ঝড়ের প্রভাবে কী অবস্থা শহরের?
শহরে ফণীর প্রভাব
কলকাতা থেকে ৪০ কিমি পশ্চিমে অবস্থান করছে ফণী। সিইএসসি আজ রাত থেকে কলকাতার নানা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। রবিবার পর্যন্ত সংস্থার সিইএসসি-র সব ইঞ্জিনিয়ারের ছুটি বাতিল হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দিন-রাত কর্তব্যরত থাকবেন বিদ্যুৎকর্মী ও ইঞ্জিনিয়ারেরা। তার ছিঁড়ে বা অন্য কোনও ভাবে তড়িদাহত হয়ে যাতে কোনও মৃত্যু না ঘটেতা ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কলকাতায় কোনও কোনও জায়গায় ৫০-৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া।
আরও পড়ুন: ফণীর ভয়াল তাণ্ডবে বিধ্বস্ত পুরী-ভুবনেশ্বর, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮
খুলে নেওয়া হয়ছে শহরের সব ব্যানার ও হার্ডিং। —নিজস্ব চিত্র।
শহর জুড়ে উঁচু জায়গা থেকে সব ধরনের হোর্ডিং, ব্যানার খুলে দেওয়া হয়েছে। শহরের রাস্তায় বেআইনি বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। গার্ডেনরিচ- সহ শহরের নানা জায়গায় তৈরি করা হয়েছে আশ্রয় শিবির। বিপজ্জনক বাড়িও খালি করতে বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। আজ আলিপুর চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে। ইকো পার্কের কিছু জয় রাইড বন্ধ রাখা হবে, জলাশয়ের বিনোদনমূলক ব্যবস্থা ও বোটিং বন্ধ রাখা হচ্ছে। কলকাতা গেটের ঝুলন্ত রেস্তরাঁয়বুকিং নেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। সাউথ সিটি মল খুলবে বেলা ১২ টায়। হিডকো এবং নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লাইভ: খড়্গপুর দিয়ে এ রাজ্যে আছড়ে পড়ল ফণী, অভিমুখ আরামবাগের দিকে
শুক্রবার রাতে শুনসান শিয়ালদহ স্টেশন। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তার ধারে বাতিস্তম্ভ, ট্রান্সফর্মার কিংবা বিদ্যুতের খুঁটিতে হাত দিতে নিষেধ করছে কলকাতা পুরসভা। নির্ধারিত ২২৪টি ট্রেনের বদলে শনিবার ১৭৪টি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ চলে গেলে গোটা মেট্রো স্টেশন যাতে অন্ধকার না হয় ও ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’ চালু থাকে, তার ব্যবস্থা নিচ্ছে মেট্রো রেল। স্টেশনগুলিতে মজুত রাখা ব্যাটারিতে যাতে পর্যাপ্ত চার্জ থাকে, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিভিন্ন শাখায় ১৮০টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। বাতিল হয়েছে নানা দূরপাল্লার ট্রেনও। বারাসত-হাসনাবাদ, শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার, শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর, শিয়ালদহ-ক্যানিং, লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা বিভাগ মিলিয়ে মোট ৩২ টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। শিয়ালদহ উত্তর ও দক্ষিণ শাখায় পরিস্থিতি পরিদর্শনের জন্য বিশেষ নজরদারি গাড়ির ব্যবস্থা থাকছে। শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরও বন্ধ রাখা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy