Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Fani

ফণীর ভয়াল তাণ্ডবে বিধ্বস্ত পুরী-ভুবনেশ্বর, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮

কিন্তু রক্ষা পায়নি স্থায়ী কাঠামো, বাড়িঘর, গাছপালা। ফুঁসছে সমুদ্র। বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে।

পুরীতে ফণীর তাণ্ডব। ছবি: পিটিআই।

পুরীতে ফণীর তাণ্ডব। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ১৪:৩৪
Share: Save:

সময়মতো আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তা। আর সেই অনুযায়ী আগাম প্রস্তুতি। কিন্তু তাতেও প্রকৃতির তাণ্ডবলীলা থেকে রেহাই পেল না পুরী, ভুবনেশ্বর-সহ ওড়িশার উপকূল বরাবরের গ্রাম- শহর। ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালাল ঘূর্ণিঝড় ফণী। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল মৃতের সংখ্যা ৩। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে সংখ্যাটা বেড়েছে। রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন।

বহু জায়গায় রেললাইন উপড়ে গিয়েছে। রাস্তার উপর ভেঙে পড়েছে টাওয়ার, বিদ্যুতের খুঁটি। পুরী, ভুবনেশ্বরের প্রবীণদের অনেকেই বলছেন, প্রকৃতির এমন ভয়াল-ভয়ানক রূপ আগে কখনও দেখেননি তাঁরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মূলত শহরাঞ্চলের ছবিটাই উঠে এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। কারণ ওড়িশার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল এখনও বিচ্ছিন্ন। সেই অঞ্চলের চিত্র যে আরও ভয়াবহ হবে, সেটা আন্দাজ করে এখনই আঁতকে উঠছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। তাঁদের অনেকেই বলছেন, কংক্রিটে মোড়া শহরের এই ছবি থেকেই বোঝা যাচ্ছে কার্যত গ্রামের পর গ্রাম মাটিতে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা। তবে আপাতত আশার কথা একটাই, 'এক্সট্রিমলি সিভিয়ার' থেকে 'ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম'-এ পরিণত হয়েছে ফণী। আর এ রাজ্যে ঢোকার আগে শক্তিক্ষয় হয়ে সেই ঝড়ই হয়ে যাবে 'সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম'।

মৃত ৮

ফণীর দাপটে তিনটি পৃথক ঘটনায় মৃত্যু হল এক মহিলা-সহ ৮ জনের। পুরী জেলার সাক্ষীগোপাল এলাকায় মাথায় গাছ পড়ে মৃত্যু হয় এক কিশোরের। নয়াগড় জেলায় একটি কংক্রিটের অংশ উড়ে এসে এক মহিলার গায়ে পড়ে। তাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রাপাড়া জেলার দেবেন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের একটি সাইক্লোন শেল্টারে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ মারা যান। অন্য দিকে, ভুবনেশ্বর ও সংলগ্ন এলাকায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

আছড়ে পড়ল ফণী

পূর্বাভাস ছিল আজ শুক্রবার দুপুরে ওড়িশার উপকূলে পুরী এবং চাঁদবালিতে আছড়ে পড়বে ফণী। কিন্তু গতি বেড়ে যাওয়ায় তার আগে সকাল দশটা নাগাদই ওড়িশার উপকূলে শুরু হয়ে যায় প্রবল ঝোড়ো হাওয়া এবং তুমুল বৃষ্টি। আর দুপুর ১২টার মধ্যেই উপকূল ভাগে পুরোপুরি পৌঁছে যায় ফণী। অর্থাৎ উপকূলে পৌঁছে যায় ‘আই অফ দ্য স্টর্ম’ বা ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু। তার পর থেকেই প্রবল গতিতে এগচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দিকে।

লন্ডভন্ড পুরী-ভুবনেশ্বর

ফণীর প্রথম শিকার পুরী এবং সংলগ্ন এলাকাগুলি। আগে থেকেই পুরীর সমস্ত হোটেল, লজ খালি করে দেওয়া হয়েছিল। কার্যত জনমানবশূন্য ছিল সৈকতশহর। কিন্তু রক্ষা পায়নি স্থায়ী কাঠামো, বাড়িঘর, গাছপালা। ফুঁসছে সমুদ্র। বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। বাঁধ উপচে ইতিমধ্যেই শহরে জল ঢুকছে। নীচু এলাকাগুলি জলমগ্ন। তাণ্ডব চলছে ভুবনেশ্বর, কটক, ভদ্রক, চাঁদিপুর, বালেশ্বরের মতো এলাকায়। আপাতত ঝড় থামার অপেক্ষায় প্রশাসন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হবে উদ্ধারকাজ। অতিভারী বৃষ্টিপাত চলছে পুরী, খুরদা, ভুবনেশ্বর এবং জগদীশপুরে।

প্রস্তুত সেনা, এনডিআরএফ

ঝড়-বৃষ্টির বেগ কিছুটা থামলেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে উদ্ধারে। তাই 'স্ট্যান্ডবাই' মোডে রয়েছে ভারতীয় সেনার তিন বাহিনী। উপকূল রক্ষী বাহিনীও প্রস্তুত। তবে যে সব এলাকায় পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে, সেখানে কাজ শুরু করে দিয়েছে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ)। উপড়ে বা ভেঙে পড়া গাছ কেটে সরানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। দুর্গতদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আশ্রয়স্থলে। অন্য দিকে ঝড় থামলেই হেলিকপ্টারে করে ওড়িশার উপকূল বরাবর আকাশপথে পুরো এলাকায় নজরদারি চালাবে উপকূল রক্ষী বাহিনী। সেই পরিস্থিতি বিচার করেই শুরু হবে উদ্ধার কাজ।

আরও পডু়ন: লাইভ: গাছ উপড়ে, ঘর ভেঙে, গ্রাম ভাসিয়ে ফণী-তাণ্ডব ওড়িশায়, মৃত অন্তত ২

আরও পড়ুন: রাজ্যে ঝড়বৃষ্টি শুরু, বিকেল থেকে বাড়বে ঝড়ের তাণ্ডব, ভোররাতেই আছড়ে পড়বে ফণী

আগাম প্রস্তুতি

ফণী পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলায় ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শেষ করেছে ওড়িশা প্রশাসন। তার মধ্যে রয়েছেন ৫৪২ জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও। শুধুমাত্র গঞ্জাম জেলা থেকেই সরানো হয়েছে ৩ লক্ষ মানুষকে। পুরী জেলায় সেই সংখ্যা এক লক্ষ ৩০ হাজার। তাঁদের খাবার সরবরহের জন্য খোলা হয়েছে ৫০০০ গণ রান্নাঘর। এছাড়া ত্রিপল, শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত।

বন্ধ আকাশপথ

ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর থেকে কাল সকাল থেকেই বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দরেআজ শুক্রবার রাত ৯-৩০ থেকে বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা এগিয়ে করা হয়েছে বিকেল তিনটে। অর্থাৎ বিকেল তিনটের পর আর কোনও বিমান ওঠানামা করবে না কলকাতা বিমানবন্দরেও। এই ব্যবস্থা জারি থাকবে কাল সকাল ৮টা পর্যন্ত।

বাতিল ভোটপ্রচার

আগামী৬ মে লোকসভার পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ। প্রচারের জন্য হাতে আর মাত্র এক দিন বাকি থাকলেও এ রাজ্যে সমস্ত প্রচার কর্মসূচি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল, বিজেপি-সহ সব রাজনৈতিক দল। খড়গপুর থেকে পরিস্থিতির তদারকি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়খণ্ডে বাতিল হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সভাও। এ ছাড়া ওড়িশা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি, বিজেডি-সহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিও স্থগিত বা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Fani Cyclone Fani Bhubaneswar Puri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE