Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
রিজেন্ট কলোনি

বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু মেয়ের, মা দুষছেন বাবাকে

তিল তিল করে চোখের সামনে সন্তানকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখছিলেন মা। আর তাঁর মৃত্যুর পরে তিনি এ জন্য দায়ী করলেন স্বামীকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২০
Share: Save:

তিল তিল করে চোখের সামনে সন্তানকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখছিলেন মা। আর তাঁর মৃত্যুর পরে তিনি এ জন্য দায়ী করলেন স্বামীকে। যিনি গত তিন মাস ধরে নিখোঁজ। বিড়বিড় করে বলছিলেন ‘ওকে’ কেউ ক্ষমা করবে না। স্বামীর বদমেজাজি স্বভাব আর নেশার প্রতি আসক্তির জন্যই তাঁদের এই পরিণতি বলে মনে করেন রিজেন্ট কলোনির বাসিন্দা সুজাতা চক্রবর্তী।

মঙ্গলবার দুপুরে সুজাতাদেবীর ঘর থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর বড় মেয়ে সংবৃতা চক্রবর্তীর (২৩) পচাগলা দেহ। সুজাতাদেবী বলেন, ‘‘মেয়ের বিছানায় প্রস্রাব করার রোগ ছিল। দিন পাঁচেক আগে মাটিতে নামিয়ে শুইয়ে দিতে বলে সে। আর ওঠেনি। সোমবার রাতে দেখি মেয়ের শরীর ফুলে উঠে নানা জায়গা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। রাতে কাউকে বিরক্ত না করে সকালে পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের বলি ডাক্তার ডাকার জন্য। তাঁরা এসে দেখে পুলিশে খবর দেন।’’

মঙ্গলবার লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে দিন চারেক আগে মৃত্যু হয়েছে সংবৃতার। তাঁর মা সু়জাতাদেবী ডায়াবেটিস রোগী এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তাঁকে সুস্থ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’

সুজাতাদেবী জানান, সংবৃতা অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিল। তাঁর স্বামী নিতাই চক্রবর্তী এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার পরে নিয়মিত কাজ ছিল না। মাস তিনেক বাড়িও আসেননি। সাত মাসের বিল বাকি থাকায় বিদ্যুৎ লাইনও কেটে দেওয়া হয়েছে। অন্ধকারেই থাকতেন মা-মেয়ে। সুজাতাদেবী জানান, টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারেননি। পুলিশের অনুমান, নিতাইবাবু নিখোঁজ হওয়ার পরেই তীব্র অর্থকষ্টে পড়েন সুজাতাদেবীরা। তার জেরেই বিনা চিকিৎসা ও অনাহার থেকে এই বিপত্তি। একই দাবি পড়শিদেরও। চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের (মেডিসিন) কথায়, ‘‘শুধু শিশুরা নয়, দেহের মূত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোনও গোলযোগ থাকলে যে কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে যথাযথ চিকিৎসায় এই রোগ সেরে যায়।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজাতাদেবীর আর এক মেয়ে সম্পূর্ণা বেহালায় থাকেন। সুজাতাদেবী জানান, তাঁর সঙ্গেও অনেক দিন ধরে সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘‘স্বামীর বদমেজাজ আর মদে আসক্তির জন্য আমার পাশে কেউ নেই। শান্তিগড়ে শ্বশুরবাড়িতে ফ্ল্যাট ছিল। তা বিক্রি করে এই ফ্ল্যাট কিনি।’’

স্থানীয়েরা জানান, রবিবারও পাড়ার শীতলা পুজোর মণ্ডপে দেখা গিয়েছিল সুজাতাদেবীকে। তবে তাঁর দুই মেয়েকে শেষ কবে দেখা গিয়েছে, তা মনে করতে পারেননি তাঁরা। এক বাসিন্দা শ্যামল রায় বলেন, ‘‘পাড়ায় বা আবাসনের কারও সঙ্গে মিশতেন না সুজাতাদেবীরা। অনেক আগে তাঁকে দোকানে কেনাকাটা করতে দেখা যেত। ইদানীং তা-ও দেখা যায়নি।’’

মাস চারেক আগে নেতাজিনগরে উদ্ধার হয় এক তরুণীর বিকৃত দেহ। মা আগলে ছিলেন দেহটি। সে ক্ষেত্রেও মা-মেয়েকে রেখে উধাও হয়ে যান পরিবারের কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

died without treatment Mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE