Advertisement
০৪ মে ২০২৪

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর দেহ মিলল শৌচাগারে

চিত্তরঞ্জন কলোনি হিন্দু বিদ্যাপীঠের ছাত্রী মৌসুমীর দিদি লাবণি শুক্রবার জানান, দুপুর দুটো পর্যন্ত বাড়ির সকলের সঙ্গে আবির খেলেছিল সে। পরিবার-প্রতিবেশীদের সঙ্গে ছবি তোলা, হুল্লোড়— সবেতেই মৌসুমী ছিল প্রথম সারিতে।

রং খেলে এই ছবিই সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছিল মৌসুমী।

রং খেলে এই ছবিই সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছিল মৌসুমী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৪
Share: Save:

দুপুরে সকলের সঙ্গে দোল খেলেছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মৌসুমী ব্রহ্ম (১৭)। বিকেল পর্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে টেক্সট মেসেজের কথোপকথনেও কোনও অঘটনের আভাস মেলেনি। বৃহস্পতিবার রাতে মায়ের বকুনি খাওয়ার পরে নিউ টাউনের গৌরাঙ্গনগরে বাড়ির শৌচাগারে সেই মেয়েরই মৃতদেহ মিলল গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায়!

চিত্তরঞ্জন কলোনি হিন্দু বিদ্যাপীঠের ছাত্রী মৌসুমীর দিদি লাবণি শুক্রবার জানান, দুপুর দুটো পর্যন্ত বাড়ির সকলের সঙ্গে আবির খেলেছিল সে। পরিবার-প্রতিবেশীদের সঙ্গে ছবি তোলা, হুল্লোড়— সবেতেই মৌসুমী ছিল প্রথম সারিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে সব ছবি পোস্টও করা আছে। রাতে হঠাৎ সেই মেয়ের মৃত্যুসংবাদে বিহ্বল গোটা পাড়া। পরিবার সূত্রে খবর, বিকেলে নিউ টাউনের মাঠে মা সুচিত্রা ব্রহ্মের সঙ্গে ফুচকা খেতে গিয়েছিল মৌসুমী। বাড়ি ফিরে পড়তে বসে। লাবণি জানান, সন্ধ্যা নাগাদ বোনের মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। তাঁর কথায়, ‘‘মৌসুমীকে ফোনে ব্যস্ত দেখে মা বলেন, ‘তোর সামনে পরীক্ষা। আর তুই ফোন নিয়ে এ সব করছিস!’ এর পরেই বোন ওই মেসেজ মুছে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শৌচাগারে যায়।’’

কুড়ি মিনিট পরেও শৌচাগার থেকে মৌসুমীর সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে মেয়ের দেহ উদ্ধার করেন পেশায় স্কুলশিক্ষক বাবা মাধব ব্রহ্ম। এ দিন মৃতার দিদি দাবি করেন, ‘‘বোনের একটি ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল। সে-ই ওই মেসেজ পাঠিয়েছিল। তাতে হয়তো অপমানজনক কিছু লেখা ছিল, যা বোন সহ্য করতে পারেনি।” যদিও পরিবারের তরফে এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে এই মৃত্যুর তদন্ত করছে পুলিশ।

পরিবার সূত্রে খবর, গত চার বছর স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা এক পড়ুয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মৌসুমীর। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে অপমানজনক কথা বলে মৌসুমীর মানসিক চাপ বাড়াচ্ছিল ছেলেটি। অভিযুক্ত ওই ছাত্রের পাল্টা দাবি, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একাধিক এসএমএস পাঠিয়েছিল মৌসুমী। ফোনে টাকা না থাকায় সেগুলির উত্তর দিতে পারেনি সে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ এক বার ফোনে কথা হয়। তার পরে মৌসুমীর সঙ্গে আর কথাই হয়নি বলে দাবি ওই ছাত্রের। এ দিন সে বলে, ‘‘বিকেলে যখন কথা হয়েছে, এক বারের জন্যও মনে হয়নি এমন কিছু করতে পারে ও।”

মানসিক চাপ তৈরির বিষয়ে অভিযুক্ত বন্ধুর বাবা বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই ওরা সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি। কয়েক মাস আগে দু’জনকে একসঙ্গে দেখে রাস্তাতেই মেয়েকে চড় মেরেছিলেন ওর বাবা। বাবা-মায়ের বকুনিতে মেয়েটি কত কষ্ট পেত, তা ছেলেকে পাঠানো মেসেজ পড়লেই বুঝতে পারবেন।” পুলিশ সূত্রে খবর, এমন অভিমানের কথা আছে মৌসুমীর ডায়েরিতেও। একাধিক পাতায় লেখা, ‘আই হেট মাই লাইফ!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE