Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Death

এ বার ব্যাঁটরা, প্রৌঢ়ের দেহ পড়ে ন’ঘণ্টা

মৃত প্রৌঢ়ের পরিজনেরা জানিয়েছেন, গত ২০ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। তার পরে বাড়িতেই কোয়রান্টিনে ছিলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫৬
Share: Save:

কলকাতার গরফা, নেতাজি নগর, সার্ভে পার্কের পরে হাওড়ার ব্যাঁটরা। তালিকাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। সংক্রমণ ছড়ানোর নয়, এই তালিকা করোনায় মৃত্যুর পরে দেহ বাড়িতে পড়ে থাকার!

রবিবার ব্যাঁটরার কালীপ্রসাদ চক্রবর্তী লেনে করোনায় মারা যান বছর ৫৩-র এক ব্যক্তি। অভিযোগ, প্রায় ৯ ঘণ্টা তাঁর দেহ বাড়িতে পড়ে ছিল। জেলা প্রশাসনের হেল্পলাইন, পুরসভা, পুলিশ— সর্বত্র ফোন করা হলেও একে অন্যের উপরে দায়িত্ব ঠেলেই দায় এড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ। দিনভর নাস্তানাবুদ হওয়ার পরে অবশেষে বিকেল চারটে নাগাদ পুরসভার গাড়ি এসে দেহটি নিয়ে যায়। তত ক্ষণে কেটে গিয়েছে প্রায় ১০ ঘণ্টা। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, ওই প্রৌঢ়ের দেহ বাড়িতে পড়ে থাকলেও পুলিশ বা পুর স্বাস্থ্য দফতর এলাকাটি ঘিরে দেয়নি। ওই পরিবারের লোকজনও বিনা বাধায় এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন।

মৃত প্রৌঢ়ের পরিজনেরা জানিয়েছেন, গত ২০ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। তার পরে বাড়িতেই কোয়রান্টিনে ছিলেন। শনিবার দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় ওই প্রৌঢ়কে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অক্সিজেন দেওয়ার পরে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয় তাঁর। তখন চিকিৎসকেরা ছেড়ে দেন রোগীকে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে বাড়ি ফিরে সকলের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন প্রৌঢ়। কিন্তু রবিবার সকালে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয় চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেটও দিয়ে দেন।

এর পরেই শুরু হয় ভোগান্তির পর্ব। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, দেহ সৎকারের জন্য প্রথমে তাঁরা ব্যাঁটরা থানায় যোগাযোগ করেন। থানা থেকে তাঁদের জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হেল্পলাইনে ফোন করতে বলা হয়। সেই নম্বরে ফোন করলে আরও একটা নম্বর দিয়ে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয় মৃতের পরিবারকে। আত্মীয়েরা পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানানো হয়, শববাহী গাড়ি নেই। গাড়ি এলেই দেহ নিয়ে যাওয়া হবে।

কিন্তু সেই অপেক্ষা যে দুপুর পেরিয়ে বিকেল পর্যন্ত গড়াবে, তা আঁচ করতে পারেননি প্রৌঢ়ের বাড়ির লোক। সৎকারের জন্য তাঁরা হন্যে হয়ে চার দিকে খোঁজ শুরু করেন। এতে আরও আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ ও পুরসভার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় করোনা সংক্রমিতের দেহ এত ক্ষণ বাড়িতে পড়ে ছিল। পুলিশ এসে এলাকাটি ঘিরে দেয়নি বা ওই প্রৌঢ়ের পরিজনেদের ঘোরাঘুরি করতেও বাধা দেয়নি। এক বাসিন্দা সমরেশ কুণ্ডু বলেন, ‘‘করোনায় মৃত এক জনের দেহ এত ক্ষণ পড়ে থাকায় আমরা আতঙ্কিত। বিশেষত, ওই পরিবারের লোকজন রাস্তায় যে ভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তাতে সংক্রমণ আরও ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে।’’

পুলিশ জানায়, বিকেল চারটের পরে পুরসভা গাড়ি পাঠালে কোভিড-বিধি মেনে ওই প্রৌঢ়ের দেহ শিবপুর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রৌঢ়ের ছেলে বলেন, ‘‘প্রশাসনের সর্বস্তরে খবর দেওয়া সত্ত্বেও আমার বাবার দেহ এত দীর্ঘ সময় বাড়িতে পড়ে ছিল। এই কি প্রশাসনিক সহযোগিতার নমুনা?’’

প্রশ্ন উঠেছে, শববাহী গাড়ি পাঠাতে পুরসভা এত দেরি করল কেন? পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের দু’টি শববাহী গাড়ির মধ্যে শনিবার একটি খারাপ হয়ে যায়। রবিবার সকাল থেকে একটি গাড়িই একের পর এক দেহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তুলে শিবপুর শ্মশানে নিয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই দেরি হয়েছে। কিছু করার ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Corona COVID-19 Coronavirus in Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE