Advertisement
E-Paper

মমতার পরামর্শেই অভিযোগ দায়ের স্বাস্থ্য কমিশনে

সুবিচারের দাবিতে তাঁরা এ দিন সকালেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তার পরে স্বাস্থ্য কমিশন ও রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে অভিযোগ করে ঐত্রীর পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৯
নিঃস্ব: স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানাতে গিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন ঐত্রীর মা। বৃহস্পতিবার পরিজনেদের সঙ্গে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিঃস্ব: স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানাতে গিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন ঐত্রীর মা। বৃহস্পতিবার পরিজনেদের সঙ্গে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজের বুকে পাথর রেখে আড়াই বছরের মেয়ের দেহ ময়না-তদন্তে পাঠাতে রাজি হয়েছেন মা। একরত্তি দেহটি যে কাটাছেঁড়া হবে, তা বিলক্ষণ জানেন তিনি। শুধু সত্যিটাকে সামনে আনতেই দাঁতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করছেন শম্পা দে। যাঁর মেয়ে ঐত্রী বুধবার আমরি হাসপাতালে মারা যায়।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমিশনের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথা বলতে গিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন শম্পাদেবী। সুবিচারের দাবিতে তাঁরা এ দিন সকালেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তার পরে স্বাস্থ্য কমিশন ও রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে অভিযোগ করে ঐত্রীর পরিবার।

পুলিশ জানায়, দিন কয়েক আগে ঐত্রী সর্দি-জ্বর নিয়ে আমরি হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক জয়তী সেনগুপ্তের অধীনে ভর্তি হয়েছিল। সে সুস্থও হয়ে উঠেছিল বলে দাবি পরিবারের। কিন্তু বুধবার সকালে আচমকাই মৃত্যু হয় মেয়েটির। পরিবারের অভিযোগ, ওই সকালে ঐত্রীকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই মারা যায় সে।

হাসপাতালের বক্তব্য ছিল, আচমকাই শিশুটির কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। প্রাণদায়ী ওষুধেও কাজ হয়নি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ বুঝতে ময়না-তদন্ত করা জরুরি। সে কারণেই ময়না-তদন্তের জন্য রাজি হয়েছেন তার মা। এ দিন স্বাস্থ্য কমিশনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে শম্পাদেবী বলেন, ‘‘আমি মা হয়ে মেয়ের ময়না-তদন্তের জন্য অনুমতি দিয়েছি। আমি জানি পোস্টমর্টেম কী। ওর (ঐত্রী) দেহ যে কাটাছেঁড়া করা হবে, সেটাও জানি। সত্যিটা সকলের সামনে আসুক।’’

সুবিচারের দাবি নিয়েই এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যান ঐত্রীর বাবা, মা এবং মামা। প্রায় এক ঘণ্টা পরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঐত্রীর বাবা জয়ন্ত দে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। উনি বললেন, বিষয়টি উনি জানেন। তিনি পদক্ষেপও করেছেন। আমরা দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী সুবিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।’’

এর পাশাপাশি জয়ন্তবাবু জানান, জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় (হাসপাতালের ইউনিট হেড) যে দুর্ব্যবহার করেছেন, তার বিচার চান তাঁরা। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই আমরা স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছি। আমার মেয়েকে তো ফিরে পাব না। কিন্তু যাঁদের জন্য মেয়েকে হারালাম, তাঁদের শাস্তি চাই।’’ এ কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। জয়ন্তীদেবীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁকে এসএমএস করা হলেও উত্তর মেলেনি।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারছিলেন না তিনি শম্পাদেবী। জয়ন্তবাবু শক্ত করে ধরে ছিলেন তাঁকে। কথা বলার মতো অবস্থাতেও ছিলেন না তিনি। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘আমরা কী হারিয়েছি, বোঝাতে পারব না।’’ তখন জয়ন্তবাবুর বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছেন শম্পাদেবী। সেখান থেকেই তাঁরা যান স্বাস্থ্য কমিশনে। কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার রায় জানিয়েছেন, অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হবে। পরে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। পরে জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘দিদি আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি যখন পাশে রয়েছেন, তখন সুবিচার আমরা পাবই।’’ বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে তাঁর।

Medical negligence AMRI Hospital Death চিকিৎসা গাফিলতি আমরি কলকাতা kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy