Advertisement
E-Paper

চোখের সামনে ছেলের মৃত্যু, মাকে ‘তলব’ থানার

দুর্ঘটনায় ছেলের সবে মৃত্যু হয়েছে। আর সেই অবস্থাতেই কাগজপত্র সই করাতে পুলিশ থানায় ডেকে পাঠাল সদ্য সন্তানহারা মা-কে। শুক্রবার পুলিশের এমনই অমানবিক মুখ দেখল কলকাতা। আর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ব্যাখ্যা দিলেন, নিশ্চয়ই কোনও প্রয়োজন পড়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩
পঞ্চসায়র থানায় সন্তানহারা মা তুলসী বিশ্বাস। শুক্রবার।

পঞ্চসায়র থানায় সন্তানহারা মা তুলসী বিশ্বাস। শুক্রবার।

দুর্ঘটনায় ছেলের সবে মৃত্যু হয়েছে। আর সেই অবস্থাতেই কাগজপত্র সই করাতে পুলিশ থানায় ডেকে পাঠাল সদ্য সন্তানহারা মা-কে। শুক্রবার পুলিশের এমনই অমানবিক মুখ দেখল কলকাতা। আর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ব্যাখ্যা দিলেন, নিশ্চয়ই কোনও প্রয়োজন পড়েছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ মায়ের সাইকেলের পিছনে বসে স্কুলে যাচ্ছিল ছ’বছরের আকাশ বিশ্বাস। নিউ গড়িয়া সংলগ্ন নয়াবাদে স্কুলের কাছে পৌঁছতেই রাস্তার উল্টো দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা মাটিবোঝাই একটি ছ’চাকার লরি সাইকেলে ধাক্কা মারে। মা ও ছেলে দু’জনেই রাস্তায় ছিটকে পড়লে আকাশকে পিষে দেয় ওই লরিটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশুটির। মা তুলসী বিশ্বাস অক্ষত রয়েছেন।

পুলিশ অবশ্য দাবি করে, দিন কয়েক আগে সাইকেল কিনেছিলেন তুলসীদেবী। এখনও সে ভাবে তা চালানো রপ্ত করতে পারেননি। ফলে এ দিন লরিটি দ্রুত গতিতে তাঁর সামনে এসে পড়লে ঘাবড়ে যান ওই মহিলা। তার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

মানুষের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে পুলিশের এই ব্যাখ্যাতেই। উত্তেজিত জনতা লরিটি ভাঙচুর করে। মারধর করা হয় চালককেও। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলেও শিশুটির মৃতদেহ সরাতে বাধা দেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এই নিয়ে বচসা গড়ায় ধাক্কাধাক্কিতে। শেষে পুলিশের বিশাল বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে লরিচালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

আকাশ বিশ্বাস। — শশাঙ্ক মণ্ডল

এলাকা কিছুটা শান্ত হলে পুলিশ আকাশের মৃতদেহ তুলে হাসপাতালে পাঠায়। তখনই স্থানীয় পঞ্চসায়র থানা ডেকে পাঠায় মা তুলসীদেবীকে। চোখের সামনে ছেলেকে মরতে দেখে শোকে তখন প্রায় উন্মাদ মা। এমন অবস্থায় তাঁকে থানায় ডাকায় বিস্ময়ে থ হয়ে যান প্রতিবেশীরা। পড়শি কয়েক জন মহিলাই তুলসীদেবীকে টোটোয় চাপিয়ে থানায় নিয়ে যান। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘পুলিশ ডেকে পাঠাল। বলল, মা-কে নিয়ে থানায় যেতে। কী সব কাগজপত্রে সই করতে হবে।’’

পঞ্চসায়র থানার এই ভূমিকায় হতবাক স্থানীয় মানুষ। এলাকার এক যুবক বলেন, ‘‘সকালে আর রাতে বাইপাসে পুলিশ রাস্তায় হাপিত্যেশ করে বসে থাকে ওই সব লরির জন্য। নিয়ম ভাঙলেও লরির চালক বা মালিকদের এক বারের জন্যও থানায় তলব করা হয় না। অথচ সদ্য সন্তানহারা মা-কে থানায় ডেকে পাঠানো হল।’’

স্থানীয় এক ছোট ব্যবসায়ীর মন্তব্য, ‘‘পুলিশের সামনেই নিয়ম ভেঙে লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে সাঁ সাঁ করে চলে লরি। তাদের তো পুলিশ কিছু বলে না!’’ এলাকার এক প্রৌঢ়ারও অভিযোগ, ‘‘এটা তো লরি চলাচলের রাস্তাই নয়। কিন্তু মাটিবোঝাই লরিগুলি সোনারপুর যেতে এই রাস্তা ব্যবহার করে। পুলিশ কিছু বলে না।’’

ইতিমধ্যে পাড়ার কয়েক জন যুবক পঞ্চসায়র থানায় গিয়ে পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। ততক্ষণে তুলসীদেবীকে নিয়ে টোটো পৌঁছে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায়, থানা থেকে ওই মহিলাদের নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে টোটো।

সংশ্লিষ্ট থানা অবশ্য সন্তানহারা মাকে থানায় তলবের কথা মানতে চায়নি। তাদের পাল্টা দাবি, আকাশের মা নিজে থেকেই থানায় এসেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কেউ কেউ অবশ্য জানাচ্ছেন, সাধারণত পুলিশই মৃতের বাড়ি গিয়ে কাগজপত্র সই করিয়ে আনে এবং প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু এ দিন দুর্ঘটনার পরে এলাকার পরিস্থিতি যেমন অগ্নিগর্ভ ছিল, তাতে শিশুটির বাড়িতে যাওয়ার সাহস পায়নি পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকারের বক্তব্য, ‘‘নিশ্চয়ই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যার জন্য পুলিশকে এমন কাজ করতে হয়েছে। না হলে তো এমন করার দরকার পড়বে না।’’ স্থানীয় থানার সঙ্গে কথা বলে তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করবেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রতিমবাবু।

Son Mother Police station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy