Advertisement
E-Paper

চোখের সামনে মৃত্যু, সবার উপরে সেলফি!

চোখের সামনে এ রকম কিছু যে ঘটতে পারে, মিনিট দশেক আগেও বোঝা যায়নি। রবীন্দ্র সরণি আর বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে গণেশ টকিজের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। অদূরেই বিরাট এক চাঙড়ের নীচ থেকে কিছু ক্ষণ আগেও আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল রক্তে মাখামাখি একটি মুখ থেকে।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ১৮:৫১
—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

চোখের সামনে এ রকম কিছু যে ঘটতে পারে, মিনিট দশেক আগেও বোঝা যায়নি।

রবীন্দ্র সরণি আর বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে গণেশ টকিজের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। অদূরেই বিরাট এক চাঙড়ের নীচ থেকে কিছু ক্ষণ আগেও আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল রক্তে মাখামাখি একটি মুখ থেকে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই আর্তনাদ ক্ষীণ হয়ে গেল। কয়েক জন দৌড়ে গেলেন জল নিয়ে। মুখে জলও দিলেন। অসহায় যে চেহারাগুলো চিৎকার করে ওই ব্যক্তিকে বার করে আনার কাতর আহ্বান জানাচ্ছিল উদ্ধারকারী দলের কাছে, সেই চেহারাগুলো আশ্বস্ত হয়ে দেখল, একটি বিশাল ক্রেনে লোহার তার দিয়ে বাঁধা হয়েছে ওই লোকটির দেহের উপরে চেপে বসা কংক্রিটের চাঙড়টিকে। চাঙড়টা উঠছে একটু একটু করে! চিৎকার উঠছে চারদিকে, আরও একটু...আরও একটু...

আরও পড়ুন: দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন যাঁরা

হঠাৎই একটা জোরালো আওয়াজ! দেখা গেল, লোহার দড়ি ছিঁড়ে সেই চাঙড় আবার আছড়ে পড়ল নীচে, সেই অসহায় মানুষটার শরীরের উপর! না, আর কোনও ক্ষীণ শব্দও নেই! একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেল দেহটা! নির্বাক ভিড় হতাশায় ভেঙে পড়ল সেখানে।

ভিড়ের এই হতাশ মুখের কারণও আছে বইকি! একটু আগে ওই গণেশ টকিজের কাছেই আর একটি ক্রেন টেনে তুলেছিল ভেঙে পড়া আর একটি চাঙড়। ভিড়ের ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখা গেল, তার নীচে তখনও আটকে অন্তত তিনটি ট্যাক্সি— একটি সাদা আর দু’টি হলুদ রঙের। সেই ট্যাক্সিগুলোয় কেউ আটকে রয়েছেন কি না ওই দূরত্ব থেকে তা বোঝারও উপায় নেই। কারণ, কংক্রিটের চাঙড় ট্যাক্সির ছাদ ফুঁড়ে ঢুকে গিয়েছে ভিতরে। আর একটি ব্রেকডাউন ভ্যান থেকে যন্ত্রপাতি বার করে একটি ট্রাকের কিছুটা কেটে একটি দেহ বার করা হল। চতুর্দিকে পুলিশ, ন্যাশনাল ডিসাস্টার ফোর্স, সিআরপিএফ এবং সেনাবাহিনীর জওয়ানেরা। চোখে পড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে স্কুলের বইখাতা, ব্যাগ। তবে সেগুলির মালিকানা যে কার, সেটাই এখনও বোঝা যাচ্ছে না! কারণ, অনেক ক্ষণ থেকেই শোনা গিয়েছে, একটি পুলকার-ও আটকে রয়েছে ধ্বংসস্তূপে।

এরই মধ্যে এক যুবক বারে বারে উদভ্রান্তের মতো ছুটে যাচ্ছেন উদ্ধারকারী দলের কাছে। হাতজোড় করে বলছেন, ‘‘ওই যে, ওইখানে আটকে রয়েছে আমার বন্ধু। আপনারা প্লিজ এই চাঙড়টা তুলুন। এর তলাতেই রয়েছে ও।’’ কিন্তু, উদ্ধারকারীরা অসহায়ের মতো জানাচ্ছেন, জায়গাটা একেবারে মাঝখানে। চারদিকের ধ্বংসস্তূপ না সরালে তাঁর বন্ধুকে কিছুতেই ওখান থেকে উদ্ধার করা যাবে না।

সন্ধ্যা নামছে, তারই মধ্যে ৫০-৬০ জন উদ্ধারকারী উঠে গিয়েছেন কংক্রিটের ভেঙে পড়া চাঙড়ের উপরে। ইতিউতি খোঁজ করছেন, কোথাও কোনও দেহ আটকে রয়েছে কি না। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সিআরপিএফ আধিকারিক চিন্ময় পাল জানালেন, উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা আহতদের হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আজ সারা রাত উদ্ধারকাজ চলবে।

চূড়ান্ত প্রশাসনিক তৎপরতা, উদ্ধারকাজে হাত লাগাতে দলে দলে সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসা, নিখোঁজ স্বজন-বন্ধুদের সন্ধানে মানুষজনের ইতস্তত ছুটে বেড়ানোর মধ্যেই জীবনের আরও একটি দিক চোখে পড়ে। চতুর্দিকে মোবাইলের ফ্ল্যাশের ঝলকানি— সেলফি তোলার ব্যস্ততা! কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে মোবাইলের ধারাবিবরণীতে ব্যস্ত, ‘আরে, আমি তো এখানে! যেখানে উড়ালপুলটা ভেঙে পড়েছে! চার দিকের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিস না? দাঁড়া, একটু পরেই ফেসবুকে আপলোড করছি।’

জীবন বড়ই ভঙ্গুর! বিবেকানন্দ উড়ালপুলের মতোই!

flyover vivekananda flyover break down death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy