Advertisement
E-Paper

বাইক থেকে পড়তেই বেপরোয়া বাসের নীচে

মৃত্যু হয় মোটরবাইক আরোহী, মুরারিপুকুরের বাসিন্দা সোনালি দে-র। চালক সমীর দাস গুরুতর ভাবে জখম। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিল না। আহত অবস্থায় বেশ কিছু ক্ষণ রাস্তায় পড়েছিলেন সোনালি ও সমীর

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০২:৩৬
দুর্ঘটনাস্থল: পড়ে রয়েছে মোটরবাইকের ভাঙা অংশ। বুধবার সল্টলেকে। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনাস্থল: পড়ে রয়েছে মোটরবাইকের ভাঙা অংশ। বুধবার সল্টলেকে। —নিজস্ব চিত্র।

একটি বাস স্টপের দু’দিকে দু’টি স্কুল। প্রাথমিক বিভাগ চালু হয় সকালে। সাতটার সময় তাই স্বাভাবিক ভাবেই ব্যস্ততা তুঙ্গে সল্টলেকের বিডি ব্লকের স্টপেজে। খুদে পড়ুয়াদের প্রাথমিক বিভাগে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য ভিড় করেছেন অভিভাবকেরা। হঠাৎ দ্রুত গতিতে আসা একটি বাস ধাক্কা মারে মোটরবাইকে। মৃত্যু হয় মোটরবাইক আরোহী, মুরারিপুকুরের বাসিন্দা সোনালি দে-র। চালক সমীর দাস গুরুতর ভাবে জখম। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিল না। আহত অবস্থায় বেশ কিছু ক্ষণ রাস্তায় পড়েছিলেন সোনালি ও সমীর। এক অটোচালক দেখতে পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁদের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চার নম্বর ট্যাঙ্কের দিক থেকে দুটি বেসরকারি রুটের বাস খুব দ্রুত গতিতে রেষারেষি করতে করতে আসছিল। সে সময়ে ছেলে শিবমকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে পারিবারিক বন্ধুর মোটরবাইকের পিছনে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন সোনালি দে। বাইকের চালক সমীর দাস বিডি বাসস্টপ থেকে গাড়িটি উল্টোডাঙার দিকে ঘোরাতেই একটি বাস এসে সজোরে ধাক্কা মারে। বাইক থেকে ডান দিকে ছিটকে রাস্তার মাঝে পড়ে যান সোনালি। তার পরেও বাসটি থামেনি, সোনালিকে চাপা দিয়ে চলে যায় সেটি। সমীর রাস্তার বাঁ দিকে ছিটকে পড়েন। মোটরবাইকটি তাঁর পায়ের উপরে গিয়ে পড়ে।

বুধবার সকালের এই ঘটনায় স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছতে বেশ দেরি হয়। মিনিট দশেক রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকেন দুই আহত। ওই অবস্থায় পথচারীদের কেউ এগিয়ে আসেননি বলেও অভিযোগ উঠছে। সে সময়ে অটোরিক্সা নিয়ে ওই পথে যাচ্ছিলেন আশিস মণ্ডল। তিনিই আহতদের তুলে নিয়ে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে চলে যান।

হাসপাতালে কিছু ক্ষণ পরে সোনালিকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তত ক্ষণে মুরারিপুকুর থেকে এসে পৌঁছেছেন সোনালি ও সমীরের পরিবারের লোকজন। পরে সমীরকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবার সূত্রের খবর, সোনালির স্বামী শঙ্কর দে প্রতি দিন মোটরবাইকে করে ছেলেকে বিডি স্কুলে পৌঁছে দেন। শরীর খারাপ থাকায় এ দিন তিনি যেতে পারেননি। তাই তাঁর মোটরবাইকে নিয়ে তাঁরই বন্ধু সমীর স্কুলে যান। বাইকে সমীরের মেয়েও ছিল। ছেলেকে নিয়ে শঙ্করের স্ত্রী সোনালিও ছিলেন ওই বাইকেই। প্রথমে সোনালির ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দেন সমীর। তার পরে নিজের মেয়েকে স্কুলে পৌঁছন। তার পরেই ঘটে দুর্ঘটনা। প্রতক্ষ্যদর্শীদের একাংশের দাবি, চালক কিংবা আরোহীর মাথায় হেলমেট ছিল না। তবে অনেকেই বলছেন, ‘‘হেলমেট থাকলেও কিছু হতো না, কারণ বাসটি মহিলার পেটের উপর দিয়ে চলে যায়।’’

ঘটনার পরেই অভিভাবকেরা রাস্তা অবরোধ শুরু করে দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিছু ক্ষণ পরে পুলিশের আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেন অভিভাবকেরা। সে সময়ে ওই রুটের আরও একটি বাস ঘটনাস্থলের কাছে এলে সেই বাস আটকে ফের অবরোধ শুরু করে দেন অভিভাবকেরা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে অভিভাবকদের একটি অংশ, এলাকার ট্র্যাফিক নিয়ে কয়েকটি দাবিদাওয়া জমা দেন বিধাননগর উত্তর থানায়। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমি গিয়েছিলাম। পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য সকাল থেকে ট্র্যাফিক কর্মী মোতায়েন করার ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ অনেক ব্যবস্থা নিলেও চালকদের একাংশ কোনও নিয়ম মানছেন না। কেন এ দিন পুলিশেরক আস্তে দেরি হল এবং আহতরা রাস্তায় পড়ে রইলেন, তাই নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বিধাননগর পুলিশ জানিয়েছে, রেষারেষি করা দু’টি বাস এবং চালকদের খোঁজে চলছে তল্লাশি। অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটনার মামলা রুজু হয়েছে ঘাতক চালকের বিরুদ্ধে। দুর্ঘটনাস্থলে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে ট্র্যাফিক সিগন্যাল পোস্ট বসানোরও চিন্তাভাবনা করছে বিধাননগর পুলিশ।

Accident Bus Death Salt lake
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy