Advertisement
E-Paper

রিপোর্ট আসতে দেরি, বিভ্রাট তাই চিকিৎসায়

রিপোর্ট পেতে ভোগান্তির কথা বলছেন অনেকেই। এ দিকে, পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে চিকিৎসকেরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করায় জোর দিচ্ছেন।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৬
অপেক্ষা: হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিষেধক নেওয়ার লম্বা লাইনেও দূরত্ব-বিধি মানছেন না কেউ। মঙ্গলবার

অপেক্ষা: হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিষেধক নেওয়ার লম্বা লাইনেও দূরত্ব-বিধি মানছেন না কেউ। মঙ্গলবার নিজস্ব চিত্র

শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বৃদ্ধের। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে গেলেও তাঁকে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না কোথাও। সর্বত্রই দাবি করা হচ্ছে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট। কিন্তু বৃদ্ধের পরিজনেরা তা দেখাতে পারছেন না!

কেন? পরিজনদের দাবি, শনিবার সকালে ওই বৃদ্ধের কোভিড পরীক্ষা করানো হয়েছিল। কিন্তু রবিবার বিকেলেও সেই রিপোর্ট মেলেনি। তাই শ্বাসকষ্ট নিয়েই একের পর এক হাসপাতাল ঘুরে বেড়িয়ে শেষে এক জায়গায় মিলল শয্যা। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা কোভিড রিপোর্ট পেয়েছেন সোমবার। সেই রিপোর্ট পেতেও ভাল রকমের ভোগান্তির কথা বলছেন অনেকেই। তাঁদের কথায়, ‘‘পরীক্ষার পরে তিন-চার দিন কেটে যাচ্ছে, তার পরে আসছে রিপোর্ট।’’ এ দিকে, পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে চিকিৎসকেরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করায় জোর দিচ্ছেন।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ্য জুড়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। প্রতিদিনই প্রায় ৩০-৪০ হাজার পরীক্ষা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘আচমকা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সর্বত্রই অত্যধিক চাপ বেড়েছে। ফলে বেশ কিছু জায়গায় রিপোর্ট পেতে সমস্যা হচ্ছে। পরীক্ষার জায়গা বাড়ানো যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’

শহরের বহু জায়গাতেই এখন কোভিড পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে ওই সমস্ত জায়গায় লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও আসল পরীক্ষাটি সেখানে হয় না। কোনও সংস্থা নমুনা পাঠাচ্ছে আমদাবাদ বা হায়দরাবাদের ল্যাবরেটরিতে। কেউ আবার তাদের সংগৃহীত নমুনা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আনছে। কারণ, ‘এনএবিএল’ অনুমোদন ছাড়া কোনও ল্যাবরেটরি কোভিড পরীক্ষা করতে পারে না। আবার লালারসের নমুনা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় না রাখলে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই উড়ানে যে সব নমুনা ভিন্ রাজ্যে যাচ্ছে, সেখানে ওই তাপমাত্রা বজায় রাখা কতটা সম্ভব হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যায় বলেই জানাচ্ছেন এক প্যাথোলজিস্ট।

শহরের একটি বেসরকারি প্যাথোলজি কেন্দ্রের কর্তা আবার জানাচ্ছেন, আরটিপিসিআর পরীক্ষার দু’টি পদ্ধতি রয়েছে। ‘প্রসেসিং’ ও ‘অ্যানালিসিস’ বা বিশ্লেষণ। প্রতিটি ল্যাবের আরটিপিসিআর পরীক্ষার যন্ত্র কিন্তু স্বয়ংক্রিয় নয়। ফলে তাতে প্রসেসিং হয় মেকানিক্যাল বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আর বিশ্লেষণ হয় স্বয়ংক্রিয় ভাবে। এর ফলেই অনেকটা সময় লেগে যায়। কিন্তু যে সব আরটিপিসিআর পরীক্ষার যন্ত্র পুরোটাই স্বয়ংক্রিয়, তাতে দিনে অন্তত চারটি শিফটের প্রতিটিতে ১০০-২০০টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব।

কিন্তু পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ল্যাবরেটরির কর্মীদের উপরে চাপ প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন মেডিকা সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার অমিত রায়। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার প্রথম পর্বে যত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করতে হত, সংখ্যাটা তার থেকে এখন অনেকটাই বেশি। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সমস্ত প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি মেনে কাজ করতে গিয়ে ২৪-৪৮ ঘণ্টা সময় লাগছে। তবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব চাপ কাটিয়ে তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র থাকায় প্রতি চার শিফটে তাঁরা ১৫০টি নমুনা পরীক্ষা করছেন বলে জানালেন পিয়ারলেস হাসপাতালের কর্তা সুদীপ্ত মিত্র। নিজেদের পাশাপাশি অন্যদের নমুনাও সেখানে পরীক্ষা হচ্ছে। তিনি বলছেন, ‘‘রিপোর্ট পেতে দেরি হলে সমস্যা তো বটেই। শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীর ঠিক কী কারণে সেটা হচ্ছে, তা বোঝা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে তাঁকে কোভিড ওয়ার্ডে না নন-কোভিড ওয়ার্ডে রাখা হবে, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।’’

পূর্ব ভারতে বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি তথা আমরি হাসপাতালের কর্তা রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘যাদের নিজস্ব পরীক্ষা পরিকাঠামো নেই, তাদের তো দেরি হচ্ছেই। আবার যাদের ২০০ জনের পরীক্ষার পরিকাঠামো রয়েছে, তাদের ৫০০-৬০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে সময় বেশি লাগছে।’’ তবে সরকারি
হাসপাতালে ততটা না হলেও কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন এক হাসপাতালের কর্তা। তিনি বলছেন, ‘‘এখন উড়ানে যেতে হলেও পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। তাই উপসর্গযুক্ত ও উপসর্গহীন-সহ সকলেই পরীক্ষা করাচ্ছেন।’’

COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy