Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Corona Vaccine

দ্বিতীয় ডোজে দেরি হলে ক্ষতির শঙ্কায় প্রবীণেরা

‘‘প্রথম ডোজ়ের পরে দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে না নিলে বড় বিপদ ঘটবে না তো?’’

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২১ ০৬:৩৬
Share: Save:

পরিজনেরা থাকেন ভিন্ রাজ্যে। শহরে একা থাকেন অশীতিপর বৃদ্ধ। বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় নিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ়? নেওয়ার দিন এসে গেলেও, কোথায় কবে মিলবে তার কোনও খবরই পাচ্ছেন না তিনি। শুধু ওই বৃদ্ধই নন, দ্বিতীয় ডোজ় পাওয়া নিয়ে সংশয়ে দিন কাটাচ্ছেন আরও অনেকেই।

প্রত্যেকেরই প্রশ্ন, ‘‘প্রথম ডোজ়ের পরে দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে না নিলে বড় বিপদ ঘটবে না তো?’’ এক দিকে প্রতিষেধক কবে মিলবে সেই প্রশ্ন, তার সঙ্গে দেরি হলে বিপদের আশঙ্কা— দুইয়ে মিলে বয়স্কদের দুশ্চিন্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে। শুধু তাঁরা নন। পরিবারের বয়স্কদের দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন পরিজনেরাও। সকলেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিচ্ছেন। কিন্তু বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রায় সর্বত্রই শুনতে হচ্ছে, ‘নো ভ্যাকসিন’।

প্রতিষেধকের অপ্রতুলতার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এখন দ্বিতীয় ডোজ়ের উপরে বেশি জোর দিচ্ছে। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘দ্বিতীয় ডোজ়ের দেরি বাঞ্ছনীয় ছিল না। তবে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে অপেক্ষা করতে হবে। আশা করা যাচ্ছে, প্রতিষেধকের জোগান কম হওয়ার জন্য যে সমস্যা হচ্ছে, তা ঠিক হয়ে যাবে।’’ বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিষেধক না মেলায় অসংখ্য বয়স্ক গ্রাহক শেষ রাত থেকে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছেন। তাতেও যে সকলের ভাগ্যে শিঁকে ছিড়ছে, তা নয়। কবে প্রতিষেধক পাবেন, সেই টোকেন নিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে অনেককেই। আর দ্বিতীয় ডোজ় পেতে যত দেরি হচ্ছে, তত দুশ্চিন্তা বাড়ছে গ্রহীতাদের।

এই দুশ্চিন্তা কতটা যুক্তিসঙ্গত?

ক্লিনিক্যাল ফার্মোকোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠী জানাচ্ছেন, প্রথম ডোজ় নেওয়ার পরে কোভাক্সিনের ক্ষেত্রে ৪-৬ সপ্তাহ এবং কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর্ন্তজাতিক গবেষণায় সেটি আরও বেশি দিন বলা হয়েছে। কিন্তু দু’টি প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেই সময়সীমার শেষ দিনের কয়েক দিন পরেও যদি দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া হয়, তা হলে প্রভূত ক্ষতি হবে তেমনটা নয়। আবার প্রথম ডোজ়ের সুফল চলে যাবে, তা-ও নয়। শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘তবে দেখতে হবে, প্রথম ডোজ়ের কত দিন পরে দ্বিতীয়টি নেওয়া হচ্ছে। কারণ, যে দিন দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তার থেকে ৫-৭ দিন বা আরও কিছু দিন পরে তা নিলেও প্রথম ডোজ়ের সুফল মিলবে। কিন্তু সেটা যদি ১০ সপ্তাহ পরে হয়, তা হলে কার্যকারিতা এক থাকবে কি না, তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, প্রথম ডোজ় নেওয়ার ১৫ দিন পর থেকে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেটি কত দিন থাকছে, তা পরীক্ষা করেই কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার সপ্তাহগুলি স্থির করা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কিংবা তা শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ় নিলে সেটি বুস্টার হিসেবে কাজ করবে।

আবার ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘প্রতিষেধক নির্মাতারা যে সময় বলেছেন, সেটাই আমাদের মানতে হবে। তবে অক্সফোর্ড জানিয়েছে, কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ়ের পরে ১২ সপ্তাহ অর্থাৎ তিন মাস পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে এতটা সময় পরে নিলে কী হবে, তা আইসিএমআর স্পষ্ট না বললেও যখনই পাওয়া যাবে, তখন নেওয়াই ঠিক মনে হয়।’’

দ্বিতীয় ডোজ়ের সময় হয়ে গেলেও, তা না পেয়ে বয়স্কদের চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক বলেই অভিমত রাজ্যে প্রতিষেধক গবেষণার ফেসিলেটর স্নেহেন্দু কোনারের। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই তাঁদের দুশ্চিন্তা তো হবেই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়কেই বয়স্কদের দ্বিতীয় ডোজ়ের উপরে জোর দিতে হবে। কারণ সেটিই বুস্টার ডোজ় হিসেবে কাজ করে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE