Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ডেঙ্গি-যুদ্ধে কলকাতার ধারে কাছে নেই বিধাননগর

এক পুরসভা এলাকায় হলুদ জ্যাকেট পরা এক-একটা দল ঘুরে বেড়াচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়। কারও হাতে টর্চ। কারও হাতে খাতা। কারও পিঠে ঝোলানো কীটনাশকের পাত্র, হাতে ধরা পাইপ।

এমনই হাল করুণাময়ীর এক আবাসনে। ছবি:শৌভিক দে।

এমনই হাল করুণাময়ীর এক আবাসনে। ছবি:শৌভিক দে।

কাজল গুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪১
Share: Save:

এক পুরসভা এলাকায় হলুদ জ্যাকেট পরা এক-একটা দল ঘুরে বেড়াচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়। কারও হাতে টর্চ। কারও হাতে খাতা। কারও পিঠে ঝোলানো কীটনাশকের পাত্র, হাতে ধরা পাইপ।

কলিং বেল টিপে সোজা উপরে উঠে যাচ্ছেন ওঁরা। বিভিন্ন ঘর, ছাদ ঘুরে সরেজমিন দেখছেন কোথাও জমা জল রয়েছে কি না। জমা জল উল্টে ফেলে দিয়ে, আনাচ-কানাচে কীটনাশক ছড়িয়ে চলে যাচ্ছেন ওঁরা। যাওয়ার সময় গৃহকর্তাকে দিয়ে কাগজে সই করে নিয়ে যাচ্ছে।

লাগোয়া পুরসভায় অবশ্য এ সবের বালাই নেই। বর্ষার শুরুতে এ রকম দল চোখে পড়েছিল কয়েকটা। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে কীটনাশক ছড়াত তারা। নৌকা চেপে খালের জলে স্প্রে করত। কিন্তু ওই পুর-এলাকায় ডেঙ্গি যত বেশি করে থাবা বসাচ্ছে, ততই যেন মিলিয়ে যাচ্ছে মশা-মারা বাহিনী।

প্রথমটি কলকাতা পুরসভা। পরেরটি বিধাননগর। মশা মারার নিজস্ব বাহিনী তো রয়েছেই, তা ছাড়াও কলকাতা যখন ১০০ দিনের কাজের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে, বিধাননগর তখন পরিকাঠামোর ঘাটতিতে ভুগছে। ডেঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিরষ্কৃত হওয়ার পরে তেড়েফুঁড়ে ওঠা নয়, উল্টে একেবারে যেন গুটিয়ে গিয়েছে বিধাননগর পুরসভা। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যে তৎপরতা প্রয়োজন, তা দেখা যাচ্ছে না বলেই অভিযোগ। সেই সুযোগেই ওই বিধানসভা এলাকায় ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ৭। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ৫০ জনেরও বেশি। এ ছাড়া, জ্বরের শিকার প্রায় আড়াই হাজার পুর-নাগরিক।

বিধাননগর পুর-নিগম কতটা সক্রিয় হয়েছে, তার জন্য একাধিক দরকার নেই, একটি ওয়ার্ডের ছবিতেই তা স্পষ্ট। যেমন ৩২ নম্বর ওয়ার্ড। কোথাও স্কুলের উল্টো দিকে ফাঁকা সরকারি জমি ঝোপ-জঙ্গলে ভরা। সেখানে কয়েকটি ঝুপড়িও রয়েছে। কোথাও আবার ফাঁকা সরকারি জমি কার্যত ভাগাড়ের চেহারা নিয়েছে— ফেলে দেওয়া কমোড, ডাবের খোলা, থার্মোকলের পাত্র থেকে জল জমার বিভিন্ন উপকরণে ভরা। ওয়ার্ডের একধার দিয়ে বয়ে চলা ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের পাড়ের ছবিটাও তথৈবচ। রীতিমত মশার আঁতুড়ঘর।

করুণাময়ী আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, মশার তেল স্প্রে করা হয়েছে কচ্চিৎ-কদাচিৎ। ঝোপজঙ্গল সাফ হয়েছে এক বারই। কিন্তু ওইটুকুই। বাসিন্দাদের দাবি, অগত্যা নিজেদের উদ্যোগেই ব্লিচিং ছড়ানো সহ এলাকা সাফ করার কাজ করছেন তাঁরা।

ওই ওয়ার্ডেই ইই ব্লক। সেখানে সম্প্রতি ব্লক অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এলাকা সাফসুতরো করার কাজ হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের কেন সেই কাজ করতে হবে? ব্লক অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা বিশ্বজিৎ মাইতি বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতেই আমরা এই কর্মসূচি নিয়েছিলাম।’’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘‘আমাদের ব্লকে মশা নিয়ন্ত্রণে পুরসভার তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।’’ ডিএল ব্লক কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুর-নিগম তৈরি হওয়ার সময়েই বলেছিলাম পরিষেবার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। ঘটনাচক্রে এখন তা-ই হচ্ছে।’’

অন্য দিকে, ডি এল ব্লকের খালপাড় লাগোয়া বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘খালপাড় কার এক্তিয়ারে জানি না। পুরসভায় জানিয়েও লাভ হয়নি। সন্ধ্যা থেকে জানলা খোলা যায় না— এমনই অবস্থা।’’

তবে যত্রতত্র ফাঁকা জমিতে, রাস্তার ধারে আবর্জনা জড়ো করছেন বাসিন্দাদের একাংশ— এই অভিযোগও দীর্ঘদিনের। আরও অভিযোগ, সচেতনতার প্রচার চালিয়েও লাভ হয়নি। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (আলো, উদ্যান) সুধীর সাহা বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে। তার তথ্যপ্রমাণও রয়েছে।’’

মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘পতঙ্গ বিশারদের পরামর্শ মেনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মশার তেল ছড়ানোর ক্ষেত্রে। সাত দিন অন্তর এই কাজ করা হচ্ছে। ১৫ দিন অন্তর ফগিং করা হচ্ছে। তবুও বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’

মেয়র সব্যসাচী দত্তও বলেন, ‘‘এটা হওয়ার কথা নয়। কারণ প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে দল গড়ে কাজ করা হচ্ছে। নজরদারিও রাখা হচ্ছে। তবুও এই অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নেব। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata bidhannagar Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE