নির্মীয়মাণ বহুতলই ‘কাঁপাচ্ছে’ দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার বাসিন্দাদের!
এই মরসুমে দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় ডেঙ্গি ও অন্যান্য জ্বরের প্রকোপে কাবু হয়েছেন শ’খানেক বাসিন্দা। বেশ কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছে। শুক্রবার লেকটাউন থেকে মধুগড়, একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা গেল নির্মীয়মাণ বহুতল ও তার
আশপাশে জমা জল ডেকে আনছে নানা রোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন এবং অটো নিয়ে ডেঙ্গির সচেতনতা প্রসারে যতটা তৎপরতা, নির্মীয়মাণ বাড়ির চারপাশের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে পুরকর্মীদের তত তৎপরতা চোখে পড়ে না।
বছর খানেক ধরে রাজাডাঙা দু’নম্বর বাইলেনে একটি বহুতল তৈরি হচ্ছে। নির্মাণস্থলের একাধিক জায়গায় জল জমে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারবার পুরসভাকে এলাকাটি পরিষ্কার করার জন্য আবেদন জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করেনি। এমনকী যাঁরা ওই বহুতল তৈরির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদেরকেও কোনও নির্দেশ দেয়নি পুরসভা। শুক্রবার স্থানীয় বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল বলেন, ‘‘পাড়ার প্রতি ঘরেই কেউ না কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। বিভিন্ন নির্মাণস্থলে অব্যবহৃত জল জমে থাকছে। এমন জায়গাতেই ডেঙ্গির আশঙ্কা বলে প্রচার করছে পুরসভা। অথচ পরিষ্কার করছে না।’’
যশোর রোডের উপরে শ্যামনগরে বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের কাজ বন্ধ রয়েছে মাস খানেক। দুষ্কৃতীদের আড্ডা রুখতে ওই নির্মীয়মাণ বহুতলের চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, সেখানেও বৃষ্টির জল জমে থাকছে। আশঙ্কা, ওই জলে মশা জন্মাতে পারে। ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে পারে। এমনিতেই একাধিক বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে কিছু বলতে গেলেই তো এলাকার ‘দাদাদের’ হুমকি শুনতে হচ্ছে। পুরসভার কাউন্সিলর নির্মাণকাজ চলাকালীন একাধিক বার এসেছেন। কিন্তু ডেঙ্গির মরসুমে যখন ভিতরে জল জমে রয়েছে, তখন পুরসভায় বারবার জানানো হলেও কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।’’
তবে ব্যতিক্রম লেকটাউনের তেঁতুলতলা। বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়ে ওই এলাকার নির্মীয়মাণ বহুতলের চারপাশ পরিষ্কারে তৎপর হয়েছেন নির্মাণ সংস্থার কর্মীরা। এ দিন ওই সংস্থার কর্মী রাজা রায় জানান, নির্মীয়মাণ অংশ ও তার আশপাশের এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়েছে। জল জমতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্মাণে ব্যবহারের জন্য যে যেখানে জল সংরক্ষণ করা হয়, সেখানে মাছ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে মশা জন্মানোর আশঙ্কা কমে।
নির্মীয়মাণ অংশের পাশাপাশি জল-নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও অভিযোগ আছে দক্ষিণ দমদমের বাসিন্দাদের। মধুগড়ের বাসিন্দা সুভাষ নস্করের অভিযোগ, পুজোর আগে ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি ও অন্য জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। তাঁর কথায়, ‘‘জায়গাটা নিচু, তাই অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। তার উপরে নর্দমাগুলি ঠিকমতো কাজ করে না। পুরসভা শুধু অটোতে প্রচার চালাতেই ব্যস্ত। এ দিকে কোনও নজর নেই।’’ ছোট জলাশয়গুলি পরিষ্কারেও নজরদারি নেই পুরসভার, অভিযোগ ১ নম্বর পল্লিশ্রী কলোনির বাসিন্দাদের। ওই এলাকার বাসিন্দা পার্থসারথি নন্দী বলেন, ‘‘ছোট জলাশয়গুলি পরিষ্কার করা হয় না। তাই সেই বদ্ধ জলে মশা জন্মাচ্ছে। এলাকায় ডেঙ্গির আক্রমণে ভয়ঙ্কর অবস্থা। আমার চোদ্দো বছরের ছেলে দিন কয়েক আগে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য পর্যাপ্ত শয্যা নেই।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডেঙ্গি পরাস্ত করেছে পুরসভাকে। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান অবশ্য বলেন, ‘‘একাধিক জ্বরে আক্রান্তের রক্ত পরীক্ষায় এনএসওয়ান পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে ডেঙ্গি রুখতে তৎপর পুরসভা। নির্মীয়মাণ অংশগুলিতে জল জমে। কিন্তু সেগুলি পরিদর্শনের দায়িত্ব প্রোমোটারদের। পুরসভা তাঁদের বারবার সচেতন করার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করেননি। এ বার হয়তো পুরসভাকে পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওই সব এলাকায় ঢুকতে হবে।’’