Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গির মিছিল পটুয়া পাড়ায়

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দম্পতির রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা না পড়লেও তাঁদের প্লেটলেট অনেকটাই কমে গিয়েছে। সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা, বমির ভাব। 

শিরোধার্য: চার পাশে আবর্জনা। তাই শিল্পীর গড়া মূর্তির মাথায় মশা মারার ধূপ। শুক্রবার কুমোরটুলিতে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

শিরোধার্য: চার পাশে আবর্জনা। তাই শিল্পীর গড়া মূর্তির মাথায় মশা মারার ধূপ। শুক্রবার কুমোরটুলিতে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০৪
Share: Save:

চিত্র এক: উত্তর কলকাতার ৪৩ নম্বর বনমালী সরকার স্ট্রিট। ঘুপচি ঘরের একপাশে এক সপ্তাহ ধরে শয্যাশায়ী লক্ষ্মী পাল। শিল্পী হারু পালের স্ত্রী। গত আট দিন ধরে জ্বর। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। সারা শরীরে ব্যথা। বিছানা থেকে ওঠারই ক্ষমতা নেই লক্ষ্মীদেবীর।
চিত্র দুই: ৩এ, নিতাই পাল লেন। তিনতলা বাড়ির দোতলায় স্ত্রী, তিন বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে থাকেন পেশায় ব্যবসায়ী উজ্জ্বল সাহা। গত এক সপ্তাহ ধরে উজ্জ্বলবাবু ও তাঁর স্ত্রী রুম্পাদেবীর জ্বর। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দম্পতির রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা না পড়লেও তাঁদের প্লেটলেট অনেকটাই কমে গিয়েছে। সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা, বমির ভাব।
চিত্র তিন: ২২ নম্বর কুমোরটুলি স্ট্রিট। তিনতলায় স্ত্রী ও ছেলে নিয়ে থাকেন ব্যবসায়ী সুদীপ্ত সাহা। জগদ্ধাত্রী পুজোর পরের দিন থেকে সুদীপ্তবাবুর জ্বর। দিন চারেক আগে তাঁর জ্বর কমলেও স্ত্রী জয়শ্রী ও পুত্র অগ্নিভর জ্বর শুরু হয়েছে। তিন জনেরই চলাফেরার ক্ষমতা নেই। চিকিৎসকেরা তাঁদের বিশ্রামে
থাকতে বলেছেন।উপরের ছবিগুলি উদাহরণ মাত্র। কলকাতা পুরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের বনমালী সরকার স্ট্রিট, নিতাই পাল লেন বা কুমোরটুলি স্ট্রিটে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। আতঙ্কে এলাকাবাসী। ৪০ নম্বর বনমালী সরকার স্ট্রিটের বাসিন্দা ছায়া পাল (৫০) গত ২৬ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গিতে মারা যান। তাঁর ছেলে অভিজিৎ বলেন, ‘‘চতুর্থীর দিন মায়ের জ্বর আসে। পরের দিন মাকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ষষ্ঠীর দিন তিনি মারা যান। হাসপাতালের তরফে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গির উল্লেখ করা হয়েছিল।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় পরিত্যক্ত বাড়ি ও গুদামগুলি মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। পুরসভাকে বারবার বলা সত্ত্বেও পরিষ্কার করা হচ্ছে না। মশা মারার তেলও এলাকায় ছড়ানো হচ্ছে না। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মিতালি সাহার ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, কাউন্সিলর এক দিনের জন্যও এলাকায় আসেননি। একই সুরে
ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা স্থানীয় বিজেপি নেতা দেবাশিস শীল বলেন, ‘‘এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গি বেড়ে চলেছে। অথচ, কাউন্সিলরের দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না।’’
যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করে মিতালি বলেন, ‘‘আমি এলাকায় নিয়মিত যাই। যে সমস্ত এলাকার কথা বলছেন, সেগুলিতে সিপিএম সমর্থকদের সংখ্যা বেশি। কুমোরটুলিতে অনেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ঠিকই। তবে কোনও ডেঙ্গির কেস ধরা পড়েনি। ছায়া পালের মৃত্যু সম্পর্কে জানি না।’’
এ দিন ৪০/১, বনমালী সরকার স্ট্রিটের ঠিকানায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ ঘর তালাবন্ধ। বাড়ির সামনে ভর্তি জঞ্জাল, কোথাও বা জমে আছে জল। ওই বাড়ির একমাত্র ভাড়াটে ইন্দ্রজিৎ দাসের অভিযোগ, ‘‘মশার আতঙ্কে দিনরাত ধূপ জ্বালিয়ে রাখি। তা সত্ত্বেও মশার দাপট বাড়ছে। ওয়ার্ড স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বারবার বলা সত্ত্বেও এই বাড়িতে আজ পর্যন্ত কোনও কর্মী আসেননি।’’
পাশের কুমোরটুলি স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দারাও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। ২২ নম্বর কুমোরটুলি স্ট্রিটে
চারতলা বাড়ির নীচে একটি ক্লাব। তার সদস্য সঞ্জয় সাহা বললেন, ‘‘আমাদের ক্লাবের ১০০ জন
সদস্যের মধ্যে ৭০ জনই জ্বরে আক্রান্ত। বেশির ভাগেরই চিকুনগুনিয়া।’’ ক্লাবের পিছনেই দু’টি পরিত্যক্ত গুদামঘর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই গুদামগুলি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় জল জমে মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। ক্লাবের এক সদস্যের কথায়, ‘‘গুদামগুলিতে মশা মারার তেল ছড়ানোর জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একাধিক বার বলা হয়েছে। আজ পর্যন্ত কেউ আসেননি।’’ কেন? কাউন্সিলরের জবাব, ‘‘ওয়ার্ডের পরিত্যক্ত বাড়ি ও গুদামঘরে মশা মারার স্প্রে ও তেল যাতে ছড়ানো হয়, তা দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Malaria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE