Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। ট্র্যাডিশন বলে ট্র্যাডিশন! প্রতিষ্ঠানের বয়স একশো, জানালেন অরুণ দেব। তরুণ নিকেতন হল রাসবিহারী মোড় থেকে লেক মার্কেটের দিকে যেতে একটি পাইস হোটেল। যেখানে বাঙালির চা-পাঁউরুটির দোকানের জায়গা নিচ্ছে কফি-শপ, বাঙালির সাধের খাবার যেখানে চারতারা-পাঁচতারা হোটেলের দাক্ষিণ্যে বিশেষ বিশেষ উৎসবের দিনে টাকা ওড়ানোর উৎসবে পরিণত হয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে আজও তরুণ নিকেতন আপাদমস্তক একটি পাইস হোটেল।

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০০:০৭
Share: Save:

একশো পেরিয়ে পাইস হোটেল

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। ট্র্যাডিশন বলে ট্র্যাডিশন! প্রতিষ্ঠানের বয়স একশো, জানালেন অরুণ দেব। তরুণ নিকেতন হল রাসবিহারী মোড় থেকে লেক মার্কেটের দিকে যেতে একটি পাইস হোটেল। যেখানে বাঙালির চা-পাঁউরুটির দোকানের জায়গা নিচ্ছে কফি-শপ, বাঙালির সাধের খাবার যেখানে চারতারা-পাঁচতারা হোটেলের দাক্ষিণ্যে বিশেষ বিশেষ উৎসবের দিনে টাকা ওড়ানোর উৎসবে পরিণত হয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে আজও তরুণ নিকেতন আপাদমস্তক একটি পাইস হোটেল। অরুণ দেব বললেন, পাইস হোটেল মানে আপনি যা নেবেন তার জন্যই পয়সা দিতে হবে। অর্থাৎ, স্টিলের থালা, নুন আর স্টিলের গ্লাসে জল ছাড়া যা নেবেন, তারই দাম লাগবে। চৌকো কলাপাতায় খেতে হলে বা জলের জন্য মাটির ভাঁড় নিলেও আলাদা পয়সা। শুরুর দিন থেকে একই নিয়ম। হোটেলও প্রথম দিন থেকে একই জায়গায় রয়েছে। তবে কি, আগে মাটিতে চাটাই পেতে লোকে বসে খেত, তারপর সেই জায়গায় এল কাঠের পিঁড়ি। কিন্তু তখন খাইয়েদের জন্য ছিল পিতল-কাঁসার বাসন। পরে লোহার ফ্রেমের উপর শ্বেতপাথরের টেবিল হয়েছে। তাতে দু’দিকে দু’জন মুখোমুখি বসে খেতে পারেন এবং টেবিলগুলোও সেই মাপের। দোকানে নোটিস রয়েছে ‘পেঁয়াজ নাই’। আমিষ-নিরামিষ কোনও রান্নাতেই ওঁরা পেঁয়াজ-রসুন ব্যবহার করেন না। প্রতি দিনই পাওয়া যায় ডিমের ঝোল। তবে এখানে শুধু হাঁসের ডিমই রান্না হয়। প্রায় প্রতিদিনই ন’রকমের মাছ রান্না হয়— ইলিশ, ভেটকি, পাবদা, ট্যাংরা, মৌরলা, পারশে, বাটা, ভোলা। রুই-কাতলা তো আছেই। তবে দাম অত্যন্ত বেশি বলে চিতল সবসময় হয় না। গরমের শুরুতেই পাওয়া যায় নিম-বেগুন, আলু-উচ্ছে ভাজা। পাবেন পটলের রকমফের মেনু। কুচো চিংড়ি দেওয়া এঁচোড়-মোচা-লাউয়ের পদও পাওয়া যায়। শীতকালে ফুলকপি সহ কই মাছের ঝোল, বাঁধাকপি-মাছের তরকারি। অন্তত পাঁচ থেকে সাত রকমের নিরামিষ পদ মেলে। শেষ পাতে পাওয়া যায় আম-চালতার চাটনি। দই খেতে চাইলে ওঁরা সেন মহাশয় থেকে দই এনে দেবেন। শেষে বলি, আর যেখানেই যাও না রে ভাই, সপ্তসাগর পার/ তরুণ নিকেতনের ধারে যেয়ো না খবরদার— বুঝতেই পারছেন, গেলে রেস্ত খতম হবেই হবে।

শতবর্ষে

মাত্র ষোলো বছর বয়সে স্বামী বিবেকানন্দের বই পড়ে তাঁর ইচ্ছে হয়েছিল কোনও মেয়েদের মঠে থাকবেন। ১৯৪১-এ নিজেই মেয়েদের জন্য একটি আশ্রম তৈরি করেছিলেন প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণা মাতাজি। বাবা-মা ছিলেন স্বামী শিবানন্দের শিষ্য। অসামান্য মেধাবী ছিলেন তিনি। ১৯৫৪-য় শ্রীসারদা মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়, শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের প্রথম সাধারণ সম্পাদিকা তিনি। চল্লিশ বছর একনিষ্ঠ ভাবে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। তাঁর লেখায় উঠে এসেছে শ্রীসারদা মঠের ইতিহাস। ভগিনী নিবেদিতার প্রামাণিক জীবনীগ্রন্থ রচনা তাঁর অবিস্মরণীয় কীর্তি। সব কিছু ছাপিয়ে ছিল তাঁর আপন করা ভালবাসা। ১৯৯৪-তে প্রয়াত হন তিনি। এ বছর তাঁর শতবর্ষ। সেই উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের সহযোগিতায় ‘বিবেক চেতনা’ একটি সভার আয়োজন করেছে ২০ জুন বিকেল পাঁচটায় বিবেকানন্দ হলে। সভানেত্রী প্রব্রাজিকা অমলপ্রাণা মাতাজি, স্তোত্রপাঠে শ্রীসারদা মঠের ব্রহ্মচারিণীবৃন্দ। বক্তা প্রব্রাজিকা দেবপ্রাণাজি ও ভাস্বরপ্রাণাজি।

বৌদ্ধ ঐতিহ্য

মাত্র দুশো বছর আগের কথা। বৌদ্ধধর্ম বিলুপ্ত হতে বসেছিল তাঁর উৎসভূমিতেই। আকস্মিক প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার থেকে শুরু হল ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার। কিন্তু এমন বিস্মরণ হল কেন? পরবর্তী প্রতিক্রিয়াই বা কেমন হয়েছিল? ২২ জুন বিকেল চারটেয় বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভায় (১ বুদ্ধিস্ট টেম্পল স্ট্রিট) ষষ্ঠ কৃপাশরণ স্মারক বক্তৃতায় এই নিয়েই বলবেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা ও বিহারের প্রতিষ্ঠাতা কর্মযোগী কৃপাশরণ মহাস্থবিরের সার্ধশতজন্মবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হবে ‘জগজ্জ্যোতি’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা, থাকছে অজয় রায়ের তথ্যচিত্র। সঙ্গে শিমুল বড়ুয়া সম্পাদিত কৃপাশরণ স্মারকগ্রন্থের প্রচ্ছদ।

দেশের জন্য

রাসায়নিক সার তৈরিতে প্রয়োজনীয় ক্যাটালিস্ট এক সময় আনতে হত আমেরিকা থেকে। এক দিকে ব্যয়, অন্য দিকে আনতে আনতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। ক্ষিতীশরঞ্জন চক্রবর্তী আবিষ্কার করেন এমন এক পদ্ধতি, যাতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া ক্যাটালিস্ট আবার সক্রিয় হয় আর দীর্ঘস্থায়ীও হয়। অনেক কম খরচে ক্যাটালিস্ট কারখানা দেশেই তৈরি হল। ১৯৫৪-য় প্রথম যাঁরা পদ্মশ্রী পান, ক্ষিতীশরঞ্জন ছিলেন তাঁদের এক জন। ফার্টিলাইজার কর্পোরেশনের প্রাণপুরুষ তিনি। জন্ম ১৯১৫-য়। পেয়েছেন বহু সম্মান। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪-এ মারা যান। সম্প্রতি তাঁর বাসভবনে কন্যা সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে হয়ে গেল ক্ষিতীশরঞ্জনের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান।

ঝিলের ধারে

পুকুর জলা ঝিল নিয়ে বই তার প্রথম প্রতিবিম্ব দেখবে এক ঝিলেরই জলে। ১৭ জুন জলাভূমি দিবসে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় যাদবপুর স্টেশনের পাশে বিবেকনগর ঝিলের সিঁড়িতে এক সভায় প্রকাশিত হবে ফাইভ থাউজেন্ড মিররস/ দ্য ওয়াটার বডিজ অব কলকাতা। লেখক মোহিত রায় পরিবেশ মহলে পরিচিত। কলকাতা যে আদতে এক পুকুর শহর, তা তাঁর লেখায় শহরবাসী জেনেছে। বইটির প্রকাশক যাদবপুর ইউনিভার্সিটি প্রেস, যা সমনামের বিদেশি প্রকাশনাগুলির মতোই এখন উজ্জ্বল। অনুষ্ঠান সহায়তায় ঝিল জলাশয় উন্নয়ন কমিটি যারা এই মৃতপ্রায় জলাশয়টিকে দেড় দশক আগে বাঁচিয়ে তুলে নতুন আন্দোলনের দিশা দেখিয়েছিল।

সংগীত দিবস

২১ জুন বিশ্ব সংগীত দিবস। সারা বছর সুর-তাল-ছন্দে মেতে থাকে যে শহর, তার কাছে একটু বাড়তি গুনগুনের দিন। নজরুল মঞ্চে সে দিন ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে কনসার্ট’ শোনাবেন সৌম্যজিৎ-সৌরেন্দ্র। বাংলার বাউল, কানাডার অপেরা-গায়ক, কাজরি-ঠুমরি থেকে চলচ্চিত্রের গান, ওঁদের ডাকে এক মঞ্চে সবাই। কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, উষা উত্থুপ-এর পাশে থাকবে পাঁচশো স্কুলপড়ুয়ার কণ্ঠে জাতীয় সংগীত, ‘মানভঞ্জন’-এর পরিবেশনায় ব্রডওয়ের আঙ্গিকে মিশবে কথাকলি-মণিপুরি। উদ্বোধনে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, পড়বেন স্বরচিত কবিতাও। ও দিকে সন্ধেয় বালিগঞ্জের উইভার্স সেন্টার ফর দি আর্টস-এ সুদেষ্ণা বসু ও সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের নিবেদন ‘মিউজ অ্যান্ড মিউজিক’। লেনন থেকে লালন, রবীন্দ্রনাথ থেকে পিট সিগার-এর গানে সুদেষ্ণা, সুজয় পড়বেন শেক্‌সপিয়র, মায়া অ্যাঞ্জেলু ছুঁয়ে জীবনানন্দের কবিতা।

প্রয়াণ

পারফর্মিং আর্টের প্রতি আকর্ষণ স্কুল থেকেই। কিন্তু বিদেশের মাটিতে দেশের শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান আলাদা পরিচয় দিয়েছিল বীরেন্দ্র শংকরকে। ১৯৬৬-তে লন্ডনে ফেস্টিভ্যাল অব লাইট অ্যান্ড ফোক মিউজিক অব ইন্ডিয়া এবং ১৯৬৭-তে শঙ্কর প্রেজেন্টেশনের ব্যানারে ডান্স অ্যান্ড মিউজিক অব ইন্ডিয়া উপস্থাপন করেন। ১৯৬৯-এ ভারতীয় মার্গ সংগীত ও নৃত্যের প্রসারে তৈরি করেন সেন্টার অব ইন্ডিয়ান আর্টস। ওঁর পরিচালনায় ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়ান আর্টস ১৯৭০-এ প্রথম উপস্থাপিত হয়। ১৮ বছর ধরে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে এই বার্ষিক উৎসব খুব জনপ্রিয় ছিল। ১৯৮৮-তে কলকাতার নামী শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে টাকা তুলে উনি স্টুডেন্ট হেলথ হোমের সূচনা করেন। সম্প্রতি চলে গেলেন বীরেন্দ্র শংকর।

বাইজি-সংগীত

সে কালের বাবুদের বিলাসের অন্যতম উপকরণ ছিল বাইনাচ। কিন্তু এর পাশাপাশি বাইজিরা কেউ কেউ থিয়েটারে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অনেকেই গানের রেকর্ড করেন। কেউ কেউ খ্যাতি পান কীর্তনে। ‘কলকাতার সংগীতে বাইজিদের অবদান’ নিয়েই আজ সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় মডার্ন হাই স্কুল ফর গার্লস-এর পাঁচতলায় মেস অডিটোরিয়ামে পঞ্চম ‘কল্যাণ মৈত্র স্মারক বক্তৃতা’য় বলবেন সরোদিয়া ও সংগীতবিদ অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখানো হবে বাইজিদের নিয়ে তাঁর তথ্যচিত্র ‘তওয়াইফ’। আয়োজনে সিনে অ্যাকাডেমি ও ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যাল্যায়েড আর্টস।

পরিচালক

৯৬ পূর্ণ করে ৯৭-এ পা দেবেন অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় (জ. ১৯১৯)। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের যে ক’জন পরিচালক আজও আলোকিত করে রেখেছেন এ-শহর, তিনি তাঁদের অন্যতম। শান্তিনিকেতনের ছাত্র, অগ্রজ বনফুল-এর প্রেরণায় সিনেমায় আসা। কিছুক্ষণ, আহ্বান, নিশিপদ্ম, পিতাপুত্র, ধন্যি মেয়ে, মন্ত্রমুগ্ধ, অগ্নীশ্বর ইত্যাদি বহু ছবির স্রষ্টা এই মানুষটির জন্মদিনে, ১৮ জুন, চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবনে তথ্যচিত্র ‘অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ’ (পরি: সুব্রত রায়) দেখানো হবে বিকেল ৫টায়। রাজ্য সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগ ও ‘খোলামন’ সাংস্কৃতিক সংস্থার যৌথ শ্রদ্ধার্ঘ্য। অন্য দিকে অসহনীয় গরমেও বর্ষার সজল বাতাসের মতো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের উৎসব। ১৫-২১ জুন নন্দনে এ-উৎসবে দুনিয়ার হালফিল সেরা ছবির সমাহার। আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় উদ্বোধন, উদ্বোধনী ছবি আর্জেন্তিনার ‘সন অব দ্য ব্রাইড’। নন্দন ও স্প্যানিশ স্টাডি সেন্টার-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভবানীপুর ফিল্ম সোসাইটি।

ডোভার লেন

আশির দশকের মধ্যভাগ থেকে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের বিশিষ্ট শিক্ষকরা ‘দ্য ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স’-এর কার্যালয়ে এসে ছোট ছেলেমেয়েদের গানবাজনা শেখাতে শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যেই ‘দ্য ডোভার লেন মিউজিক অ্যাকাডেমি’ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে, কিন্তু নানা কারণে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও কত্থক নৃত্যের ক্লাস ছাড়া বাকি বিভাগগুলি বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কিছু বছর থেমে থাকার পর আবার সেই মিউজিক অ্যাকাডেমিটিকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার প্রয়াস শুরু হয়েছে। ১ জুলাই থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন সংস্থার কার্যালয়ে (১৮/২ ডোভার লেন, কলকাতা-২৯, দূরভাষ- ২৪৬১ ৮১৩৭) নিয়মিত ভাবে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, বেহালা, তবলা, কত্থক নৃত্য ও পঞ্চকবির গান শেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই উপলক্ষে ২১ জুন সন্ধে ৬টায় সংস্থার কার্যালয়ে এক সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে থাকবেন মিউজিক অ্যাকাডেমির শিক্ষকবৃন্দ এবং তাঁদের ছাত্রছাত্রীরা।

সুবর্ণজয়ন্তী

‘সাউন্ড অব মিউজিক’-এর পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শহরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘দি এডেলউইস ফেস্টিভ্যাল’। যোগ দিচ্ছে শহরের ১৮টি স্কুল। কলামন্দিরে ১৬-১৭ জুন এই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় সিনেমা, গান, কুইজ ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসবে অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাউন্ড অব মিউজিকের কথা। আসছে ভিয়েনার কয়্যার। আয়োজনে অশোক হল গ্রুপ অব স্কুলস এবং ভারতে অস্ট্রিয়ার দূতাবাস।

স্নেহধন্য

শান্তিনিকেতনে সবাই মেয়েটিকে চিনত ‘অনু’ বলে। রবীন্দ্রনাথ এক দিন তাঁর ভাল নাম ‘প্রীতি’ শুনে বলেন, এটা ভারী নাম। আজ থেকে তোর নাম ‘অনুকা’। ৯২ বছরেও প্রীতি ভৌমিকের স্মৃতিতে আশ্রমের দিনগুলি অমলিন। ১৯২৫ সালে আড়াই বছরে শান্তিনিকেতন গিয়েছিলেন মায়ের সঙ্গে। আশ্রমে নাচ শিখলেন। মেয়েদের নাচ নিয়ে বিতর্ক এড়াতে যে কোনও অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ মঞ্চের পাশে বসে থাকতেন। ‘এক বার গুরুদেব অসুস্থ। ডাক্তার নীলরতন সরকার বলেছেন বিশ্রামে থাকতে। এদিকে কলকাতায় আমাদের নাচের অনুষ্ঠান। গুরুদেব চুপিচুপি বলে রেখেছেন, দেখবি আমি ঠিক চলে আসব। অনুষ্ঠানের দিন বিকেলে রথীদা এসে বললেন, টেলিগ্রাম এসেছে, বাবামশায় আসছেন। পরে শুনলাম, গুরুদেব অনশনে বসে গিয়েছিলেন। অগত্যা ডাক্তার অনুমতি দিলেন।’ কত না স্মৃতি। ‘কত বড় বড় মানুষ এসে গুরুদেবের সঙ্গে ছবি তুলতেন, কথা বলতেন, আমরা অবাক হয়ে দেখতাম। গুরুদেব মিটিমিটি হেসে বলতেন, শুধু তোরাই আমার মূল্য দিলি না।’ বিয়ের পর স্বামীর কর্মসূত্রে বাইরে বাইরে ছিলেন প্রীতি। তখন পটনায় ‘বাল্মীকি প্রতিভা’, দিল্লিতে ‘ভানুসিংহের পদাবলি’ করেছেন। কাশ্মীরে যুবরাজ কর্ণ সিংহের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠান করেন। সঙ্গে ছিলেন গীতা ঘটক, কণিকা মজুমদার, শৈলজারঞ্জন মজুমদার প্রমুখ। বর্তমানে কাঁকুলিয়া রোডের বাসিন্দা প্রীতি ভৌমিককে সংবর্ধনা দিল দীপ্তি সোম সিংহ ও ইন্দুদীপা সিংহ পরিচালিত ‘রবিরশ্মি’। প্রীতি শোনালেন আশ্রমের দিনগুলির কথা।

সাহিত্যিক

ঔপনিবেশিক প্রভুদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার ফলে এখানে শিক্ষিত হওয়া মানেই স্বজাতির ঐতিহ্য ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া।’— একটি প্রবন্ধে এমন মন্তব্যের পাশাপাশি আর-একটি প্রবন্ধে তানভীর মোকাম্মেল-এর মন্তব্য: ‘রবীন্দ্রনাথ চাননি যে রাষ্ট্র জাতীয় শিক্ষা পাঠ্যসূচি তৈরি করুক। কারণ তার ফলে, ঘুরেফিরে, পাঠ্যসূচিতে সেইসব ধারণাই কর্তৃত্ব করবে যা আসলে কর্তৃত্বশালী শ্রেণীরই ধারণা।’ এ থেকেই চিনে নেওয়া যায় তানভীর-এর চিন্তাসূত্র। কলকাতায় তানভীর মোকাম্মেলের প্রবন্ধ (আদম) প্রকাশ পেল সদ্য, বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে, তানভীর নিজেও ছিলেন। জানালেন, ‘আমার প্রথম প্রেম সাহিত্য।’ সিনেমার দুনিয়ায় তাঁর খ্যাতি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার হিসেবে, তবে দু’দিকের বাঙালিই তাঁকে চেনে সাহিত্যিক হিসেবে। জন্ম ১৯৫৫-য়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গন্‌গনে আঁচে বেড়ে ওঠা, ইংরেজি সাহিত্যের কৃতী ছাত্র, একদা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হওয়ার সুবাদে খেতমজুর আন্দোলনের শরিক, তানভীরের আর একটি বইও বেরিয়েছে কলকাতা থেকে, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, সিসিফাস ও ঐতিহ্যজিজ্ঞাসা (অভিযান)। সিনেমার শিল্পরূপ, সাহিত্যের নন্দনতত্ত্ব, রাজনীতির মার্ক্সবাদী ব্যাখ্যা, লোকশিক্ষা-গণশিক্ষা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণার সঙ্গে পৃথিবীভ্রমণের সরস বৃত্তান্ত তাঁর লেখনীতে। তিনি শুধু প্রাবন্ধিক নন, কবি, গদ্যকার, ঔপন্যাসিকও। ‘সাহিত্য সমাজবিজ্ঞান নয়, তবু সমাজবিজ্ঞানের উপকরণ থাকলে তা গভীরতা পায়।’ মনে করেন তানভীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE