Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

মৃদু বাতাসে কম্পমান অন্ধকার। দুটি বালক-বালিকা শুয়ে আছে গুটিসুটি হয়ে। গায়ে একটি ছোট্ট কাঁথা, এতটাই ছোটো যে শতচেষ্টাতেও তাই দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে না সামান্য শরীরটুকু।’ রাতের ফুটপাথে দুটি ছোট ছেলেমেয়ের ঘুম ও সম্ভাব্য স্বপ্নকে ঘিরে ছবি এঁকেছিলেন চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

দুই শিল্পীকে ফিরে দেখা

মৃদু বাতাসে কম্পমান অন্ধকার। দুটি বালক-বালিকা শুয়ে আছে গুটিসুটি হয়ে। গায়ে একটি ছোট্ট কাঁথা, এতটাই ছোটো যে শতচেষ্টাতেও তাই দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে না সামান্য শরীরটুকু।’ রাতের ফুটপাথে দুটি ছোট ছেলেমেয়ের ঘুম ও সম্ভাব্য স্বপ্নকে ঘিরে ছবি এঁকেছিলেন চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য। সীমাহীন মমতায় সাদাকালো রেখাচিত্রে ধরেছিলেন চা-দোকানের কর্মী, বিড়ি-শ্রমিক, খবরের কাগজের হকার-সহ নানা অসহায় শিশুর ক্লান্তি, বেদনা ও যন্ত্রণার অভিব্যক্তি। চিত্তপ্রসাদের ছবির বিষয় প্রতিবাদী মানুষ। প্রবল অভাবে আন্ধেরির এক পুরনো বাড়ির ঘরে বসে কাজ করেছেন লিনোকাট, উডকাট, বইয়ের প্রচ্ছদ, রাজনৈতিক পোস্টার, নাটকের মঞ্চনির্মাণ ও পোশাক পরিকল্পনা-সহ কত কী! ‘এনজেলস উইদাউট ফেয়ারি টেলস’ সিরিজ বা ‘রূপকথাহীন দেবশিশুরা’ এঁকেছিলেন ১৯৫১-য়। ১৯৬৯-এ আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ উপলক্ষে ইউনিসেফের উদ্যোগে এটি অ্যালবাম আকারে প্রকাশিত হয়। কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত নানা জায়গা থেকে তার সতেরোটি ছবি পুনরুদ্ধার করে সংকলন করেছেন চিত্তপ্রসাদ-এর দেবশিশুদের অ-রূপকথা-য়। প্রতিটি ছবির সঙ্গে সুন্দর গদ্য, বাংলা ও ইংরেজিতে। অন্য দিকে লোকায়ত থেকে রূপায়ত— দুই মলাটে প্রয়াত শিল্পী খালেদ চৌধুরীর জীবনের ঘটনাধারা একত্র করেছেন প্রদীপ দত্ত। অবতরণিকায় সুধীর চক্রবর্তী লিখেছেন ‘বস্তুতপক্ষে খালেদ চৌধুরী আমাদের সবচেয়ে অব্যবহৃত মানুষ। সংস্কৃতির অন্দর ও বাহির মহলে ছিল তাঁর হাজারদুয়ারি সাম্রাজ্য। সেই জানলাগুলি কেউ খোলেননি।’ খালেদ চৌধুরী প্রসঙ্গে শম্ভু মিত্র লিখেছিলেন, ‘লোকটির অস্বাভাবিক ক্ষমতা। আঁকতে পারেন, যে কোন বাজনা বাজাতে পারেন, গান শেখাতে পারেন, আর যত নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করতে পারেন।’ স্বশিক্ষিত খালেদ চৌধুরী বেহালা বাদনে, তুলিতে, বা লেখনীতে ছিলেন সমান দক্ষ। গত বছর প্রয়াত মানুষটির অজস্র প্রচ্ছদচিত্র, পোস্টার, মঞ্চস্থাপত্য ও শিল্পকাজ এখনই দুষ্প্রাপ্য। জীবনকথার পাশাপাশি ছবি, প্রচ্ছদ ইত্যাদি কাজ ধরা রয়েছে বইটিতে। প্রথম পর্বে রইল ১৯১৯-’৫৯ পর্যন্ত খালেদ চৌধুরীর জীবনের চল্লিশটি বছর। দুই শিল্পীর কাজকে নতুন করে ফিরে দেখায় উদ্যোগী হয়েছে নতুন প্রকাশন সংস্থা ধ্রুবপদ প্রকাশনী।

ফিল্মযাত্রা

‘ওই ধ্বংসস্তূপ... স্টিল ব্যবহার করেছি এ ছবিতে টেকনিক হিসেবে, রিমেমব্রেন্স হিসেবে। আমরা পুরোনো স্মৃতিগুলো, টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো যেমন অ্যালবামের পাতা উলটিয়ে স্টিল ফোটোর মধ্য দিয়ে দেখি সেভাবেই এ ছবিতে দেখাতে চেয়েছি।’— খণ্ডহর-সহ বাকি ছবি নিয়ে পরিচালক-জীবনের কথা মৃণাল সেনের কথোপকথনে। তাঁর ছবিতে অভিনয়ের স্মৃতি গীতা সেনের সাক্ষাৎকারে: ‘খণ্ডহর-এর মা... নিছক আমার কল্পনাপ্রসূত নয়, বরং নিজের ফেলে আসা জীবনটাকেই যেন রি-ক্রিয়েট করেছি আমি...’। আছে অঞ্জন দত্তেরও বয়ান। মৃণাল সেনের শিল্প-অভিপ্রায়, সিনেমা নিয়ে তাঁর মনোভূমি উদ্‌ঘাটনের জন্যেই প্রতিক্ষণ থেকে সদ্য বেরল শিলাদিত্য সেনের মৃণাল সেনের ফিল্মযাত্রা। বইটি গ্রথিত করেছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখবন্ধে লিখেছেন ‘মৃণাল সেনের বিরানব্বই বর্ষপূর্তিতেই এই বইটির পরিকল্পনা।’ বিপুল চিত্রসম্ভারে বইটি সজ্জিত, আছে তাঁর ফিল্মপঞ্জি। প্রচ্ছদ যোগেন চৌধুরীর। তিনি, শমীক আর অঞ্জন, তিন জনে মৃণালবাবুর হাতে বইটি তুলে দিলেন ২৭ জুন বিকেলে। ‘মৃণালদার ছবির সঙ্গে মৃণালদা-গীতাদিকেও নতুন করে মনে পড়িয়ে দেবে এ-বই’, মন্তব্য অঞ্জন দত্তের।

ব্ল্যাক কমেডি

রুটি-রুজি না মূল্যবোধ, নাগরিক জীবনে এই দ্বন্দ্ব ক্রমেই বাড়ছে৷ একের পর এক ঘটনায় বেরিয়ে পড়ছে তথাকথিত সুসভ্যতার আলোকের ভিতরের কঙ্কাল৷ সময়ের এই সংকট নিয়েই শিল্পী অশোক মল্লিকের প্রদর্শনী ‘ব্ল্যাক কমেডি’৷ ৩০টি ছবি নিয়ে ২৬ জুন গ্যালারি সংস্কৃতিতে শুরু হল৷ সব কটিই সাদা কাগজে কালো কালিতে আঁকা৷ ‘আমাদের জীবনের মধ্যেই হাসির আড়ালে যে কালো দিকগুলো আছে, সেগুলোকে ধরতে চেয়েছি৷ রোজ সকালে বাড়ির উল্টোদিকের মাঠে লাফিং ক্লাবে প্রবীণ মানুষদের হো হো করে হাসতে দেখি৷ বেশির ভাগ দম্পতিই একা, ছেলেমেয়ে থাকে বিদেশে৷ সেই করুণ যন্ত্রণা হাসিতে ঢাকার কী অক্ষম চেষ্টা করেন তাঁরা’, বলছেন অশোক৷ কয়েকটি ছবিতে আছে এ শহরের পুরনো বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনা, জড়িয়ে গিয়েছে জঙ্গিদের হাতে সাম্প্রতিক ইতিহাস ধ্বংসের বিষয়টিও৷ ১৮ জুলাই পর্যন্ত৷

নাট্যকার প্রয়াত

দেশভাগের বছর চারেক আগে ফরিদপুর থেকে আট বছর বয়সে কলকাতায় আসা। শ্যামল সেনগুপ্ত বাংলায় সাম্মানিক স্নাতক হন বঙ্গবাসী কলেজ থেকে। সত্তরের দশকে ‘ক্রান্তিকাল’ নাট্যদলে যোগ দেন। বন্ধু নভেন্দু সেনের তাগিদে নাটক লেখায় আকৃষ্ট হন। ১৯৮০-তে বহুরূপী পত্রিকায় প্রথম নাটক ‘কালাবদর’ প্রকাশিত হয়। কানামামা, জতুগৃহ, ওম্ শান্তি, হরেকৃষ্ণ, স্বপ্নফেরি, পাণ্ডু, রাজা যায়, বহ্নিবলয় প্রভৃতি নাটক রচনা করেন। চল্লিশ বছরের নাট্য-সাধনায় বহুরূপী-ক্রান্তিকাল-নাট্যতীর্থ প্রমুখ নাট্যদলে তাঁর নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। কর্মজীবন কাটিয়েছেন লর্ড সিংহ রোডের স্পেশাল ব্রাঞ্চে। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন নাট্যকার শ্যামল সেনগুপ্ত।

লোরকা স্মরণে

যে স্প্যানিশ কবির কবিতা সবচেয়ে বেশি স্পন্দিত করেছে বিশ্বের মানুষের আবেগকে, তিনি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা। ৫ জুন ১৮৯৮-এ লোরকার জন্ম স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলে। প্রকৃতি ও মানুষ নানা ভাবে বিধৃত হয়েছে তাঁর কবিতা ও নাটকে। তাতে আছে জিপসি রোমান্স আবার ফাসিস্ত ফ্রাংকোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক। ১৯৩৬-এ ফাসিস্ত জল্লাদদের হাতে নিহত হন ভালবাসার কবি লোরকা। ২৬ জুন তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ‘লোস ইস্পানোফিলোস’-এর (সভানেত্রী মালবিকা ভট্টাচার্য) আয়োজনে আইসিসিআর-এ হয়ে গেল এক অনুবাদ কর্মশালা, বিষয় লোরকার কবিতা।

চিকিৎসক দিবস

বুকের কোথাও ডেলা পাকিয়েছে। কিন্তু পুরুষ ডাক্তার দেখাতে লজ্জা। আর তাতেই মেয়েটির ব্রেস্ট ক্যানসার গড়িয়ে যায় অনেকগুলি স্টেজ। লজ্জার ভয়ে অনেক মেয়েই এমন সমস্যায় পড়েন। তাই ১ জুলাই সল্টলেকে এএমপি বৈশাখী মলে ম্যাগস মেডিকেল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার শুরু করছে বিশেষ ক্লিনিক, স্ত্রীরোগের তত্ত্বাবধানে থাকবেন মহিলা চিকিৎসকেরা। জোর থাকছে গরিবদের চিকিৎসায়। সংস্থার পক্ষে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রত্নাবলী চক্রবর্তী জানালেন, বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় গরিবরা বিশেষ সুবিধা পাবেন। পারিবারিক মেডিক্যাল চেক-আপ হলে পরিচারিকার কোনও খরচ লাগবে না। চিকিৎসক দিবসে বিধানচন্দ্র রায়কে শ্রদ্ধা জানাতেই এই উদ্যোগ।

বিপ্লবী

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে নকশালবাড়ি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন জয়ন্ত জোয়ারদার। আসল নাম অভিজিৎ দাশ। লেখাপড়া ছেড়ে চলে যান মালদহ ও পূর্ণিয়ায় কৃষকদের সংগঠিত করতে। নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধে তাঁকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে তিনি আন্দোলনের বহুবিচিত্র অভিজ্ঞতাকে সাহিত্যে রূপ দেন। পলাতক জীবনে লেখা এভাবেই এগোয় সত্তরের দশকে সাড়া ফেলে। দ্বিতীয় উপন্যাস ভূতনি দিয়ারা-কে বলা হয় বাংলায় প্রথম পরিবেশভিত্তিক কাহিনি। শেষ জীবনে লেখেন আত্মজীবনী ফুট প্রিন্টস্‌ অব্‌ ফুট সোলজারস। ছোট গল্পেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সম্প্রতি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন তিনি। তিনটি প্রকাশক সংস্থা সেতু, পিবিএস, বইওয়ালা ও পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর স্মরণ অনুষ্ঠান ২ জুলাই বিকেল পাঁচটায় মহাবোধি সোসাইটি হলে।

নৃত্যোৎসব

দেখতে দেখতে দুই দশক কাটিয়ে দিল ‘দর্পণী’। ওড়িশি নৃত্যশিল্পী অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নৃত্যসংস্থা এই উপলক্ষে আয়োজন করেছে বর্ষব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সূচনা ১০-১১ জুলাই রবীন্দ্রসদন, বিকেল ৫টায়। প্রথম দিন মঞ্চস্থ হবে ‘যুগান্ত’, সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গিতে মহাভারতের মূল্যায়ন ও দ্বিতীয় দিন ‘মায়া’, আজকের নৃত্য-ভাবনায় রবীন্দ্র গীতিনাট্যের পুনর্মূল্যায়ন, যার মুখ্য ভূমিকায় অলকানন্দা রায় ও পরিচালক অর্ণব নিজে। কলকাতার ন’টি নৃত্যসংস্থা নিবেদন করবে স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রযোজনা এবং দর্পণী সম্মান জানাবে সেই সব নৃত্যব্যক্তিত্বকে। ‘স্ট্রিং’ নামের এই নৃত্যোৎসবে গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের নামাঙ্কিত স্মারক মুদ্রা প্রকাশিত হবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যরূপে।

হাজার কণ্ঠে

২০০৬-এ ‘সংগীত ভারতী মুক্তধারা’ গঠিত হয়েছিল সমাজের সর্বস্তরে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যাপক প্রসার এবং এর যথার্থ সংরক্ষণের অঙ্গীকার নিয়ে। তাদের উদ্যোগে কয়েক বছর ধরেই ‘হাজার কণ্ঠে সম্মেলক রবীন্দ্রসংগীত’ স্মৃতিধার্য বাঙালির মনে। ইংরেজি গীতাঞ্জলি-র শতবর্ষ এবং কবির নোবেল প্রাপ্তিরও শতবর্ষ উপলক্ষে তাদের এ বারের নিবেদন: ‘একোজ অব গীতাঞ্জলি’। ভাবনা, বিন্যাস ও সামগ্রিক পরিকল্পনায় অরুন্ধতী দেব, তিনি ‘মুক্তধারা’র কর্ণধারও। জানালেন ‘একটি সীমিত পরিমণ্ডলে আবদ্ধ না রেখে, রবীন্দ্রসংগীতের বিরাট আকাশ সমগ্র জাতির প্রাণে গেঁথে দিতে হবে। তাই ভারতের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমের নানা শহর থেকে গাইতে আসছেন শিল্পীরা। সাত-আট মাস ধরে নানা শহরে ঘুরে ঘুরে মহড়া চলছে। অনুষ্ঠানে গানের সঙ্গে শোনা যাবে আবৃত্তিও, ইংরেজি গীতাঞ্জলি থেকে, পার্থ ঘোষের কণ্ঠে। উপস্থাপনায় উষা উত্থুপ।’ ৫ জুলাই রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টায়, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সঙ্গের ছবিতে তারই মহড়ার দৃশ্য।

বোনফোঁটা

বছর ভর স্বামী, ছেলে, ভাইদের মঙ্গলার্থে মেয়েরা নানা আচার অনুষ্ঠান করে থাকে। কিন্তু মেয়েদের কল্যাণের জন্য কোনও আচারের বিধান নেই। তাই সমাজ-তিথি-নক্ষত্র ইত্যাদিকে পাশে সরিয়ে গত বছর থেকে মিতা চক্রবর্তী উদ্যোগী বোনফোঁটা-য়। বেছে নিয়েছেন বছরের মাঝামাঝি ২ জুলাই দিনটিকে। সে দিন সকাল দশটায় ৩৭ রিপন স্ট্রিটের লোকায়ত সভাগৃহে বোনফোঁটার অনুষ্ঠানে কৌশিক সেন প্রথম ফোঁটাটি দেবেন রূপান্তরকামীদের। ফোঁটা নিতে আসবেন হকার মহিলারা, যৌনকর্মী-সহ আরও অনেকে।

সাগরপার

রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটক ঘিরে নতুন এক ভাবনার নাটক লিখেছিলেন শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, ‘যখন ডাকঘর আছে অমল নেই’৷ ভাবনাটা ছিল এই রকম, রবিঠাকুরের ডাকঘর-এ সময়ের যে ছায়াপথ বেয়ে চলে গিয়েছে অমল সেই পথে আজকের সুধা-ও কি চলে যেতে চাইবে? আজকের সময়ে কেমন হবে সেই যাওয়াটা? রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদী নাটকটির সাম্প্রতিক এই ভাষ্য ছোটদের নাটকের জগতে সাড়া ফেলেছিল কিছু কাল আগে৷ ছোটদের নাট্যদল বিডন স্ট্রিট শুভম্ মঞ্চস্থ করেছিল নাটকটি৷ আর সেখানেই প্রথম নজর কাড়ে এক নবাগতা, অস্মিতা খান৷ সুধার ভূমিকায় তার অভিনয় সাড়া জাগিয়েছিল৷ পাশাপাশি শুভম্-এরই ‘কাজলরেখা’ ও অন্যান্য নাটকে ক্রমেই দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে থাকে অস্মিতা৷ দর্শকদের স্বীকৃতির পাশাপাশি পুরস্কার পেয়েছে মনোজ মিত্রের হাত থেকে৷ সেই অস্মিতা এ বার নাটকের জন্যই সাগরপার৷ ব্রিটিশ কাউন্সিল সম্প্রতি আয়োজন করেছিল ৩৫তম সারা ভারত আন্তঃবিদ্যালয় নাট্য-প্রতিযোগিতা৷ এ প্রতিযোগিতা এ বারে ছিল শেক্সপিয়রের নাট্য ও সাহিত্য ভাবনায় অনুপ্রাণিত৷ সেখানেই অন্যতম সেরা অভিনেত্রী বিবেচিত হয়েছিল অস্মিতা৷ আর তারই জন্য মাসখানেকের জন্য সে ঘুরে এল ম্যাঞ্চেস্টার মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির
নাট্য-কর্মশালা থেকে৷ লোরেটো হাউসের কলা বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী অস্মিতা জানাল লেখাপড়ার পাশাপাশি অভিনয়টাও সমান তালে চালিয়ে যেতে চায় সে৷

সুচিত্রা এবং...

তাঁর প্রয়াণের পর বছর ঘুরে গিয়েছে, তাঁকে নিয়ে এখনও লেখালেখি চলছে, বই বেরচ্ছে, তবু তারকার দ্যুতিতেই আটকে আছেন সুচিত্রা সেন। কতিপয় ব্যতিক্রমী চেষ্টা ছাড়া তেমন ভাবে তাঁর অভিনয় নিয়ে আলোচনা হয় না, এমন এক চেষ্টাই দেখা গেল সিনে গিল্ড, বালি-র পত্রিকা ‘প্রসঙ্গ চলচ্চিত্র’-এ (সম্পা: অঞ্জন দাস মজুমদার)। সংখ্যাটির বিষয় অবশ্য ‘পঞ্চকন্যা এবং...’, সেখানে সুচিত্রার সঙ্গে আরও চার অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় সুপ্রিয়া দেবী সন্ধ্যা রায় ও মাধবী মুখোপাধ্যায়কে নিয়েও আলোচনা। সম্পাদকীয়-তে জানানো হয়েছে ‘পঞ্চাশের দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্র বিভিন্ন পরিচালকদের হাত ধরে যে আধুনিক যুগে প্রবেশ করেছিল, আমরা মনে করি বিশেষ করে এই পাঁচজন অভিনেত্রী... অন্যতম মুখ্য কারিগর হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন।’ অনেক ছবিতেই বাঁধাধরা ছাঁচ থেকে বেরিয়ে এসে সুচিত্রার অভিনয়, অথচ তা যে আজও চাপা পড়ে রইল তাঁর মহানায়িকা-গ্ল্যামারের তলায়, সে কথাটাই খেয়াল করিয়ে দিল সংখ্যাটি। পাশাপাশি সাবিত্রী সুপ্রিয়া সন্ধ্যা মাধবী তাঁদের নিপুণ অভিনয়ে কী ভাবে হয়ে উঠেছিলেন ‘ডিরেক্টরস অ্যাকট্রেস’; আর কী ভাবেই বা তৈরি করে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার অব্যবহিতে বাংলা ছবির স্বর্ণযুগ, সে আলোচনাও পত্রিকাটিতে। অভিনীত ছবির তালিকার সঙ্গে তাঁদের ছবিতে আসার ইতিবৃত্ত, তাঁদের কাজ ও জীবনের সাযুজ্য নিয়ে হালহদিশ। বাঙালি কত আত্মবিস্মৃত সে কথাই ফের মনে করিয়ে দিল পত্রিকাটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE