Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মনোহরপুকুর

দুই বস্তির বিবাদের জেরে তাণ্ডব, ত্রস্ত পাড়া

দুই বস্তির বিবাদের জেরে শুক্রবার সকালে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল দক্ষিণ কলকাতার মনোহরপুকুর এলাকা। বিবদমান দুই দলের ছোড়া বোতলের কাচ ছড়িয়ে পড়ল রাস্তায়। যার জেরে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে ভোগান্তির শিকার হলেন সাধারণ মানুষ। ভাঙচুর করা হল অ্যাম্বুল্যান্সও।

‘রণভূমি’। শুক্রবার, মনোহরপুকুরে। — নিজস্ব চিত্র

‘রণভূমি’। শুক্রবার, মনোহরপুকুরে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৬
Share: Save:

দুই বস্তির বিবাদের জেরে শুক্রবার সকালে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল দক্ষিণ কলকাতার মনোহরপুকুর এলাকা। বিবদমান দুই দলের ছোড়া বোতলের কাচ ছড়িয়ে পড়ল রাস্তায়। যার জেরে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে ভোগান্তির শিকার হলেন সাধারণ মানুষ। ভাঙচুর করা হল অ্যাম্বুল্যান্সও।

সকাল থেকে এই বোতল ছুড়ে ভাঙচুরের ঘটনায় বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকার যান চলাচল। আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাসিন্দা চৈতালী ভট্টাচার্য সকালবেলা বাড়ির কাজে যাদবপুরে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন, তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে মদের ভাঙা বোতল। ‘‘অবাক হওয়ার কিছু নেই আর। প্রতি বছরই পুজোর সময়ে এই ঘটনা অবধারিত,’’ বললেন তিনি।

দক্ষিণ কলকাতার এমন এক অভিজাত এলাকায় এ ‌ভাবে রাস্তায় নেমে বোতল ছুড়ে একে অন্যকে আক্রমণ করার দৃশ্য দেখে অবাক স্থানীয় মানুষ। কী করে সাধারণ তরুণ ও তরুণীরা এমন সাহস পেতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গণ্ডগোলের খবর আগেভাগেই পুলিশের কাছে পৌঁছেছিল। কিন্তু পুলিশের সামনেই ঘণ্টাখানেক ধরে চলে তাণ্ডব। পুলিশ চুপ করেই দেখতে থাকে সে দৃশ্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও এই দুই বস্তির মধ্যে গোলমাল হয়েছে। যার জন্য ভুগতে হয়েছে অন্য বাসিন্দাদের। এ দিন পুলিশের এক অফিসারও জানিয়েছেন, দুই বস্তির মধ্যে ছোটখাটো বিবাদ চলতেই থাকে। বিসর্জনের নেশায় তার মাত্রা আরও কিছুটা চড়ে গিয়েছিল।

কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না?

পুলিশের যুক্তি, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, দুই দলের পুরোভাগে রয়েছেন প্রচুর মহিলা। তাঁদের নিরস্ত করার মতো মহিলা পুলিশ ছিল না প্রথমে। পরে মহিলা পুলিশদের নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামলানো হয়। এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা না-হলেও ওই এলাকায় বিশেষ পুলিশি টহলদারির আশ্বাস মিলেছে।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারকে গোটা বিষয়টি জানানোর পরেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন দেবাশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা আমার কাছে রাতে এসেছিলেন। আমি পুরো বিষয়টি শুনেছি। পুলিশকেও তা জানিয়েছিলাম সঙ্গে সঙ্গেই। পুলিশ রাত থেকেই এলাকায় রয়েছে।’’

দেবাশিসবাবু এ কথা বললেও স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। তাঁদের অভিযোগ, শুক্রবার সকাল থেকে যখন এলাকায় মুড়ি-মুড়কির মতো ইটপাটকেল, কাচের বোতল ছোড়াছুড়ি চলছে, তখন পুলিশের চিহ্নমাত্র দেখা যায়নি। অনেকেরই অভিযোগ, এ দিন দেবাশিসবাবু নিজের পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, এলাকার গোলমালে নজর দেওয়ার ফুরসত তাঁর ছিল না।

কিছু দিন আগেই পণ্ডিতিয়ার বস্তির এক দল উন্মত্ত যুবক পাশের একটি বহুতল আবাসনে ঢুকে নির্বিচার তাণ্ডব চালানোর পরেও স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন কার্যত তেমনই অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।

পুলিশ সূত্রের খবর, মনোহরপুকুর এলাকার মতিলাল নেহরু রোডে এই ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার রাতেই। স্থানীয় একটি পুজোর ভাসানকে কেন্দ্র করে রাত ১০টা নাগাদ বচসা শুরু হয় সাত নম্বর বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে বাজার বস্তির বাসিন্দাদের। সাত নম্বর বস্তির বাসিন্দা পূর্ণিমা হালদারের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ছেলে বান্টি ওই বিসর্জন দেখতে গেলে বাজার বস্তির কিছু ছেলে তাকে গালাগালি করে। শুরু হয় বচসা। এর পরে বান্টিকে মারা হয় বলে অভিযোগ। পূর্ণিমাদেবীর দাবি, বান্টিকে বাঁচাতে গেলে তাঁর দাদা দীপকেও মারধর করে অন্য বস্তির ছেলেরা।

দুই বস্তির বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, বিসর্জনের সময়ে দুই পক্ষেরই কিছু যুবক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। কোনও বিষয়ে দু’তরফে কথা কাটাকাটি শুরু হলে তা থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সাময়িক ভাবে সেই বচসা থেমে গেলেও শুক্রবার সকাল থেকে আবার উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। পুলিশ জানিয়েছে, বেলা এগারোটা নাগাদ দুই বস্তির বাসিন্দাদের একাংশ জড়ো হন মতিলাল নেহরু রোডের উপরে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে লক্ষ করে ছুড়তে থাকে ইট এবং মদের বোতল। ভাঙা কাচের বোতলের টুকরোয় ভরে যায় গোটা রাস্তা। এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা কার্যত ভয়ে ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন। পরিস্থিতি সামলাতে এলাকায় নামে বিশাল পুলিশবাহিনী। উপস্থিত হন ডিসি (দক্ষিণ-পূর্ব) গৌরব শর্মাও। এই হাতাহাতির সময়ে ছোড়া ইটে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তায় দাঁড়নো একটি অ্যাম্বুল্যান্সও। বোতল ভেঙে আহত হন দু’পক্ষেরই বেশ কিছু মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police slums vandalism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE