Advertisement
১১ মে ২০২৪
Kolkata Metro

মেট্রো যেন বনগাঁ লোকাল, আনন্দবাজার অনলাইন যাত্রীদুর্ভোগের কথা লেখায় কন্ট্রোলে স্বয়ং আধিকারিক

সম্প্রতি বেশ কিছু দিন ধরেই মেট্রো রেলের যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। টাইম টেবিল মানার বালাই নেই দক্ষিণেশ্বর-কবি সুভাষ শাখায়। এ বার আনন্দবাজার অনলাইনকে সুরাহার কথা দিল মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

Disturbance in service of Kolkata Metro creating difficulties for passengers

মেট্রোয় দুর্ভোগ চলছেই। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৩ ১৯:৪২
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদা লিখেছিলেন, ‘যখন আমার ঘুম ভাঙবে, সেটাই আমার সকাল।’ মমতা একটা সময়ে রেলমন্ত্রী ছিলেন। কলকাতা মেট্রোর সম্প্রসারণে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকাও ছিল। এখন তিনি বাংলার শাসক। মেট্রোর প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি তাঁর কোনও সংযোগ নেই। কিন্তু কলকাতা মেট্রোর সাম্প্রতিক চলাচল প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর সেই লাইন যাত্রীদের মনে পড়িয়ে দিচ্ছে— যখন আমার ট্রেন আসবে, সেটাই মেট্রোর টাইম!

বস্তুতপক্ষে, টাইম টেবিল শিকেয় তুলে দিয়ে যখন খুশি মেট্রোর যাতায়াত চলছে দক্ষিণেশ্বর-কবি সুভাষ শাখায়। ফলে যাত্রীদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রথম সমস্যা, নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনো যাচ্ছে না। দ্বিতীয় সমস্যা, সময়ের ট্রেন সময়ে না ছাড়ায় মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ও হচ্ছে। এই সমস্যার কথা শোনার পরে মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র সোমবার বলেছেন, ‘‘আনন্দবাজার অনলাইন লাগাতার এ নিয়ে খবর করছে দেখছি। আমি তাই মঙ্গলবার নিজেই কন্ট্রোল রুমে বসব। কেন এমন হচ্ছে এবং কী ভাবে সমাধন সম্ভব, সেটা ভাল করে খতিয়ে দেখতে হবে।’’

দক্ষিণেশ্বর থেকে নিত্যযাত্রী ছাড়াও প্রতিদিন মন্দির দর্শনে যাওয়া বড় সংখ্যাক মানুষ মেট্রো রেল ব্যবহার করেন। প্রান্তিক স্টেশন হলেও এখানে যাত্রী সংখ্যা বেশ ভালই থাকে। কিন্তু সময়ে ট্রেন না ছাড়ায় অনেক সময়েই দু’টি ট্রেনের যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে উঠতে হচ্ছে একটি ট্রেনে। ওই স্টেশন থেকে মেট্রোর নিত্যযাত্রী সনৎ ভৌমিক যেমন বলেছেন, ‘‘কখন ট্রেন আসবে জানা নেই। যখনই আসুক, তার পরেই ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা প্রতিদিন যাই, নির্দিষ্ট সময়ের ট্রেন ধরি, তাদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। অফিস পৌঁছতেও দেরি হচ্ছে। আর পরের প্রতিটি স্টেশনেই সাধারণের তুলনায় দ্বিগুণ যাত্রী উঠছেন।’’ কালীঘাট থেকে চাঁদনি চক রোজ যাতায়াত করেন নিলোভনা চক্রবর্তী। সোমবারের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘কালীঘাট স্টেশনে ডিসপ্লেতে লেখা ছিল ১২.৫৫-তে আসবে মেট্রো। সেই মেট্রো এসে গেল ১২.৫৩ মিনিটে! অনেকেই ট্রেন মিস্ করলেন। ডিসপ্লেতে যে সময় লেখা থাকছে, মেট্রো হয় তার পরে আসছে। নয়তো বাতিল হয়ে পরের ট্রেনের সময়ে আসছে।’’

দমদম থেকে রোজ সকালে অফিসে আসার জন্য ট্রেন ধরেন অঙ্গীরা চন্দ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দমদম থেকে মেট্রো ধরি। গত কয়েক দিন ধরেই যাতায়াত করতে অসুবিধা হচ্ছে। সময়ের গোলমালের কারণে অফিসে প্রায়ই পৌঁছতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। শনিবার দমদমে পর পর দুটো মেট্রো আগে থেকে কোনও রকম ঘোষণা ছাড়াই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। স্টেশনে থিকথিকে ভিড়। ট্রেন এলেও তাতে আগে থেকেই এত ভিড় যে, অনেকেই উঠতে পারেননি। পর পর একাধিক মেট্রো ছেড়ে দিতে হয়েছে। অনেকে অসহায় ভাবে স্টেশনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রায় প্রতি দিনই এই ধরনের গোলমাল হচ্ছে বিভিন্ন স্টেশনে।’’

দক্ষিণ থেকে আসা শ্রুতি মিশ্রের অভিজ্ঞতাও একই রকম। তিনি বলেন, ‘‘সকাল সকাল অফিস যাওয়ার তাড়া থাকে। কয়েক দিন ধরেই দেখছি মেট্রো লেট করছে। কবি সুভাষ থেকে উঠি। তাই তফাতটা চোখে পড়ে। অফিস টাইমে আগে যে ভিড় হত, মেট্রো লেট হওয়ার ফলে সেই ভিড় আরও বেশি হচ্ছে।’’ অফিস সেরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময়েও একই অভিজ্ঞতা হয় জানিয়ে শ্রুতি আরও বলেন, ‘‘অফিস থেকে ফেরার সময় তো আরও ঝামেলা! এক দিন তো এমন হল, চাঁদনি চক স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। দাঁড়িয়েই রয়েছি! ভিড়ের জন্য উঠতেই পারছি না ট্রেনে। সারা দিনের ক্লান্তির পর কি এত অপেক্ষা করতে ভাল লাগে? পর পর তিনটে মেট্রো ছাড়লাম। চার নম্বরটায় দাঁড়ানোর মতো জায়গা পাওয়া যাবে আন্দাজ করে কোনও রকমে উঠলাম। তার পর যা ভিড়! এসি চললেও গায়ে হাওয়া লাগার উপায় নেই। দরদর করে ঘামছি। আগে মেট্রোয় যাতায়াতের কথা ভেবে স্বস্তি হত। এখন মেট্রোর ভিড় বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

মেট্রো রেল যে সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে, তা অবশ্য পুরোপুরি মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। তবে মঙ্গলবার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিজে কন্ট্রোল রুমে বসার কথা জানানোয় আশা করা যেতে পারে যে, অন্তত সমস্যার কারণ জানা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE