দুর্ঘটনার পরে অনুপবাবু। নিজস্ব চিত্র
দু’টি পা-ই কেটে বাদ দিতে হল অনুপ সামন্তের। মঙ্গলবার প্রায় এক ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের শেষে চিকিৎসকেরা জানালেন, অনুপবাবুর প্রাণ বাঁচাতে পা দু’টি বাদ না দিলে হত না। দু’টি পায়েই পচন ধরে গিয়েছিল।
গত সোমবার মিলেনিয়াম পার্কের সামনে একটি বেপরোয়া মিনিবাসের চাকা অনুপবাবুর পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। তিনি তখন ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছিলেন। তাঁর শরীর থেকে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে থাকে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ অনুপবাবুকে একবালপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্লাস্টিক সার্জন অনুপম গোলাস তাঁর অস্ত্রোপচার করেন। অনুপমবাবুর কথায়, ‘‘যখন ওঁকে আনা হয়, তখন শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। অতিরিক্ত রক্তপাতে রক্তচাপ তলানিতে এসে ঠেকেছিল। কিছুটা উন্নতি হলেও অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক।’’ অনুপবাবু সুস্থ হওয়ার পরে চলাফেরা করতে পারবেন কি না, জিজ্ঞাসা করা হলে অনুপমবাবু বলেন, ‘‘নকল পা দিয়ে তাঁর চলাফেরায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে প্রথম প্রথম অভ্যস্ত হতে একটু অসুবিধা হতে পারে।’’
এ দিন হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, অনুপবাবুর অনেক সহকর্মী এবং তাঁর ছেলে চিত্রমের কলেজের বন্ধুরা এসেছেন। স্ত্রী লেখা সামন্তও বর্ধমান থেকে এসেছেন। চিত্রম জানালেন, প্রথমে তাঁর বাবা ভেঙে পড়লেও এখন অনেকটা সামলে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবা বলছেন আবার ঘুরে দাঁড়াবেন, অফিসে যাবেন। ওঁর মনে এতটা জোর দেখে আমরাও লড়াইয়ের শক্তি পাচ্ছি।’’ তবে তাঁর বাড়ির লোকের যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার দুই অভিযুক্ত ধরা না পড়ায়। মিনিবাসের চালক ও খালাসি ঘটনার পর থেকেই পলাতক। এত ভয়াবহ ঘটনায় অপরাধীরা কেন গা-ঢাকা দিয়ে বেড়াবেন? কেন পুলিশ তাঁদের ধরতে পারবে না? সেই প্রশ্ন করেছেন তাঁরা। তাঁদের ক্ষোভ রয়েছে পরিবহণ দফতর এবং মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের নির্লিপ্ততা নিয়েও।
চিত্রম বলেন, ‘‘প্রথম থেকে পাশে পাচ্ছি শুধু বাবার অফিস পূর্ব রেলের সমবায় ব্যাঙ্কের কর্মীদের। আর কেউ আমাদের সঙ্গে নেই। পরিবহণ দফতর থেকে এক বারের জন্যও কেউ দেখতে আসা দূরে থাক, ফোনও করেননি। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আহতের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। সে সব নিয়েও কেউ তথ্য দিচ্ছেন না। মিনিবাস মালিকদের সংগঠন থেকেও কেউ আসেননি।’’
এ ব্যাপারে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ অনুপবাবু পেয়ে যাবেন।’’ তবে তাঁর বাড়ির লোকের সঙ্গে এখনও কেন যোগাযোগ করা হয়নি, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি। আর মিনিবাস মালিকদের সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, অতীতে এই ধরনের ঘটনায় আহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাঁদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। তাই তাঁরা এড়িয়ে গিয়েছেন। যে মিনিবাসটি অনুপবাবুকে চাপা দেয়, তার টায়ার রিসোলিং করা ছিল বলে খবর। পরিবহণ দফতর স্বীকার করেছে, এখনও কলকাতার রাস্তায় এমন অনেক যানবাহন চলে, যার চাকা রিসোলিং করা। তাদের দাবি, দফতরে লোকবল কম বলে তাদের পক্ষে এটা নজরদারি করা সম্ভব নয়। পুলিশকেই দেখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy