Advertisement
E-Paper

সিঁড়ি বেয়ে ধোঁয়া ধেয়ে আসছে রাক্ষসের মতো, কেঁপে উঠল বুক

শেভিং ক্রিম লাগিয়ে সবে গালে ব্রাশ বোলাতে শুরু করেছি। দুই সাফাইকর্মী অফিস পরিষ্কার করছেন। ঘুরে ঘুরে একটু তদারক করছি আমি। রোজ যেমন করি। আচমকা ময়দানের দিকের জানলার বাইরে ধোঁয়া। কেউ কি তা হলে শুকনো পাতা জড়ো করে আগুন ধরিয়েছে? তারই ধোঁয়া? হবেও বা। পরক্ষণেই মনে হল, আরে, আমি তো চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের ২০তলায়।

সৌরভ দাস

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৪

শেভিং ক্রিম লাগিয়ে সবে গালে ব্রাশ বোলাতে শুরু করেছি। দুই সাফাইকর্মী অফিস পরিষ্কার করছেন। ঘুরে ঘুরে একটু তদারক করছি আমি। রোজ যেমন করি। আচমকা ময়দানের দিকের জানলার বাইরে ধোঁয়া।

কেউ কি তা হলে শুকনো পাতা জড়ো করে আগুন ধরিয়েছে? তারই ধোঁয়া? হবেও বা। পরক্ষণেই মনে হল, আরে, আমি তো চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের ২০তলায়। নীচে কিছু পাতা পোড়ালে ধোঁয়ার কুণ্ডলী তো এত উপরে উঠতে পারে না! তা হলে?

সৌরভ দাসের ছবিটি তুলেছেন সুনন্দ ঘোষ।

জানলায় উঁকি দিয়ে দেখি, ধোঁয়া বেরোচ্ছে এই বাড়িরই নীচের দিকের কোনও একটা তলা থেকে।

আমার বাড়ি বাটানগরের উলুডাঙায়। বাড়িতে আছেন মা আর স্ত্রী। রোজ ভোরে চলে আসি। এই বহুতলেরই ২০তলায় মহানদী কোল্ডফিল্ডসের অফিসে রক্ষীর কাজ করি। যদিও আমি ঠিকাদারের কর্মী। সকালে সাড়ে ৭টার মধ্যে অফিসে ঢুকতে হয়। প্রায় একই সময়ে পৌঁছে যান দুই সাফাইকর্মী, পরেশ ঘড়ুই আর রাজেশ দাস। অফিসের চাবি থাকে আমার কাছে। আমি দরজা খুললে ওঁদের কাজ শুরু হয়। আর সেটাই দেখভাল করতে করতে দাড়ি কেটে ফেলি। আজও সেই কাজটাই করছিলাম। তখনই বিপত্তি।

ধোঁয়া দেখে ফোন করলাম নীচে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে জানানো হল, ১৬তলায় আগুন লেগেছে। বলা হল, ‘ভিআইপি লিফ্ট দিয়ে নেমে আসুন।’ ফোনে কথা বলতে বলতেই জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি, ধোঁয়া বাড়ছে। পরেশদা আর রাজেশদা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছেন। পাশেই অন্য একটি অফিসে আমার মতো সক্কাল সক্কাল চলে আসেন রাম সিংহ। বয়স্ক মানুষ, পিওনের কাজ করেন। তাঁর অফিসের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকলাম, “অফিসে আগুন লেগেছে। এক মুহূর্তও দেরি না-করে ভিআইপি লিফ্ট দিয়ে নেমে যেতে হবে।”

ভিআইপি লিফ্টের দিকে এগোতেই দেখি, সামনের করিডর ধোঁয়ায় অন্ধকার। এ বার একটু ভয় পেলাম। আগুন কি তা হলে উপরে উঠছে? লিফ্টের কাছে পৌঁছনো গেল না। অফিসেই ফিরে এলাম। কাচের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ময়দানের দিকে জানলাগুলো খুলে দিলাম। তত ক্ষণে বাইরে থেকে ধোঁয়া ঢোকা কমে গিয়েছে। কিন্তু ভিতর থেকে ধোঁয়া ঢুকছে কাচের দরজার ফাঁক দিয়ে। দেখতে দেখতে গলগল করে ধোঁয়া ঢুকে অফিসের ভিতরটাও অন্ধকার হয়ে গেল। মাথার উপরের পাখাগুলো ঘুরছিল। কয়েকটা দাঁড় করানো পাখা ছিল। তড়িঘড়ি সেগুলোকে জানলার কাছে নিয়ে গিয়ে বাইরের দিকে মুখ করে চালিয়ে দিলাম। যাতে ঘরের ধোঁয়া বাইরে বেরিয়ে যায়।

এ-সব কাজের ফাঁকে ফাঁকে ক্রমাগত জানলা দিয়ে গামছা নেড়ে নীচের লোকেদের নজর কাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। ভয় হচ্ছিল, ধোঁয়ার পিছনে পিছনে আগুনও না হাজির হয়! নীচে নিরাপত্তারক্ষীদের ক্রমাগত ফোন করছি। ফোনেই শুনতে পাচ্ছি, নীচে বেশ শোরগোল। পরেশদা বয়স্ক মানুষ। ভয় পেয়ে কেঁদেই ফেললেন। তাঁকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করি।

বারবার জানলা দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। এক সময় দেখলাম, দমকলের লোকেরা সিঁড়ি নিয়ে উঠে আসছেন। যন্ত্রের মতো উঠে আসছে গাড়িতে লাগানো সিঁড়ি। কিন্তু ২০তলায় পৌঁছনোর আগেই সিঁড়ি থেমে গেল। কেঁপে উঠল বুকটা! কারণ অফিসের সিঁড়ি দিয়ে ধোঁয়া ধেয়ে আসছে রাক্ষসের মতো। সে-দিক দিয়ে নামা কঠিন হবে বলেই মনে হচ্ছে। দমকলের যন্ত্র-সিঁড়িও তো মাঝপথে থেমে গেল! এ বার কী হবে? এ ভাবে কত ক্ষণ ছিলাম, ঠিক বলতে পারব না। ঘণ্টাখানেক তো হবেই। বেশ কিছু ক্ষণ পরে আমাদের অফিসের কাচের দরজা ঠেলে কয়েক জন দমকলকর্মী ভিতরে ঢুকলেন। অফিসের সিঁড়ি দিয়েই নীচে নামিয়ে আনলেন আমাদের। ধোঁয়া পেরিয়ে আসতে গিয়ে প্রচণ্ড কাশছিলাম। নীচে নামার পরেও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হল। বাড়িতে ফোন করে জানালাম, “বড় ফাঁড়া কাটল।”

Fire at chatterjee international fire brigade chowringhee saurabh das sourabh das kolkata news online kolkata news latest news Downstairs Trembled chest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy