জলের দাবি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
বেলা তখন আড়াইটে। কাঠ ফাটা রোদ। রাস্তার মোড়ে বালতি হাতে দাঁড়িয়ে কয়েকশো মহিলা ও শিশু। অপেক্ষা, কতক্ষণে জলের গাড়ি আসবে। মিনিট দশেক পরে একটা জলের গাড়ি দেখেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেল। বালতি নিয়ে সকলে ছুটলেন গাড়ির দিকে। কিন্তু গাড়ি এল কই? ততক্ষণে সেই গাড়ি ঢুকে পড়েছে পাশের গলিতে। ফলে ফের অপেক্ষা।
জলের হাহাকার ঠিক কোথায় পৌঁছলে সাধারণ মানুষের এমন অবস্থা হয়, সোমবার দুপুরে উত্তর হাওড়ার জেলিয়া পাড়া লেনের এই দৃশ্য তা প্রমাণ করে। অভিযোগ, গত ৭২ ঘণ্টা ধরে পুরসভার সরবরাহ করা জল না পেয়ে এমনই অবস্থা গোটা উত্তর হাওড়ায়। পরিস্থিতি এমনই যে, জলের দাবিতে পথে নামতে হয়েছে বাসিন্দাদের। আশুতোষ মুখার্জি লেন, জে এন মুখার্জি রোড, জেলিয়া পাড়া লেন-সহ সালকিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ-বিক্ষোভ করেন বাসিন্দারা। ছুটি দিতে হয় স্কুলগুলিকে।
এ দিন জল না পেয়ে পুরকর্তাদের ঘেরাও করেও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। জেলিয়া পাড়ায় ট্যাঙ্কার নিয়ে জল দিতে এসে বিক্ষোভের মুখে পড়েন মেয়র পারিষদ গৌতম চৌধুরী। স্থানীয়দের অভিযোগ, শনি ও রবিবার পুরসভা কোনও জলের ট্যাঙ্কার পাঠায়নি। ফলে বেশি দামে জল কিনে খেতে হয়েছে তাঁদের। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খুশবু সাউ বলেন, ‘‘দু’দিন পুরসভার কারওর দেখা মেলেনি। আজ জলের গাড়ি বড় রাস্তার ধারের বাড়িগুলিকে দিলেও আমাদের গলিতে ঢোকেনি।’’ বাসিন্দারা এমন বললেও হাওড়া মেয়র রথীন চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘কাউন্সিলরেরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সর্বত্র জলের গাড়ি পাঠিয়েছেন। তাঁরা নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।’’
শনিবার সকালে হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ের ভিতর দিয়ে যাওয়া পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের ১২০০ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের মূল পাইপলাইনের একটি জায়গায় ১৫ ফুট মাটি ধ্বসে যায়। ফলে দু’টি পাইপের মাঝের জোড়া অংশ ফেটে একটি অন্যটি থেকে সরে যায়। পুরসভা সূত্রে খবর, শনিবার থেকেই পুরসভার তালিকাভুক্ত এক ঠিকাদারকে দিয়ে মেরামতি শুরু হয়। কাজে লাগেন পুর-ইঞ্জিনিয়ারেরাও। পুরসভার আশ্বাস ছিল, রবিবার জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। কিন্তু তা হয়নি।
পুরসভা সূত্রে খবর, স্থায়ী ভাবে ফাটলটি আটকাতে চারপাশে একটি লোহার পাত দিয়ে ঘেরার পরিকল্পনা হয়। সেই পাত আসে রবিবার বেশি রাতে। তা লাগিয়ে পাইপের তলায় সিমেন্টের ঢালাই করে কাজ শেষ করতে সোমবার বিকেল গড়িয়ে যায়। পুরসভার দাবি, এ দিন সন্ধ্যাতেই জল সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে পাইপে হাওয়া ঢোকায় জল সর্বত্র যায়নি। মঙ্গলবার সকলেই জল পাবেন।
কিন্তু পাইপলাইন মেরামতে এত সময় লাগার কারণ কী? মেয়র বলেন, ‘‘প্রায় ১৫ ফুট মাটি ধসে গিয়ে যে জায়গায় পাইপ ফেটে গিয়েছিল সেখানে পাকাপোক্ত ভাবে মেরামত করতে সময় লাগবেই। সেটুকুই লেগেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy