Advertisement
E-Paper

কলঙ্কমুক্ত ওঁদের সামনে এখন নাট্যমঞ্চের হাতছানি 

নাটকের নাম ‘বেওয়ারিশ’! বেহালার শরৎ সদনে ২ অগস্ট প্রথম শোয়ের অপেক্ষা করছেন প্রবীণ অজয়দা, পার্থ, প্রসেনজিৎ প্রমুখ। জীবনে আগে কখনও মঞ্চে ওঠেনইনি যাঁরা।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৭
প্রস্তুতি: চলছে নাটকের মহড়া। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

প্রস্তুতি: চলছে নাটকের মহড়া। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

মঞ্চের উপরে তাঁরা না কি মৃতদেহের ভূমিকায়। যে মৃতেরা নড়েচড়ে, গান গায়, ছোট ছোট আশা-প্রেম আর্তিতে লুটোপুটি খেয়ে থাকে।

জীবন বা সমাজও তাঁদের কার্যত ‘মৃতে’র তকমাই সেঁটে দিয়েছিল এত দিন। মধ্যজীবন কিংবা কৈশোরপ্রান্তেই ভয়াবহ মাদকের ফাঁদে জীবনের মূল স্রোত থেকে ছিটকে ধ্বংসই অনিবার্য বলে ধরে নিয়েছিলেন তাঁরা। বিভিন্ন বয়সের একদা মাদকাসক্ত কুশীলবেদের সেই দল এ বার মঞ্চে নাটকের আঙ্গিকে মুক্তির পথ খুঁজছে।

নাটকের নাম ‘বেওয়ারিশ’! বেহালার শরৎ সদনে ২ অগস্ট প্রথম শোয়ের অপেক্ষা করছেন প্রবীণ অজয়দা, পার্থ, প্রসেনজিৎ প্রমুখ। জীবনে আগে কখনও মঞ্চে ওঠেনইনি যাঁরা। এই চেষ্টাটুকুর নেপথ্যেও জীবনের চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী দু’টি বর্ণময় চরিত্র।

একদা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি, ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’র বাল্মীকি থেকে রুপোলি পর্দার চেনা মুখ নাইজেল আকারাকে তো অনেকেই চেনেন। বেহালায় মাদকাসক্তদের একটি হোমের কর্ণধার অভিজিৎ রায় নিজেও স্কুলের উঁচু ক্লাস থেকে যুবা বয়সের অনেকটাই গাঁজা-ব্রাউন সুগারের খপ্পরে ছটফট করেছেন। গত দশ বছর ধরে মাদকাসক্তদের মূল স্রোতে ফেরানোর যজ্ঞে তিনি মশগুল। গত জানুয়ারিতে নাইজেলের নাট্যদলের প্রযোজনায় ‘ঝরা ফুলের রূপকথা’ বলে একটি নাটক দেখতে গিয়েই মাদকাসক্তদের দিয়ে থিয়েটার করানোর ভূত চাপে অভিজিৎবাবুর মাথায়। ওই নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন কয়েক জন যৌনকর্মী। ‘‘আমরা তো সমাজের প্রান্তিক, বা তথাকথিত ‘কলঙ্কিত’দের সঙ্গে নিয়েই থিয়েটারটা করতে চাই!’’— বলছিলেন নাইজেল। এর পরে কয়েক মাসের নাট্য কর্মশালা। একেবারে আনাড়িদের মঞ্চে হাঁটাচলা রপ্ত করানো। এবং ক্রমশ পূর্ণাঙ্গ নাট্যনির্মাণের দিকে পদক্ষেপ। নাটকটির পরিচালক অভিজিৎ অনুকামী ‘থিয়েটার থেরাপি’ বা ‘সাইকো থিয়েটার’ নিয়ে পুণেয় তালিম নিয়েছেন। ‘‘নেশা ও তার অভিঘাত কাটিয়ে যাঁরা আর পাঁচ জনের মতো জীবনে ফিরতে চাইছেন, নাটকের মহড়া-অভিনয় তাঁদের কাছে চমৎকার দাওয়াই।’’— বলছিলেন ‘বেওয়ারিশ’-এর পরিচালক।

অভিনেতাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তরুণ পড়ুয়া থেকে কম বয়সে আর্ট কলেজ ছুট প্রতিভাবান কিন্তু তথাকথিত অসফল শিল্পী, রয়েছেন অনেকেই। কেউ ধোঁয়ায় বা ইঞ্জেকশনে ব্রাউন সুগার-হিরোইন নিতেন। কারও অভ্যাস দিনে সাত-আটবার গঞ্জিকাসেবন। পাগলের মতো দিনভর কাছে-দূরের নিষিদ্ধ ঠেক থেকে ‘মাদক’ জোগাড় করাই ছিল কারও রোজনামচা। স্নাতক স্তরে বাণিজ্যের পড়ুয়া এক সদ্য তরুণ বলছিলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকের সময়েও নেশায় বুঁদ হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছি। বিজ়নেস স্টাডির পেপার লিখতে বসে এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে ছিলাম। এখন শুধুই সামনে তাকাতে চাই।’’

নাইজেল ও অভিজিৎবাবুর ভাবনা, ভবিষ্যতে স্কুলকলেজে ছোট নাটিকায় মাদক-বিরোধী প্রচারের মুখ হতে পারেন এই অভিনেতারা। নেশার খপ্পরে পড়া জনা ১৫ কুশীলবের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে থাকা অভিনেতারাও মঞ্চে থাকছেন। তাঁদেরই এক জন জিনিয়া নন্দীর কথায়, ‘‘নেশার খপ্পরে পড়া মানুষদের নিয়ে আমার ধারণা বদলে দিয়েছে ওঁদের ব্যবহার। মনে হয়, আমরা যেন একই পরিবারের!’’ মর্গের মৃতদেহের কাহিনি নিয়ে বাস্তব-কল্পনার মিশেলে এই নাটকটির মধ্যে রয়েছে শ্লেষধর্মী রাজনৈতিক প্রহসন। নাগাড়ে মহড়ায় ব্যস্ত চরিত্রগুলির জন্যও ‘বেওয়ারিশ’ তকমাটা ঘোচানোই এখন ধ্যানজ্ঞান।

Drug Addiction Theatre Drama
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy