Advertisement
০১ মে ২০২৪
Medical College and Hospital

শিক্ষক-ডাক্তার নেই, কিডনির চিকিৎসা ‘বন্ধ’ মেডিক্যালে!

এক জন মাত্র শিক্ষক-চিকিৎসক থাকায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগে ডিএম কোর্স নেই। তাই হাসপাতালে ওই বিভাগে কোনও এসআর নেই।

A Photograph of Kolkata Medical College

চিকিৎসকের অভাবে বুধবার বন্ধ থাকবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজির বহির্বিভাগ। ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:২৩
Share: Save:

শিবরাত্রির সলতে হয়ে ছিলেন এক জন শিক্ষক-চিকিৎসক। তিনিও বদলি হয়েছেন। অগত্যা চিকিৎসকের অভাবে আজ, বুধবার বন্ধ থাকবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজির বহির্বিভাগ। পাশাপাশি, কিডনির সমস্যা নিয়ে যাঁরা ভর্তি রয়েছেন সেখানে, তাঁদের চিকিৎসা কী ভাবে হবে, সেই সংশয় থেকেই গিয়েছে।

সম্প্রতি এসএসকেএম হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়েছে। সেই জায়গায় পাঠানো হয়েছে কলকাতা মেডিক্যালের নেফ্রোলজির শিক্ষক-চিকিৎসক সঞ্জয় দাশগুপ্তকে। ফলে কলকাতা মেডিক্যালে নেফ্রোলজি বিভাগে এখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কেউ নেই। ওই বিভাগে এক জন এমবিবিএস পাশ আরএমও রয়েছেন মাত্র। তাঁকে দিয়ে সুপার স্পেশ্যালিটি বিভাগের বহির্বিভাগ চালানো সম্ভব নয়। অগত্যা সপ্তাহে এক দিন চলা বহির্বিভাগও আজ থেকে আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

অথচ তথ্য বলছে, দেশে বাড়ছে কিডনির অসুখ। এমন পরিস্থিতিতে একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগের পরিষেবা বন্ধ থাকে কী ভাবে? চিকিৎসক বদলি করার সময়ে কেন বাস্তব চিত্র দেখা হয় না? উঠছে এমন নানা প্রশ্ন। বিষয়টি জানতে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সোমবারই বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। এসএসকেএমের কাছেও সিনিয়র রেসিডেন্ট (এসআর) চিকিৎসক চাওয়া হয়েছে। তাতে অন্তত পরিষেবা চালানো যাবে। আশা করছি, শীঘ্রই সমস্যা মিটবে।’’

জানা যাচ্ছে, এক জন মাত্র শিক্ষক-চিকিৎসক থাকায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগে ডিএম কোর্স নেই। তাই হাসপাতালে ওই বিভাগে কোনও এসআর নেই। শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলির মধ্যে পিজিতে ছ’জন এবং এন আর এসে তিন জন এসআর রয়েছেন। কলকাতা মেডিক্যালের সিনিয়র চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘এ বার দয়া করে কেউ চিকিৎসক ধার দিলে, তবেই ফের পরিষেবা মিলবে।’’ সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যালের মেডিসিন, বক্ষরোগ, কার্ডিয়োলজি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার এবং স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে থাকা রোগীদের মধ্যে যাঁরা কিডনির অসুখে আক্রান্ত, তাঁদের চিকিৎসার জন্য ‘রেফার’ নোট পাঠানো হত সঞ্জয়ের কাছে। তিনিই তাঁদের চিকিৎসা করতেন। দৈনিক ৩০-৩৫টি রেফার কেস যেত ওই চিকিৎসকের কাছে। আবার ডায়ালিসিস ইউনিটও ওই বিভাগের নজরদারিতে ছিল।

‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার শাস্তি হিসেবে যখন শিক্ষক-চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরীকে উত্তরবঙ্গে বদলি করা হল, তখনই আমরা জানতাম এ রকম হবে। কুমিরছানা দেখিয়ে ডাক্তারি পড়া, নেফ্রোলজির মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের পরিষেবা চলতে পারে? এ তো এক দিক ঢাকতে গিয়ে অন্য দিক অনাবৃত হয়ে যাচ্ছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষের কিডনির চিকিৎসাও খাদের কিনারায়। শিরদাঁড়া বেচে স্বাস্থ্য প্রশাসকেরা পারবেন তো তাঁদের দায় এড়াতে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE