—প্রতীকী চিত্র।
মোচা কিংবা ডুমুরের ঝালে রুচি নেই। মন পড়ে থাকে পিৎজা, বার্গারে। কয়েক পা হাঁটলেই মনপসন্দ ফুড চেনের খাবার ছেড়ে বাড়ির রান্নায় স্বাদ পান না। এমনই সব কারণে রক্তাল্পতায় ভুগছেন অধিকাংশ শহুরে গর্ভবতী!
সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের একটি রিপোর্ট বলছে, গ্রামের তুলনায় শহুরে গর্ভবতী মহিলারা বেশি রক্তাল্পতায় ভুগছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫৪.৩ শতাংশ শহুরে গর্ভবতী মহিলা রক্তাল্পতায় ভোগেন। যা গ্রামীণ এলাকার গর্ভবতী মহিলাদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, গ্রামে কোনও মহিলা গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই আশা কর্মীরা নিয়মিত সন্তানসম্ভবার উপরে নজর রাখেন। কী ধরনের খাবার দরকার, তা নিয়েও সচেতন করা হয় এমন মহিলাদের। কিন্তু শহুরে গর্ভবতী মেয়েরা এই ধরনের ধারাবাহিক নজরদারির মধ্যে থাকেন না। পুষ্টি নিয়ে ধারণাও অনেকের মধ্যে নেই। তার জেরেই বাড়ছে সমস্যা।
গর্ভবতী ও শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তা জানান, অধিকাংশ শহুরে মেয়ে অতিরিক্ত তেলমশলার খাবারে অভ্যস্থ। স্বাস্থ্যের পক্ষে যা খুবই ক্ষতিকর। স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, অধিকাংশ শহুরে মহিলাদের মধ্যে সুষম খাদ্যের ধারণা নেই। অর্থাৎ, মাছ, মাংস, ডিম পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলেও গর্ভাবস্থায় খাবারের ভারসাম্য কী ভাবে রাখতে, তা অনেকেই জানেন না। সেটাই রক্তাল্পতার মতো সমস্যা তৈরি করছে। নিয়মিত মাছ, মাংসের পাশাপাশি কলা, খেজুর খাওয়াও যে জরুরি, সে বিষয়ে সচেতন নয় অনেকেই।
চিকিৎসকেরা জানান, গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা ঠেকাতে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু একই সময়ে দু’টো খাওয়া ঠিক নয়। শহরের ব্যস্ত জীবনযাপনে অনেক সন্তানসম্ভবাই একসঙ্গে দু’টো ওষুধ খান। যার জেরে সমস্যা তৈরি হয়।
স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, শহুরে মহিলাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকের গর্ভাবস্থাতেও ডায়েট করার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক নিয়মেই দশ থেকে পনেরো কেজি ওজন বাড়ে। স্থূলতার ভয়ে অনেকে ঠিকমতো না খাওয়ায় রক্তাল্পতার সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুষম খাবার সম্পর্কে ধারণা নেই অধিকাংশ শহুরে মেয়ের। কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা বমির উপসর্গ দেখা দেওয়ার ভয়ে আয়রন ট্যাবলেটও খান না অনেকে। তাই রক্তাল্পতার মতো সমস্যা বেশি।’’
বার্গার কিংবা পিৎজায় গর্ভবতীর উপকার নেই। ডুমুর, পালং শাক, মোচার মতো খাবার রোজের মেনুতে থাকা দরকার। কিন্তু অধিকাংশ শহুরে মহিলাই এ সব খেতে চান না। যার জেরে রক্তাল্পতার সমস্যা শহরে বেশি বলে মনে করছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক স্মিতা গুটগুটিয়া।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, শহুরে গর্ভবতীর তালিকায় উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলাদের পাশাপাশি বস্তি এলাকার দরিদ্র মহিলারাও রয়েছেন। ফলে একাংশের যেমন অস্বাস্থ্যকর খাবারের
জেরে রক্তাল্পতার সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আর এক অংশে পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকাও সঙ্কটের কারণ। অজয়বাবু জানান, গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে আশা কর্মীরা ধারাবাহিক নজরদারি চালান। গর্ভবতী মেয়েরা আয়রন ওষুধ খাচ্ছেন কি না, পর্যবেক্ষণ করেন। শহরে সেটা অনেক সময়ে হয় না। গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য নিয়ে যে সরকারি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো রয়েছে, গ্রামের মহিলারা সে সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন। অজয়বাবুর কথায়, ‘‘শহরে গর্ভবতী মহিলাদের উপরে ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy