যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিইএসসি-র বজবজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে হঠাৎই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে কার্যত বিপর্যয় নেমে আসে কলকাতা জুড়ে। বজবজের ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার সর্বত্র বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে পড়ে মেট্রো রেল। অসুবিধায় পড়েন অফিস-যাত্রীরা। ভোগান্তি হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদেরও। সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে এই ঘটনার পরে জরুরিকালীন ভিত্তিতে রাজ্যের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেন সিইএসসি-র কর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ফের স্বাভাবিক হয়।
এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন দুপুরে নবান্নে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়-সহ রাজ্য এবং সিইএসসি-র বিদ্যুৎ কর্তাদের জরুরি বৈঠকে ডাকেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট জানান, পরীক্ষার সময়ে কোনও ভাবেই যাতে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মতো ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কেন এমনটা ঘটল, মুখ্যমন্ত্রী সে বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্টও নেন সিইএসসি-র কর্তাদের কাছ থেকে। বিদ্যুৎ পরিষেবায় যাতে কোনও ভাবেই বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য তিনি রাজ্য এবং সিইএসসি-র
কর্তাদের সব সময়ে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বজবজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হল সিইএসসি-র সব থেকে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ২৫০ মেগাওয়াট করে তিনটি ইউনিট থেকে এখানে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এ ছাড়াও সংস্থার মেটিয়াবুরুজ ও টিটাগড়ে আরও দু’টি ছোট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সিইএসসি কর্তৃপক্ষ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বজবজের ইউনিটগুলি ঠিকই চলছিল। যে সময়ে ঘটনাটি ঘটে, তখন কলকাতা-সহ আশপাশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১০০ মেগাওয়াটের মতো। বজবজ থেকে ৭০০ মেগাওয়াটের পাশাপাশি তাদের হলদিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাকি বিদ্যুৎ নিয়ে চাহিদা মিটিয়ে দেওয়া যাচ্ছিল। সংস্থার দাবি, ইউনিটগুলিতে কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ হয়নি। সংবহন ব্যবস্থায় কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়াতেই ইউনিটগুলির সুরক্ষা বলয় (প্রোটেকশন সিস্টেম) উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
সংস্থার এক কর্তার যুক্তি, সরবরাহ লাইনে হঠাৎ ৭০০ মেগাওয়াট ঘাটতি হয়ে যাওয়ায় পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে যায়। তবে তার সাত মিনিট পর থেকেই ধাপে ধাপে সাড়ে ১০টার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে দাবি ওই কর্তার। বজবজে ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, তদন্ত করে দেখছে সিইএসসি। সন্ধ্যার পরে সেখানকার তিনটি ইউনিট ফের চালু হয় বলে সংস্থা সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: ঘুটঘুটে সুড়ঙ্গে আটকে মেট্রো, আতঙ্কে যাত্রীরা
বিপর্যয়ের সময়ে কী ভাবে মেটানো হল ঘাটতি?
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিয়েই এ দিনের সমস্যা মেটে। অল্প সময়ে ৭০০ মেগাওয়াট ঘাটতি মেটানো বেশ কঠিন ব্যাপার বলেই জানাচ্ছেন বিদ্যুৎ-কর্তারা। সূত্রের খবর, এ দিন মূলত ‘ভেল্কি’ দেখিয়েছে ৯০০ মেগাওয়াটের পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ বিদ্যুৎ প্রকল্পই। বিদ্যুৎ ভবনের নির্দেশ পেয়ে পুরুলিয়ার উৎপাদন দ্রুত বাড়ানো হয়। রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির বিদ্যুতের পাশাপাশি পুরুলিয়া থেকে সব থেকে বেশি বিদ্যুৎ নিয়ে এসে সিইএসসি-কে দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, রাজ্যের কাছ থেকে সিইএসসি ৭০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ নিয়েছে। বাকিটা তারা হলদিয়া থেকে নিয়ে এসেই কলকাতার চাহিদা মিটিয়েছে। সন্ধ্যার দিকে সিইএসসি ৩৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ নেয়।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, এ দিন বিপর্যয়ের সময়ে সিইএসসি তাদের কাছ থেকে যা বিদ্যুৎ চেয়েছে, তা-ই দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও যে কোনও প্রয়োজনে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন আরও সতর্ক থাকতে হবে, আমরা সেই চেষ্টাই করব।’’ বিপদের সময়ে রাজ্যের সহযোগিতার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সিইএসসি কর্তৃপক্ষ। রাজ্য প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, সিইএসসিও খুব দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে।
চলতি সপ্তাহেই সিইএসসি জানিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে যাতে কোনও রকম বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য তারা সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু তার পরেও কেন এমন ঘটল, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সিইএসসি-র এক কর্তা জানান, বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থায় তারা দেশের অন্যতম সেরা সংস্থা। তবে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি যে কোনও সময়ে হতে পারে। এ দিন সেই ঘটনাই ঘটেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy