Advertisement
E-Paper

শব্দতাণ্ডবে ‘না’ বলার অধিকার কেন থাকবে না

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওই রিপোর্টই দেখিয়েছিল, কালীপুজোর সময়ে কী ভাবে শব্দদূষণ ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে শহরে। চলতি বছরে বাজি ফাটানোর জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে দিলেও তার দাপট দিনভর কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৭

সকলেই জানতেন, শব্দবাজি ফাটবে। তা-ও নিয়ন্ত্রিত ভাবে, স্টুডিয়োর মধ্যে। অতর্কিত কোনও ঘটনা নয়। কিন্তু তার পরেও দেখা গিয়েছিল, শব্দবাজি ফাটানো মাত্রই সকলে চমকে উঠছেন! আসন্ন কালীপুজোর আগে শহরের শব্দদূষণ নিয়ে বলতে গিয়ে তিন বছর আগে সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের (এসআরএফটিআই) অ্যাকুস্টিক ল্যাবরেটরিতে করা এই পরীক্ষার কথাই উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওই রিপোর্টই দেখিয়েছিল, কালীপুজোর সময়ে কী ভাবে শব্দদূষণ ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে শহরে। চলতি বছরে বাজি ফাটানোর জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে দিলেও তার দাপট দিনভর কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।

প্রসঙ্গত, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে ওই পরীক্ষা করার জন্য ২০১৫ সালে আট সদস্যের দল গঠন করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। একটি মামলার প্রেক্ষিতে করা সেই রিপোর্ট পর্ষদে জমাও পড়েছিল। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শব্দবাজি কী ভাবে মানুষের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার উপরে প্রভাব ফেলে তা ঠিক করার জন্য ওই পরীক্ষাই ছিল প্রথম। তার আগে পর্যন্ত কালীপুজোর সময়ে শব্দবাজির তুমুল আওয়াজ শরীরের উপরে কী প্রভাব ফেলে, তার প্রামাণ্য তথ্য ছিল না।

বিশেষজ্ঞ দলের তরফে শব্দবাজির শব্দ রেকর্ড করে এসআরএফটিআই-এর পরীক্ষাগারে চালানো হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, রেকর্ড করা ওই আওয়াজ চালানো হবে জানা সত্ত্বেও প্রতি মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কী ভাবে চমকে উঠেছিলেন। এসআরএফটিআইয়ের অ্যাকুস্টিক ল্যাবরেটরিতে ওই পরীক্ষা করেছিলেন ‘সাউন্ড রেকর্ডিং অ্যান্ড ডিজাইন’ বিভাগের প্রধান দেবাশিস ঘোষাল। তিনি বলেন, ‘‘জানা সত্ত্বেও সকলে কী ভাবে ক্রমাগত শব্দবাজির আওয়াজে চমকে উঠছেন, সেটা ভিডিয়ো করে আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে দিয়েছিলাম। এখন তো রাস্তাঘাটে অতর্কিতে শব্দবাজির তীব্র আওয়াজ শুনতে হয় সবাইকে। সেটা কেন হবে? শব্দ-তাণ্ডবে না বলার অধিকার কেন থাকবে না?’’

শব্দদূষণ নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা জানাচ্ছেন, গত তিন বছরে অন্য শহরের সঙ্গে কলকাতায় শব্দদূষণের পার্থক্য আছে। কলকাতার মতো শহরে যেখানে আবাসনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, সেখানে শব্দবাজির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ার জায়গা থাকে না। ফলে তার প্রতিধ্বনি শ্রবণশক্তির উপরে প্রভাব ফেলে। প্রসঙ্গত, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে ওই বিশেষজ্ঞ দলের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল ইএনটি চিকিৎসক দুলালচন্দ্র বসুকে। দুলালবাবু বলেন, ‘‘শব্দবাজি সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত পরীক্ষার পাশাপাশি শরীরের উপরে তার কী প্রভাব পড়ে, সেই পরীক্ষাও করা হয়েছিল। না হলে শব্দবাজি যে ক্ষতিকর, তা প্রমাণ করা যেত না।’’ তাঁর বক্তব্য, এমনিতেই শহরে শব্দদূষণ বাড়ছে। বিশেষত কালীপুজো ও দীপাবলির সময়ে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যাও। আর এই শব্দ ছড়িয়ে পড়ার কোনও জায়গা নেই।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, তিন বছর আগে ওই পরীক্ষার উপরে ভিত্তি করেই রাজ্যে শব্দবাজির মাত্রা ৯০ ডেসিবেলে বাঁধা সম্ভব হয়েছিল। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই পরীক্ষা শুধু সে বছরই হয়েছিল। কিন্তু সেটাই হয়েছিল ‘মডেল’। শব্দবাজি কতটা ক্ষতিকর, সেটা হাতেকলমে প্রমাণ করা গিয়েছিল।’’

তবে গবেষকেরা এ-ও জানাচ্ছেন, শুধু একটি নির্দিষ্ট সময়ের উপরে ভিত্তি করে নয়, দীর্ঘ সময় ধরে এই পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ের উপরে করা যে কোনও পরীক্ষাই কোনও ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে শুধু আভাস দিতে পারে। কিন্তু সার্বিক চিত্র পেতে দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা। দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘এ ধরনের পরীক্ষা আরও হওয়া প্রয়োজন। সারা বিশ্বে এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। এই কাজ যত হবে, ততই শব্দবাজি কতটা ক্ষতিকর, তার প্রামাণ্য তথ্য হাতে থাকবে। আবার কালীপুজো ও দীপাবলি আসছে, সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে।’’

Kali Puja Sound pollution Fire Cracker
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy