Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, জখম ৩

অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর জখম হলেন তিন জন। 

অকুস্থল: ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে চলত ওই কারখানা। নিজস্ব চিত্র

অকুস্থল: ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে চলত ওই কারখানা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০১:৩১
Share: Save:

অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর জখম হলেন তিন জন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার দুপুরে মহেশতলা থানার বলরামপুরের পুঁটখালি এলাকায় পুকুরের পাশের ওই কারখানায় বিকট শব্দ করে বিস্ফোরণ ঘটে। জখম হন তিন জন। তাঁদের মধ্যে এক জন জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে জখমদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তদন্তকারীরা জানান, মাস পাঁচেক আগে ওই এলাকার বাসিন্দা পালান নস্করের বাড়িতে তাঁর জামাই রমেন নস্কর ওই বাজি কারখানা চালু করেছিলেন। এ দিন দুপুরে প্রায় ছ’টি ড্রামে বারুদ মজুত ছিল। ওই বারুদ মেশানোর সময়েই আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে পুলিশ। শাসক দলের কাউন্সিলরের বাড়ি লাগোয়া অবৈধ বাজি কারখানার এই ঘটনায় রমেন নস্করকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের কর্তারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পরে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা সাদা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বাড়িতে কাচের জানলা ভেঙে গিয়েছে। মহেশতলা পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেখা নস্কর অবশ্য প্রতিবেশীর অবৈধ বাজি কারখানার বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলেই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে একটি বড় জলা ছিল। আর জলার পাশে ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে কবে থেকে ওই বাজির কারখানা চালু করা হয়েছিল, তা-ই আমি জানতাম না।’’ তবে স্থানীয়েরা জানান, ওই এলাকায় জলার ধারে ছোট ছোট বাজির কারখানা রয়েছে। সেখানে তেমন কোনও নজরদারি নেই বলেই বক্তব্য তাঁদের। ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের নিজের বাজি কারখানা রয়েছে। নিজের সেই কারখানার বিষয়ে রেখা বলেন, ‘‘আমার কারখানার লাইসেন্স রয়েছে।’’ কিন্তু এলাকার অবৈধ বাজি কারখানার বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে রেখা কোনও মন্তব্য করেননি। মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস বলেন, ‘‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে ঠিক পদক্ষেপ করুক।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রমেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। সম্প্রতি শ্বশুরবাড়িতে বাজি কারখানা চালু করেছিলেন তিনি। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেই বাজি তৈরির কারিগরদের নিয়ে এসেছিলেন রমেন। ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের সুপার সেভাঙ্গন মরুগান বলেন, ‘‘ওই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে তিন জন গুরুতর জখম হয়েছেন। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কারখানাটির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’

তদন্তকারীরা জানান, বিস্ফোরণের পরে মাত্র এক জন কারিগর পুকুরে ঝাঁপ দিতে পেরেছিলেন। তাঁর নাম অনুপ দলুই। গুরুতর জখম অবস্থায় নিমাই বর্মণ ও খোকন বর্মণ নামে দুই কারিগর মশলা মজুত করা ড্রামের পাশে পড়েছিলেন। ঘণ্টা খানেক পরেও দুই জখমকে উদ্ধার করা যায়নি। পরে বম্ব স্কোয়াড ঘটনাস্থলে এলে নিমাই ও খোকনকে উদ্ধার করে। অনুপের পুরো দেহই ঝলসে গিয়েছে। জখমদের এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। তিন জনের দেহের প্রায় ৮০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এখন কোনও উৎসবের মরসুম নয়। তা সত্ত্বেও এই কারখানায় কী ধরনের বাজি তৈরি করা হচ্ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গত শুক্রবার রাতে ওড়িশার বালেশ্বর থেকে মালবাহী গাড়িতে বোঝাই ১০০০ কিলোগ্রাম পটাসিয়াম নাইট্রেট পাচার হওয়ার পথে তা আটক করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা। লালবাজারের কর্তাদের কথায়, বোমা তৈরির জন্যই ওই রাসায়নিক নিয়ে আসা হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রেও তেমন ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Injury Explosion Fire Cracker Factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE