কে বলবে, এটাই সেই চির পরিচিত বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে!
দক্ষিণেশ্বর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ন’কিলোমিটার রাস্তার কোথাও পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে নেই। তাই, কোথাও লরি বা অন্য গাড়ি দাঁড় করিয়ে হাত বাড়িয়ে চালকের কাছ থেকে কিছু ‘আদায় করা’ নেই। অন্য দিনে অন্তত পাঁচ জায়গায় পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে ওই কাজটা করে। অন্তত সোমবার সকালের আগেও করেছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে নেই বলে তাকে এড়িয়ে পালাতে যাওয়া লরিকে তাড়া করা নেই। রাস্তার ধারে লরি দাঁড় করিয়ে রেখে তাতে বোঝাই মালপত্রের কিছুটা বেআইনি ভাবে নামিয়ে নেওয়া নেই। তারা সব ছুটছে স্বাভাবিক গতিতে।
সোমবার সকালে রবীন্দ্রনগরের দুর্ঘটনা যেন এক্সপ্রেসওয়েটাকেই বদলে দিয়েছে বিলকুল।
তোলা না পাওয়া পুলিশের গাড়ির তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে একটি লরি রবীন্দ্রনগর বাসস্টপে চার নাবালককে পিষে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তিন জন মারা গিয়েছে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় এক জন হাসপাতালে ভর্তি। দুর্ঘটনার পরে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই তল্লাটে উত্তেজনা ছিল। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, পুলিশকে মারধর করা হয়, চলে পথ অবরোধও। ২৪ ঘণ্টা পরে সেখানে নীরবতা। গোটা তল্লাট যেন শোকপালন করছে।
গোটা এক্সপ্রেসওয়েতে রাস্তার ধারের চায়ের দোকানগুলোর অধিকাংশের ঝাঁপ বন্ধ। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে দেখা গেল, একটিমাত্র চায়ের দোকান খোলা। তার মালিক বললেন, ‘‘সেই যে কাল সকালে দুর্ঘটনার পরে সব ঝাঁপ ফেলেছে, আজও খোলেনি।’’
রবীন্দ্রনগরে রাস্তা জুড়ে এ দিনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গাড়ির ভাঙা কাচ। রাজপথে ডিজেল-পেট্রোলের পোড়া দাগ স্পষ্ট। বাসস্টপ লাগোয়া এক চিলতে বাগানের রেলিংটা লরির ধাক্কায় বেঁকেচুরে গিয়েছে। আর তার ভিতরেই এখনও পড়ে রয়েছে রক্তমাখা একটি খাতার মলাট। যা ওই চার নাবালকের কোনও একজনের।
এ দিন সকাল ৮টায়, মানে দুর্ঘটনার ঠিক ২৪ ঘণ্টার মাথায় রবীন্দ্রনগর বাসস্টপের সামনে দাঁড়ালেন কয়েক জন অফিস যাত্রী। বাসস্টপ লাগোয়া বাগানটা দেখে নিজেদের মধ্যে দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। তাঁদের এক জন, বাসুদেব ধরের আফসোস, ‘‘বাচ্চাগুলো যদি বাসস্টপের ভিতরে ঢুকে দাঁড়াত, তা হলে হয়তো ওদের প্রাণগুলো যেত না। তা-ও তো এক জনের এখনও প্রাণ আছে। ভগবান করুন, ছেলেটা যেন বেঁচে যায়।’’
দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে বিমানবন্দরগামী প্রায় সব গাড়িই ওই স্টপে যাত্রী তোলার পরেও কিছু ক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। আর সেই গাড়ির ভিতর থেকে উৎসুক যাত্রীরা মুখ বাড়িয়ে এক বার দেখে নিচ্ছিলেন সোমবারের দুর্ঘটনাস্থল।
সোমবারের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের মুখও এ দিন বিশেষ দেখা যায়নি। সকালে শুধু মাঝেমধ্যে একটা পুলিশের জিপ শুধু এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে টহল দিয়ে চলে যাচ্ছিল।
বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলের অদূরে এসে দাঁড়ায় পুলিশের চারটি জিপ। গাড়ি থেকে নেমে এসে অফিসারেরা দাবি করেন, বড়কর্তাদের নির্দেশ মতো এলাকায় নজর রাখা হচ্ছে। যাতে নতুন করে অশান্তি না ছড়ায়।
কিন্তু এলাকার মানুষ অশান্তি চান না। তাঁরা শুধু চান, পুলিশ এ বার নিজেকে বদলাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy