পুজোর সময়ে শেষ রাতের ভিড় সামলাতে এ বার রাস্তায় থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। পুলিশ সূত্রের খবর, মূলত গড়িয়াহাট এবং রাসবিহারী অঞ্চলের পুজোর ভিড় সামলানোর জন্যই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন পুজোর ভিড় সামলানোর জন্য তিন দফায় পুলিশ মোতায়েন করা হয় মণ্ডপ এবং তার আশপাশে। তবু সাধারণ দর্শনার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে যে, গভীর রাতের পরে আর পুজো মণ্ডপের আশপাশের ভিড় সামলানোর জন্য পুলিশের দেখা মেলে না। সে কারণেই এ বার এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
লালবাজার সূত্রে খবর, বুধবার কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ২৫টি ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি-র সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। সেখানে তিনি গড়িয়াহাট ও রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের পুজোর জন্য ওই অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেন। ওই বাহিনী রাত ১২টার পর থেকে কাজে যোগ দেবে এবং শেষ পর্যন্ত থাকবে। মাঝেরহাট সেতুভঙ্গের জেরে এমনিতেই শহরের দক্ষিণ অংশ যানজটে ভুগছে। পুজোয় যাতে ওই সব এলাকায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়, তাই ট্র্যাফিক পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন কমিশনার।
গড়িয়াহাট এবং রাসবিহারী অঞ্চলে ত্রিধারা, হিন্দুস্থান পার্ক, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘের মতো বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পুজো আছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশপ্রিয় পার্কের পুজো। এই সব পুজো দেখতে মাঝরাতেও ঢল উপচে পড়ে। এই ভিড় থাকে পরদিন ভোর পর্যন্ত। কিন্তু এই ভিড় সামলানোর জন্য থাকা পুলিশকর্মীদের ডিউটি শেষ হয়ে যায় গভীর রাতে। শুধুমাত্র ট্র্যাফিকের পুলিশকর্মীরা শেষ রাত পর্যন্ত রাস্তায় থাকতেন, যান চলাচল দেখভালে। পুলিশ না থাকায় ওই সময়ে ভিড় একেবারেই বেসামাল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই অব্যবস্থার কথা লালবাজারের কর্তারা জানতেন। তাই তাঁরা অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের কথা জানিয়েছেন।
বুধবারের বৈঠকে পুলিশ কমিশনার প্রতিটি গার্ডের ওসি-র কাছে জানতে চান গত বছর পুজোয় তাঁদের এলাকায় যান চলাচলে অসুবিধে হয়েছে কি না। পুলিশ সূত্রের খবর, উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে জানানো হয়, গত বছর শ্রীভূমির পুজো ঘিরে ভিড়ে কার্যত স্তব্ধ হয়েছিল ভিআইপি রোড। যার রেশ পড়ে উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ড এলাকায়। দীর্ঘ যানজট হয় বাইপাসেও। সিপি-র নির্দেশ, বাইপাসে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতেই হবে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের কমিশনার পুলিশকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, প্রয়োজনে ভিআইপি রোডে গিয়ে বিধাননগর পুলিশকে যান চলাচলে সাহায্য করতে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এ বার প্রথম থেকেই সমন্বয় রেখে চলা হচ্ছে বিধাননগর পুলিশের সঙ্গে। তবুও যানজট এড়ানো যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবারও ভিআইপি রোডের যানজটের প্রভাব পড়েছে বাইপাসে।’’
পুজোর ভি়ড় সামলাতে এ বারও চতুর্থী থেকে রাস্তায় নামছে পুলিশ। প্রায় আট হাজার পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হবে এই কাজে। বৃহস্পতিবার লালবাজারে যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘বিসর্জনের সময়ে কেউ ডিজে বাজালে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ লালবাজার সূত্রে খবর, পুজোর নিরাপত্তার জন্য শহরে মোট ৪০০টি পুলিশ পিকেট বসবে। তিনটে শিফটে পুলিশ কাজ করবে। পুজোর সময়ে আগুন লাগলে দমকলের গাড়িকে এসকর্ট করতে পুলিশের গাড়ির ব্যবস্থা থাকবে। লালবাজার আরও জানিয়েছে, পুজোর ক’দিন শহরের ২৩টি মেট্রো স্টেশনেও পুলিশ পিকেট থাকছে। বিভিন্ন মন্দির ও শপিং মলেও থাকছে বাড়তি নজরদারি। বিসর্জনের জন্য শহরের ২৩টি ঘাটে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘাটগুলিতে ডুবুরি, স্পিড বোট ও লঞ্চের ব্যবস্থা থাকছে।