Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রতারণা চক্রের কাছে পরিবহণ কর্তার জাল স্ট্যাম্প, প্রশ্নে সুরক্ষা

বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে যখন রাজ্যের নিরাপত্তা ও অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রশাসনিক মহল সরগরম, তখনই এক ব্যাঙ্ক জালিয়াত চক্রের কাছে মিলল রাজ্যের পরিবহণ সচিবের জাল স্ট্যাম্প। তদন্তে জানা গেল, নাগরিক হওয়ার সূত্রে চক্রের এক চাঁইয়ের বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত ছিল এবং সেখান থেকে লোকজনকে এ রাজ্যে নিয়ে এসে জাল পরিচয়পত্র তৈরি করিয়ে দিত সে।

উদ্ধার হওয়া ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পরিচয়পত্র। (ইনসেটে) গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তি। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পরিচয়পত্র। (ইনসেটে) গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩০
Share: Save:

বর্ধমান বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে যখন রাজ্যের নিরাপত্তা ও অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রশাসনিক মহল সরগরম, তখনই এক ব্যাঙ্ক জালিয়াত চক্রের কাছে মিলল রাজ্যের পরিবহণ সচিবের জাল স্ট্যাম্প। তদন্তে জানা গেল, নাগরিক হওয়ার সূত্রে চক্রের এক চাঁইয়ের বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত ছিল এবং সেখান থেকে লোকজনকে এ রাজ্যে নিয়ে এসে জাল পরিচয়পত্র তৈরি করিয়ে দিত সে।

স্বাভাবিক ভাবেই বর্ধমান কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় চলার সময়ে এই তথ্য রাজ্য সরকারের উদ্বেগ বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে সুরক্ষা নিয়ে। পাশাপাশি সন্দেহ, এই চক্রের মাধ্যমে কিছু অনুপ্রবেশকারী এ রাজ্যে ঢুকে থাকতে পারে।

রাজারহাটে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে প্রতারণার তদন্তে গিয়ে পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই জাল রবার স্ট্যাম্প মেলে। সচিবের জাল প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, চেকবুক, ডেবিট কার্ডের নকল চিপও উদ্ধার হয়েছে তল্লাশিতে। এই ঘটনায় চার ধৃতের মধ্যে মূল চক্রীই বাংলাদেশের ওই নাগরিক বলে পুলিশ জানিয়েছে। বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের ক্ষেত্রেও ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে এ রাজ্যে অনুপ্রবেশের সূত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ফলে রাজারহাটের ওই প্রতারণা চক্রের বাংলাদেশ যোগসূত্র বাড়তি মাত্রা দিয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। যেহেতু খোদ রাজ্যের শীর্ষ স্তরের আধিকারিকদের রবার স্ট্যাম্প নকল করা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পুলিশ জানায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজারহাট থানায় একটি রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অভিযোগ করেন, এক ব্যক্তির চেক জাল করে মোট ৯৭ হাজার ৪০০ টাকা তুলে নিয়েছে কেউ। ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এক জনকে চিহ্নিত করে পুলিশ। মধ্যমগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় অমিত বিশ্বাস নামে ওই ব্যক্তিকে। উদ্ধার হয় প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জাল নথি, জাল চেক এবং বাংলাদেশের সিমকার্ড। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত অমিত জানায়, তার আসল নাম আসাদুল জামাল ওরফে আরসাদ। সে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা। এতেই তদন্তের মোড় ঘুরে যায়।

অমিতকে জেরা করে দমদম ক্যান্টনমেন্ট থেকে গ্রেফতার করা হয় দীপঙ্কর রুদ্র নামে আর এক ব্যক্তিকে। তার কাছ থেকে প্যান কার্ড-সহ নানা জাল নথি পায় পুলিশ। যার মধ্যে পরিবহণ সচিবের জাল রবার স্ট্যাম্প পেয়ে নড়েচড়ে বসেন তদন্তকারীরা। বিভিন্ন আঞ্চলিক পরিবহণ কর্তার জাল রবার স্ট্যাম্পও মেলে। এর পর বারাসত থেকে সাহেব দাস, তাপস কর্মকার নামে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ডেবিট কার্ডের নকল চিপ ও পরিচয়পত্রের নকল চিপ উদ্ধার হয়।

তদন্তকারীরা জানান, ধৃত অমিত প্রচুর অনুপ্রবেশকারীকে বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে নিয়ে এসে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করত। তদন্তকারীদের অনুমান, এই প্রক্রিয়ায় একাধিক দুষ্কৃতীও এ রাজ্যে ঢুকে থাকতে পারে। বিধাননগরের এডিসিপি (এয়ারপোর্ট ডিভিশন) সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “তল্লাশি চলছে। এটি একটি বড় চক্র। ধৃতেরা প্রত্যেকে আলাদা দায়িত্বে ছিল।”

পরিবহণ দফতরের একাংশের বক্তব্য, পাসপোর্ট তৈরির জন্য পরিবহণ সচিব বা সম পর্যায়ের সচিবদের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। অনেকেই দ্রুত পাসপোর্ট করার জন্য ওই ধরনের আধিকারিকদের স্বাক্ষর করা শংসাপত্র নেন। এ সব ক্ষেত্রে তথ্য যাচাইয়ের কাজে আরও নজরদারির প্রয়োজন।

পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ সব অপরাধের যথাযোগ্য শাস্তি হওয়া উচিত। প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে এই জাতীয় শংসাপত্র দেওয়ার পদ্ধতিতে কিছু অংশ বাতিল করাও প্রয়োজন, যাতে জালিয়াতির ভিতে আঘাত করা যায়। বস্তুত, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে সরকারি আধিকারিকদের দিয়ে অ্যাটেস্ট করার পরিবর্তে সেল্ফ অ্যাটেস্টেশন চালু করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE