Advertisement
E-Paper

ভোরের আগুনে ছাই ময়দানের প্রাচীন ক্লাব

দমকল সূত্রের খবর, সোমবার ভোরের ওই অগ্নিকাণ্ডে ক্লাবের মাল্টি জিম থেকে শুরু করে খেলার সরঞ্জাম, ক্লাবের নথি ও আসবাবপত্র-সহ অনেক কিছুই পুড়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৭
পুড়ে গিয়েছে খেলার সমস্ত সরঞ্জাম। ছবি: সুমন বল্লভ

পুড়ে গিয়েছে খেলার সমস্ত সরঞ্জাম। ছবি: সুমন বল্লভ

আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেল ময়দানের শতাব্দীপ্রাচীন উয়াড়ি ক্লাব।

দমকল সূত্রের খবর, সোমবার ভোরের ওই অগ্নিকাণ্ডে ক্লাবের মাল্টি জিম থেকে শুরু করে খেলার সরঞ্জাম, ক্লাবের নথি ও আসবাবপত্র-সহ অনেক কিছুই পুড়ে গিয়েছে। রবীন্দ্র বল নামে ক্লাবের এক মালির শরীরের বেশ কিছুটা অংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। দমকলের চারটি ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দমকলকর্মীদের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লাগে।

উয়াড়ি ক্লাবের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, আগুন লাগে ভোর পাঁচটা নাগাদ। রবীন্দ্র বল নামে জখম ওই মালি জানান, তিনি ও তাঁর দুই সঙ্গী সে সময়ে ক্লাবের ভিতরে ঘুমোচ্ছিলেন। এমন সময়ে ক্লাবের সেক্রেটারির ঘর থেকে কাচ ভাঙার শব্দ পেয়ে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। রবীন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘কাচ ভাঙার শব্দ পাচ্ছিলাম সেক্রেটারির ঘর থেকে। গিয়ে দেখি, ওই ঘরের ফ্রিজটা দাউদাউ করে জ্বলছে। আগুনের হল্কায় ঘরের কাচ ভেঙে পড়ছে। এর পরেই আগুন ঘর থেকে গোটা ক্লাবে ছড়িয়ে পড়ে।’’

রবীন্দ্রবাবু জানান, ওই অবস্থায় তিনি সেক্রেটারির ঘরের পিছনে থাকা মেন সুইচ বন্ধ করে দেন। তার পরে কোনও রকমে ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তত ক্ষণে গোটা ক্লাব দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে। সেখান থেকে বেরোতে গিয়ে তাঁর হাতের কিছুটা অংশ ঝলসে যায়। মুখও কিছুটা পুড়ে গিয়েছে।

রবীন্দ্রবাবু ছাড়াও ওই সময়ে ক্লাবে ছিলেন গদাধর নায়েক নামে আর এক মালি। গদাধরবাবু জানান, রবীন্দ্রবাবুর চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। দেখেন, কালো ধোঁয়া ক্রমেই গোটা ক্লাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্লাবঘরের ভিতরে কোল্যাপসিবল গেটে তালা দিয়ে ঘুমোন তাঁরা। গদাধরবাবু বলেন, ‘‘কোল্যাপসিবল গেটের চাবি থাকে দরজার কাছেই। চাবিটা ভাগ্যিস ঠিক জায়গায় ছিল। ওই চাবি দিয়ে কোনও মতে গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে আসি। বেরোতে একটু দেরি হলে যে কী হত, তা ভাবলেই শিউরে উঠছি।’’

এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গোটা ক্লাবঘরটাই পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। আগুনের শিখা এতটাই উঁচুতে উঠেছিল যে, ক্লাবের সামনে কয়েকটি গাছের পাতাও পুড়ে গিয়েছে। মাল্টিজিমের সব সরঞ্জাম পুড়ে গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে ক্রিকেটারদের সরঞ্জামের কিট-ও। আগুনের খবর শুনেই ছুটে এসেছিলেন সন্দীপ যাদব নামে ওই ক্লাবের এক ক্রিকেটার। তিনি বলেন, ‘‘এক-একটি ক্রিকেট কিটের দাম কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এখানে বারো থেকে চোদ্দোটা কিট ছিল। ব্যাট, বল, হেলমেট, প্যাড— সব গেল! আমারই দুটো দামি ব্যাট পুড়ে গিয়েছে।’’ সন্দীপ জানান, অনেক গরিব ক্রিকেটার কোনও মতে টাকা জোগাড় করে সরঞ্জাম কিনেছেন। তিনি জানান, তাঁদের আজ অনুশীলন ছিল।

১২১ বছরের পুরনো উয়াড়ি ক্লাবে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি খেলা হয়। ক্লাবের এক কর্তা জানান, ওই তিনটি খেলাতেই তাঁদের ক্লাব প্রথম ডিভিশনে খেলে। ফুটবল ও হকির সরঞ্জামও সব পুড়ে গিয়েছে। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ক্লাবের নথি থেকে শুরু করে সব কিছু পুড়ে গিয়েছে। ক্লাবের অস্তিত্বটাই আর নেই। বিখ্যাত খেলোয়াড়দের অনেক দুষ্প্রাপ্য ছবি ছিল। সেগুলিও সব শেষ। আর কোনও দিন ফিরে পাওয়া যাবে না।’’ ওই ক্লাবে যে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কিছু ছিল না, সে কথা কবুল করেছেন ক্লাবকর্তারাই। প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘যত দূর জানি, অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা ময়দানের বেশির ভাগ ক্লাবেই নেই। আমরাও রাখিনি। এ বার থেকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’’

Fire Injury Sports Club
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy