Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ক্রেতা টানতে ‘মল’ হবে চার পুর-বাজার

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে লেক মার্কেটের পুনর্গঠন ইতিমধ্যেই হয়েছে, এ বার সেই সংখ্যাটা আরও বাড়াতে চায় কলকাতা পুরসভা।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৮
Share: Save:

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে লেক মার্কেটের পুনর্গঠন ইতিমধ্যেই হয়েছে, এ বার সেই সংখ্যাটা আরও বাড়াতে চায় কলকাতা পুরসভা। শহর জুড়ে ঝাঁ চকচকে শপিং মল ও মার্কেটের সঙ্গে পাল্লা দিতেই এ বার আরও গোটা চারেক বাজার পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুর প্রশাসন। এর মধ্যে তিনটিই মেয়রের নিজের পাড়া বেহালায়। একটি পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে, মেয়র ঘনিষ্ঠ বিধায়ক পরেশ পালের এলাকা। পিপিপি মডেলে সেগুলি বহুতল মার্কেটে পরিণত করতে চায় পুর প্রশাসন। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, পুরনো বাজারগুলি বহুতল মার্কেটে পরিণত করা হলে শুধু তার আকর্ষণ বাড়বে তা নয়, খদ্দেরও বাড়বে। তাতে উপকৃত হবেন ব্যবসায়ীরাই।

পুর কর্তাদের ব্যাখ্যায়, শহরে যে হারে বেসরকারি মালিকানার বহুতল মল, মার্কেটের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে পুরসভার নিজস্ব বাজার-সহ কলকাতার সাড়ে তিনশোর বেশি বাজারের ব্যবসায় ভাটা পড়ছে। পুরসভার বাজার গুলোর বেশিরভাগই ভাঙাচোরা, পুরনো ও অপরিষ্কার। অনেকগুলিতে আবার শৌচাগারও নেই। শিয়ালদহে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী শহরের বাজারগুলির হাল কেমন তা জানতে পুরসভার কাছে রিপোর্ট তলব করেন। পুরসভার তৎকালীন মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ পুরসভার ৪৬টি-সহ শহরের মোট ৩৫৮টি মার্কেটের হাল হকিকত ছবি-সহ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠান। প্রায় হাজার পাতার ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছিল শহরের বেশির ভাগ বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। বিল্ডিংয়ের সঙ্গে পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা, শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য। বাজারের ভিতরে জল গড়িয়ে আসে। পাশাপাশি শপিং মলগুলি চোখে পড়ার মতো। তাই মল-এর আকর্ষণ বেশি। তাতে মার খাচ্ছেন শহরের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ীরা। তাই পুরসভা নিজেদের বাজারের ‘শ্রী’ ফেরাতে আগ্রহী। পুরসভার বর্তমান মেয়র পারিষদ (বাজার) আমিরুদ্দিন ববি জানান, পুরসভার বাজারগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। সেগুলি আকর্ষণীয় করা হলে আখেরে শহরের সুনামও বাড়বে।

পুরসভার পিপিপি দফতরের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ তারক সিংহ মঙ্গলবার জানান, ইতিমধ্যে পুরসভার চারটি মার্কেট নতুন করে গড়ে তোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলি হলো কাঁকুড়গাছির ভিআইপি মার্কেট, বেহালার এস এন রায়, বকুলতলা এবং করুণাময়ী মার্কেট।

তবে ওই বহুতল গড়ার কাজ খুব সহজ বলে মনে করছেন না পুরসভার একাধিক কর্তা। বাজার দফতরের এক অফিসার জানান, বাম আমলে পিপিপি মডেলে কলকাতার চারটি বড় বাজার সংস্কার করার প্রকল্প নেওয়া হয়। এগুলি ছিল লেক মার্কেট, কলেজ স্ট্রিট মার্কেট, ল্যান্সডাউন এবং পার্ক সার্কাস মার্কেট। ঘটা করে টেন্ডারও করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ২০ বছরে এক মাত্র লেক মার্কেট নতুন কলেবরে চালু করা গিয়েছে। তাও বছর তিনেক আগে। বাকি তিনটির একটি কলেজ স্ট্রিট (নতুন নাম দেওয়া হয়েছে বর্ণ পরিচয় মার্কেট) মার্কেট এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি। বাকি দুটি তো দু’দশকেও কাজ শুরুই করতে পারেনি। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ফের চারটি মার্কেট পিপিপি মডেলে গড়ে তোলা সম্ভব হবে কি তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।

পুরসভা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কাঁকুড়গাছি মার্কেট পিপিপি মডেলে গড়া নিয়ে টেন্ডার ডেকেছিল পুর প্রশাসন। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। ফলে টেন্ডার প্রক্রিয়া করাই যায়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, টেন্ডারে পুরসভার পক্ষ থেকে যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তা মানা লগ্নিকারীদের পক্ষে লাভজনক নয় বলেই সাড়া মেলেনি। এ বার পুরসভা তাতে কিছু পরিবর্তন আনতে চায়।

মঙ্গলবার বেহালার বকুলতলা বাজার পুনর্গঠন করার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারকবাবু জানান, ওই বাজার সমিতির কর্মকর্তারা পুরসভায় এসে চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। বাজারে বর্তমানে ২০০ দোকান রয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে ওই সব দোকানকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। ঠিক হয়েছে সেখানে আটতলা (জি+৭) বিল্ডিং হবে। খুব শীঘ্রই ওই বাজার পুনর্গঠনের জন্য টেন্ডার ডাকা হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।

কিন্তু কাঁকুড়গাছির মতো এখানেও যদি কেউ টেন্ডারে অংশ না নেয়?

পুরসভার এক কর্তা জানান, সব কিছু দেখেশুনেই এ বার শর্ত আরোপ করা হবে। তাতে পুরসভার সঙ্গে লগ্নিকারীর স্বার্থও দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Municipal Market Shopping Mall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE