Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ট্যাংরা থেকে চাঁদনি, ছড়াচ্ছে দূষণ

মহানগরে দূষণের প্রকোপ নতুন কিছু নয়। দূষণ ঠেকাতে সরকারের নানা প্রতিশ্রুতিও আছে। কিন্তু খাস মহানগরেই রমরমিয়ে চলছে একাধিক দূষণসৃষ্টিকারী শিল্প-কারখানা ও দোকান। সেই ছবি ও তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন পরিবেশ গবেষণা সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টে। তাতে বলা হয়েছে, মহানগরের মধ্যেই ওই কারখানা ও দোকানগুলি থাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন অসুখের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে বাসিন্দাদের মধ্যে।চলছে সিসা গলানোর কাজও। এর পাশাপাশি চলে ব্যাটারি ভাঙার কাজ। এর ফলে শরীরে বিষাক্ত ধোঁয়া ঢুকে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে।

দূষণনামা: ট্যানারির দূষণে এমনই অবস্থা ট্যাংরার নিকাশি খালের।

দূষণনামা: ট্যানারির দূষণে এমনই অবস্থা ট্যাংরার নিকাশি খালের।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০২:১৬
Share: Save:

তপসিয়া, পিকনিক গার্ডেন, পাগলাডাঙা

এখানে যত্রতত্র বর্জ্য প্লাস্টিক জমা হয়। প্রকাশ্যেই বিদ্যুতের তার পুড়িয়ে তামা, লোহার তার বের করা হয়। চলছে সিসা গলানোর কাজও। এর পাশাপাশি চলে ব্যাটারি ভাঙার কাজ। এর ফলে শরীরে বিষাক্ত ধোঁয়া ঢুকে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে। পরিবেশকর্মীদের মতে, ‘কমলা তালিকাভুক্ত’ অর্থাৎ ঘনবসতি এলাকার পক্ষে বিপজ্জনক এই সব কারখানা কলকাতা পুর এলাকায় থাকতে পারে না।

ট্যাংরার চামড়াপট্টি

২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে বানতলায় লেদার কমপ্লেক্স তৈরি হলেও চামড়ার কারখানাগুলি সেখানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। ফলে এই এলাকায় চামড়ার কারখানা রয়েছে এখনও। দূষিত বর্জ্য এলাকার নিকাশি নালা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যানারি থেকে মূলত ক্রোমিয়ামের মতো রাসায়নিক নির্গত হয়। তা থেকে চামড়ার ঘা, পেটের রোগ, ফুসফুস, কিডনি ও যকৃতের রোগ হতে পারে।

মানিকতলা, পেয়ারাবাগান

রাস্তার পাশেই গাড়ির ব্যাটারি খোলা হচ্ছে। তার ফলে সিসা এবং অ্যাসিডের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশে। ব্যাটারির অ্যাসিড থেকে ত্বকের এবং শ্বাসনালীর রোগ হতে পারে। ব্যাটারির সিসা থেকে দেখা দিতে পারে স্নায়ুর রোগ।

চাঁদনি চক, রাজাবাজার

দূষণনামা: চাঁদনি চকে রাস্তায় ডাঁই হয়ে পড়ে বৈদ্যুতিন বর্জ্য।

রাস্তার পাশেই পরপর দোকানে বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন সামগ্রী সারানোর কাজ চলছে। চলছে পুরনো পণ্য ভেঙে যন্ত্রাংশ বের করার কাজও। তা থেকে সিসা-সহ নানা বিষাক্ত রাসায়নিক পরিবেশে মিশতে পারে।

মল্লিকবাজার, কাশীপুর

রাস্তার পাশেই সার সার গাড়ি সারাইয়ের দোকান। দিনভর সে সব দোকানে সারাইয়ের কাজ তো চলছেই, উপরন্তু ‘ভাঙাগড়া’ থেকে বাতাসে মিশছে নানা ধরনের ধূলিকণা। রাস্তার পাশেই নানা ধরনের আঠা, ব্রেক অয়েল, মোটর অয়েল ঢালা হচ্ছে। গাড়ি সারাইয়ের সময় ধুলো উড়ে বাতাসে মিশছে, তীব্র শব্দ হচ্ছে। এর ফলে শ্বাসনালীর ও ফুসফুসের ক্যানসার বাড়তে পারে। শব্দের জেরে কানের ও স্নায়ুর রোগ হতে পারে।

পরিবেশ দফতরের বক্তব্য, বহু মানুষের রুটিরুজির কথা ভেবেই তড়িঘড়ি ওই সব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও পরিবেশবিদেরা বলছেন, ট্যানারিগুলি অবৈধ। সেগুলি সরাতে বাধা কোথায়? ব্যাটারি, সিসা, অ্যাসিড ব্যবহার করে যে সব কারখানা ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় চলছে সেগুলিকেও শহরের বাইরে পুনর্বাসন দেওয়া যেতে পারে। পরিবেশ দফতরের বক্তব্য, পুনর্বাসনের বিষয়টি সময় ও খরচসাপেক্ষ। তাই পুনর্বাসন কী ভাবে, কবে হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE