Advertisement
E-Paper

সংস্কৃতি থেকে শিক্ষাঙ্গন ভরে রয়েছে জঞ্জালে

প্লাস্টিক বা জঞ্জাল ফেলতে নিষেধ করে বোর্ড টাঙানো হয়েছে বেশ কয়েকটা। কিন্তু বিস্তীর্ণ জলার ধার জুড়ে কফি-নরম পানীয়ের কাপ, মিনারেল ওয়াটারের তোবড়ানো বোতল, পটেটো চিপ্‌সের প্যাকেট থেকে রকমারি জঞ্জালের ছড়াছড়ি।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ১২:১৫
আবর্জনা অন্যত্র না সরিয়ে জমিয়ে রাখা হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

আবর্জনা অন্যত্র না সরিয়ে জমিয়ে রাখা হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

দৃশ্য ১

গম্ভীর মুখের রবীন্দ্র-মূর্তি মাঠের ধারে। তাঁর ঠিক পিছনে এলিয়ে বসার চমৎকার ঘাসেই জঞ্জালের আড়ত। ভরদুপুরে এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে নরম পানীয়ের গ্লাস, কফির কাপ কিংবা লজেন্স, সিগারেটের মোড়ক।

কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে খুলে দেওয়া নন্দন-রবীন্দ্র সদন চত্বরের ঘেরা অংশ মাঠ হয়ে ওঠার পরে এটাই ছবি। চিত্রশিল্পী, লেখক, নাট্যকর্মীদের ভিড়ে ছয়লাপ ‘সংস্কৃতির অঙ্গন’-এও জঞ্জাল নিয়ে নান্দনিক বোধের কার্যত বালাই নেই। হয়ত দু’পা এগিয়েই ডাস্টবিন। তবু দুপুরে বিশ্রামের আশায় আসা কলেজপড়ুয়া যুগল, বেসরকারি সংস্থার কর্মী থেকে বাচ্চাকে কোচিং ক্লাসে পাঠিয়ে অপেক্ষারত মায়ের দল রেখে যাচ্ছেন নানা ‘স্মৃতিচিহ্ন’! চত্বরে ঝাঁটা পড়লেও মাঠ ঘুরে জঞ্জাল সংগ্রহের সাধারণত রেওয়াজ নেই। নামী কেটারিং সংস্থার খাবারের প্যাকেট থেকে মদের বোতল— গড়াগড়ি খাচ্ছে ইতিউতি।

দৃশ্য ২

প্লাস্টিক বা জঞ্জাল ফেলতে নিষেধ করে বোর্ড টাঙানো হয়েছে বেশ কয়েকটা। কিন্তু বিস্তীর্ণ জলার ধার জুড়ে কফি-নরম পানীয়ের কাপ, মিনারেল ওয়াটারের তোবড়ানো বোতল, পটেটো চিপ্‌সের প্যাকেট থেকে রকমারি জঞ্জালের ছড়াছড়ি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিলপাড়ে আপনি স্বাগত!

ঝিলের জলটা আগের থেকে অনেক পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু দু’ধারে ডাঁই হওয়া জঞ্জালে ঘটছে দৃশ্যদূষণ! আর নিষেধও থোড়াই কেয়ার! পানীয়ের প্লাস্টিক বোতল কেতায় টিপ করে ঝিলে ছুঁড়ে ফেলার দৃশ্য বিরল নয়। বাতিল কাগজ, পরিত্যক্ত গ্লাস পড়ে রয়েছে যাদবপুরের বিখ্যাত লবিতেও। তাৎক্ষণিক ভাবে কারও তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই।

সেই ট্র্যাডিশন...

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ প্রথম বর্ষের পড়ুয়া সোমাশ্রী চৌধুরীর মতে, পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার এই অভাবটা সার্বিক সামাজিক প্রবণতা! তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে মেধাবী, সচেতন পড়ুয়ারাও সিগারেটের প্যাকেট বা চকলেটের মোড়কটা ডাস্টবিনের বদলে রাস্তার মাঝখানে ফেলেন, ঠিক যেমন গাড়িতে যাতায়াতের পথে পোড়খাওয়া বিচক্ষণেরাও এটা-সেটা ছুড়ে রাস্তা নোংরা করেন।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিধ রাজনৈতিক বিষয় বা সামাজিক অধিকারের আন্দোলনে পড়ুয়ারা বরং ঢের বেশি সজাগ। কিন্তু ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতা, সাফসুতরো পরিবেশ নিয়ে বেশিরভাগেরই তেমন বোধ নেই। পড়াশোনা-গবেষণার জন্য যাঁরা আসেন, তাঁদের বিক্ষিপ্ত ভাবে বুঝিয়েও সবটা ফল মেলেনি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও নোংরা, জঞ্জাল-ভরা পরিবেশের দরুণ ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কাছে নম্বর কাটা গিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি পুরোপুরি।

তাঁরা বলেন

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতায়, জাপানের ওসাকা বা টোকিও থেকে আসা কেউ কেউ কলকাতাতেও চকলেটের মোড়ক পকেটে নিয়ে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ঘোরেন, কক্ষনও কিছু রাস্তায় ফেলেন না! আবার এ শহরেও মেট্রোর স্টেশন কিন্তু তুলনায় সাফ-সুতরো থাকে। শোভনবাবুর কথায়, ‘‘পুরসভার তরফে দেখা হয়, সাফাই কর্মীরা জঞ্জাল সরিয়ে ঠিক জায়গায় ফেলছেন, না শহর নোংরা হচ্ছে। তবে মানুষের অভ্যাস পাল্টানো সহজ নয়।’’

বাস্তবিক, শহরে প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্পও ততটা সফল নয়। জাতীয় পরিবেশ আদালতও সম্প্রতি দেশের নয়া কঠিন বর্জ্য আইন মোতাবেক, যত্র তত্র জঞ্জাল ফেলার জন্য ব্যক্তি বা সংস্থার থেকে মোটা জরিমানা আদায়ের কথা বলেছে। তবে এখনই তেমন পরিকল্পনা নেই পুর কর্তৃপক্ষের।

ইদানীং অবশ্য শহর পরিষ্কার রাখা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনও কিছু দেখা যাচ্ছে। পরিবেশকর্মী বনানী কক্করের মতে, এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে একেবারে ছোটদের ধরে ধরে রাস্তা নোংরা করতে নেই-টা বোঝাতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এই ক্যাম্পাস বা এই শহর আমার নিজের, এই বোধটা ছাড়া বেশি দূর এগোনো যাবে না।’’

Jadavpur University Garbage beautification Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy