ভোট গণনার সময়ে মোবাইলে চোখ বড়বাজারের এক ব্যবসায়ীর। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ভোট গণনা সবে কিছু দূর এগিয়েছে। তারই মধ্যে শুরু হয়ে গেল লাড্ডু বিতরণ। রোজ ব্যবসায় ব্যস্ত থাকা বড়বাজার বৃহস্পতিবার যেন অন্য মেজাজে। বেলা যত বাড়ল, ততই বাড়ল হইচই। সকলেই যে তাতে শামিল হলেন, তেমন নয়। অনেকেরই আগে থেকে কিনে রাখা লাড্ডুর বাক্স খোলা হল না। তবে কয়েকটা পার্টি অফিসের সামনে বসে থাকা হাতে গোনা কিছু মানুষের সেই শোক উচ্ছ্বাসের আবহে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
বিকেল হতেই আনন্দ গড়াল উৎসবের দিকে। সাড়ে চারটে নাগাদ বড়বাজারের কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটে বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতের বাড়ির কাছে তখন সমর্থকেদের ভিড়। অধিকাংশের মুখেই ‘জয় শ্রীরাম’! ‘ভারত মাতা কি জয়’! দিন দুই আগে পুরসভার অধিবেশন কক্ষে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে শাসকদলের কটূক্তির মুখে পড়েছিলেন এই কাউন্সিলর।
এই এলাকা উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। তবে এখানে হঠাৎ এই হইচই কেন? এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বাকি কেন্দ্র এক দিকে, বড়বাজার আর এক দিকে!’’ সন্ধ্যা নামতে ফলাফলও সে কথায় সম্মতি জানাল। এই এলাকার ১৮, ২০, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। তাতেই যেন শাসক দলের পার্টি অফিসের সামনে নেমে এল শোকের ছায়া। এত দিন তৃণমূলের অধীনেই ছিল ওই ওয়ার্ডগুলি। এক তৃণমূল সমর্থক জানালেন, কার্যত ভেঙে পড়েছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা। সামনের বছর পুরভোট। নিজেদের ওয়ার্ড কী ভাবে আগলে রাখবেন, সেই চিন্তায় ঘুম ছুটেছে তাঁদের। এক তৃণমূলকর্মী বলেন, ‘‘অবাঙালি ভোট বুঝি সবই ও দিকে গেল!’’
অন্য সব দিনে এই ব্যবসা-পাড়ায় গমগম করে শাসকদের সব পার্টি অফিস। গণনায় ভাল ফল হবে ভেবে অফিসের সামনে বাড়ানো হয়েছিল চেয়ারের সংখ্যাও। বিকেল পাঁচটা নাগাদ দেখা গেল, সবুজ চেয়ারগুলি খালি। তেমনই একটি দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, বড়বাজারের কিছু ওয়ার্ডে কার্যত কোনও ভোটই পায়নি তৃণমূল। এমনও কিছু বুথ রয়েছে যেখানে, বিজেপি পেয়েছে ৪৫০ ভোট। আর তৃণমূলের হয়তো জুটেছে মাত্র ৬০টি। ওই এলাকার এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘ধর্মীয় মেরুকরণেই সব শেষ হয়ে গেল।’’ তিনি জানালেন, ভাল ফল হবে ভেবে বাক্স বাক্স লাড্ডু কেনা হয়েছিল। কিন্তু গণনা এগোতেই দেখা গেল, লাড্ডু খাওয়ানোর বিশেষ কেউ নেই আশপাশে। ওয়ার্ড কমিটির
এক কর্মী বলেন, ‘‘নিজেরাই সব লাড্ডু ভাগ করে খেলাম!’’
যমুনালাল বজাজ স্ট্রিটে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন জনা কয়েক যুবক। সকলের চোখ একটাই মোবাইলের দিকে। তাতে চলা হিন্দি চ্যানেলে ভেসে উঠেছে অমিত শাহের ছবি। মোবাইলে ধ্বনি উঠছে, ‘জয় শ্রীরাম!’ গলা মিলিয়ে ওঁরাও বললেন, ‘জয় শ্রীরাম!’ কারণ জানতে চাইলে তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘চা-ওয়ালা তো দেখিয়ে দিলেন, হিম্মত কাকে বলে!’’ কলাকার স্ট্রিটের ব্যবসায়ীদের চোখও এ দিন আটকে ছিল টিভি-র পর্দাতেই। সন্ধ্যার মুখে সীতারাম আগরওয়াল নামে এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘সারা বছর তো ব্যবসাই করি। আজ ভোটের ফলাফলেই নজর রেখেছি। দেখছেন না, বিজেপি জিতছে। শেয়ার বাজার চাঙ্গা হচ্ছে। এটাই তো চাই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy