Advertisement
E-Paper

অপহরণের গল্প, পালিয়েও উদ্ধার

হাতে মাত্র কয়েক হাজার টাকা। তা নিয়েই ১৬ ঘণ্টা ধরে নিজের পরিবার ও পুলিশ প্রশাসনকে নাজেহাল করে ছাড়লেন একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। ঠিক যেন সবাইকে ‘এপ্রিল ফুল’ করলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১৯

হাতে মাত্র কয়েক হাজার টাকা। তা নিয়েই ১৬ ঘণ্টা ধরে নিজের পরিবার ও পুলিশ প্রশাসনকে নাজেহাল করে ছাড়লেন একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। ঠিক যেন সবাইকে ‘এপ্রিল ফুল’ করলেন তিনি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে বছর উনিশের ওই ছাত্রী নিজেই ফোনে জানান, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। সেই অভিযোগ পেয়ে রাতভর তল্লাশি চালায় পুলিশ। পরিবারের লোকজনও চার দিকে খুঁজে বেড়ালেন মেয়েকে। অবশেষে ১৬ ঘণ্টা পরে শনিবার দুপুরে একটি শপিং ম‌ল থেকে তাঁকে উদ্ধার করল পুলিশ।

বিধাননগর (দক্ষিণ) থানা এলাকায় শুক্রবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে। তবে ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও পুলিশ অপহরণের কোনও সূত্র খুঁজে পায়নি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ নিশ্চিত, ওই ছাত্রী স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, পড়াশোনার চাপ নিতে পারছিলেন না। ঘটনাচক্রে শনিবারই ওই ছাত্রীর একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফল বেরোনোর কথা।

পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, ওই ছাত্রী শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরোন। কয়েক ঘণ্টা পরে মোবাইল থেকে ফোন করে তিনি বাড়িতে জানান, তাঁকে দুই যুবক অপহরণ করেছে। পরিবারের তরফে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় খবর দেওয়া হয়। অপহরণের মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করে দেখা যায়, কখনও শ্যামবাজার, কখনও দক্ষিণেশ্বর এলাকা চিহ্নিত হচ্ছে। এর পরে গিরিশ পার্ক। তার পরে মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। এ দিন সকালে ফের মোবাইলটি চালু হয়। দেখা যায়, রাজারহাট নিউটাউ‌ন এলাকায় মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যাচ্ছে। এর পরে পুলিশ ওই ছাত্রীর বাবাকে নিয়ে রওনা দেয়। ফোনের টাওয়ারের লোকেশন অনুসরণ করে ওই এলাকায় একটি শপিং মলে যায় পুলিশ। সেখানে গিয়ে এক তদন্তকারী দেখেন, এক তরুণী পুলিশ দেখেই দোকানের আড়ালে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করছেন। তখনই তাঁকে ধরে ফেলা হয়।

উদ্ধারের পরে ওই তরুণীকে জেরা করতে গিয়ে পুলিশ হতবাক। সূত্রের খবর, জেরায় ছাত্রী জানান, দাদু-দিদিমার কাছ থেকে পাওয়া হাতখরচের টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। সেই কয়েক হাজার টাকা নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটি ট্যাক্সি নিয়ে দক্ষিণেশ্বর মন্দির এলাকায় যান তিনি। সেখান থেকে পার্ক স্ট্রিট। মাঝে গিরিশ পার্কের কাছে মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে পার্ক স্ট্রিটে একটি হোটেলে থাকতে যান ওই তরুণী। কিন্তু কোনও পরিচয়পত্র না থাকায় হোটেল কর্তৃপক্ষ ঘর ভাড়া দিতে রাজি হননি। তার পরে সারা রাত গাছতলায় বসে ছিলেন ওই তরুণী। ভোরে ফের গাড়ি ভাড়া করে নিউ টাউনের শপিং মলে যান।

সূত্রের খবর, এ প্রশ্নের জবাবে তরুণী দাবি করেছেন, পড়াশোনার জন্য বাবা-মায়ের বকাবকি সহ্য হচ্ছিল না তাঁর। পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়ার ভয়েই তিনি পালান। ওই ছাত্রীর এমন দাবির কোনও সারবত্তা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘আদৌ আমার মেয়েকে কেউ অপহরণ করেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ। যদি তা না হয়, তবে আমার মেয়ে অত্যন্ত অন্যায় কাজ করেছে।’’ এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘মেয়েটির সাহস দেখে আমরা হতবাক। এত সাহস যাঁর, চেষ্টা করলে তিনি অনায়াসেই পড়াশোনায় ভাল ফল করতে পারবেন। ওই ছাত্রীর কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজন।’’

Kidnap
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy