Advertisement
E-Paper

খাবার দেওয়ার ‘মজা’য় দাওয়াই সটান পাকড়াও

খাঁচার সামনে ভিড়। ঘেরাটোপের ভিতরে নানা কসরত দেখাচ্ছে বুড়ো শিম্পাঞ্জি ‘বাবু’। সেই ভিড়েই দাঁড়িয়েছিলেন বেহালার এক যুবক। ইতিউতি দেখে প্যান্টের পকেট থেকে একটি পাকা কলা বার করে আনলেন। তার পরেই উঁচু জালের উপর দিয়ে টুপ করে ছুড়ে দিলেন বাবুর দিকে!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০

খাঁচার সামনে ভিড়। ঘেরাটোপের ভিতরে নানা কসরত দেখাচ্ছে বুড়ো শিম্পাঞ্জি ‘বাবু’। সেই ভিড়েই দাঁড়িয়েছিলেন বেহালার এক যুবক। ইতিউতি দেখে প্যান্টের পকেট থেকে একটি পাকা কলা বার করে আনলেন। তার পরেই উঁচু জালের উপর দিয়ে টুপ করে ছুড়ে দিলেন বাবুর দিকে!

ওই যুবক খেয়াল করেননি একটু দূরে দাঁড়িয়ে নজর রাখছিলেন এক রক্ষী। কলা ছুড়তেই তাই সটান পাকড়াও। তার পরে হাত ধরে সোজা অধিকর্তার ঘরে চালান! চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, আইনি দাওয়াই থেকে বাঁচতে কান্নাকাটি জুড়েছিলেন ওই যুবক। শেষমেশ মুচলেকা লিখে ক্ষমা চেয়ে ছাড় পেয়েছেন তিনি।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, পশুপাখিদের খাবার ছুড়ে বা অন্য কোনও ভাবে উত্ত্যক্ত করায় লাগাম টানা যাচ্ছিল না। ‘সবক’ শেখাতে অগত্যা এ বার ধরপাকড়ের দাওয়াই বেছেছেন তাঁরা। চলতি বছরে অন্তত পনেরো জনকে পাকড়াও করা হয়েছে। তাঁদের কারও ছুড়ে দেওয়া খাবারের লক্ষ্য ছিল জিরাফ, কেউ বা জালের ফাঁক গলে বাঁদরকে বাদাম খাওয়াতে গিয়েছিলেন। বুধবার দুপুরেও চিড়িয়াখানার অধিকর্তার ঘরের সামনে মুখ কাঁচুমাচু করে বসেছিলেন এক প্রবীণ। চিড়িয়াখানার ‘প্রবীণ’ শিম্পাঞ্জি বাবুকে কলা খাওয়াতে গিয়ে ধরা পড়েছেন তিনিও।

মুচলেকা নেওয়ার আগে রীতিমতো কড়া কথাও শোনানো হচ্ছে অভিযুক্তদের। যেমন বেহালার ওই যুবকের কীর্তি শুনে চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত তাঁকে বলেন, ‘‘আপনাকে দেখে তো শিক্ষিত, ভদ্র বলেই মনে হয়। খাবার দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা কানে ঢুকল না?’’ সেই যুবক মিনমিনে গলায় দাবি করেছিলেন, নেহাত মজা করেই শিম্পাঞ্জিকে কলা ছুড়েছিলেন তিনি। তাতে চিঁড়ে ভিজছে না দেখে শেষমেশ চিড়িয়াখানার অধিকর্তার সামনে হাত জোড় করে কাকুতিমিনতি জোড়েন। আশিসবাবু অবশ্য বলছেন, মুচলেকা লিখিয়েই ক্ষান্ত থাকবেন না তাঁরা। এ বার থেকে চালু করা হবে জরিমানাও। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, প্রাণীদের খাবারের নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সে সব খাবার দেওয়ার আগে নানা ভাবে পরীক্ষাও করা হয়। বাইরের যে কোনও খাবার খেলে খাঁচায় থাকা প্রাণীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। সে কারণেই দর্শকদের খাবার দিতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু তাতে আমল দেন না অনেকেই। বরং এই ‘মজা’ যেন ক্রমশ বেড়ে চলেছে! বছর কয়েক আগে চিড়িয়াখানার কর্তারা লক্ষ করেছিলেন, বয়স্ক শিম্পাঞ্জি বাবুর উদ্দেশে চিপ্‌সের প্যাকেটও ছুড়ছেন অনেকে। চিড়িয়াখানার এক কর্তা বলেন, ‘‘দর্শকদের এই মজার খেসারত দিতে হতে পারে অবলা প্রাণীগুলিকে। আজেবাজে খাবার খেয়ে অসুস্থও হতে পারে ওরা।’’

এমন নানা উপদ্রব আটকাতে শিম্পাঞ্জি-সহ নানা প্রাণীর ঘেরাটোপের জালের উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু চিড়িয়াখানার রক্ষীদের আক্ষেপ, তাতেও কাজ হয়নি। উঁচু জাল টপকেই খাবার ছুড়ছেন অনেকে। এ সব এড়াতে এখন তাই মাইকে ঘোষণা হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। রক্ষীদের পাশাপাশি শিম্পাঞ্জি, বাঁদর, জিরাফের খাঁচার সামনে ভিড়ে মিশে থাকছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরাও।

আর পকেট থেকে কলা, বাদাম, লেবু বার করে ছুড়তে দেখলেই..!

Alipore Zoo Animals
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy