Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
AMRI

শহর কি আদৌ শিক্ষা নিয়েছে, আমরি-কাণ্ডের ন’বছরে প্রশ্ন

২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে আগুন লেগে মৃত্যু হয় ৯৩ জনের। রবীন্দ্র সরোবরের সাফারি পার্কে বুধবার সেই অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের স্মৃতিসৌধে মালা দিতে এসেছিলেন আত্মীয়-পরিজনেরা।

স্মৃতি: আমরি-অগ্নিকাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণ স্বজনদের। বুধবার, রবীন্দ্র সরোবরের সাফারি পার্কে।  ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

স্মৃতি: আমরি-অগ্নিকাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণ স্বজনদের। বুধবার, রবীন্দ্র সরোবরের সাফারি পার্কে।  ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:২১
Share: Save:

ন’বছর আগের এই দিনটার ক্ষত এখনও তাঁদের মন থেকে মুছে যায়নি। বাঘা যতীনের বাসিন্দা পারমিতা গুহঠাকুরতার স্পষ্ট মনে পড়ে, তাঁর মা মৃদুলা গুহঠাকুরতা কী ভাবে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে আমরি হাসপাতালে আগুন লেগেছে। তাঁরা ভিতরে আটকে পড়েছেন। ফোনে মায়ের আকুতি শুনে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন মেয়ে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল মৃদুলাদেবীর।

২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে আগুন লেগে মৃত্যু হয় ৯৩ জনের। রবীন্দ্র সরোবরের সাফারি পার্কে বুধবার সেই অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের স্মৃতিসৌধে মালা দিতে এসেছিলেন আত্মীয়-পরিজনেরা। ৩০-৩৫টি পরিবারের সদস্যেরা কোভিড-বিধি মেনে এ দিন ওই সৌধে মালা দেন, মোমবাতি জ্বালান এবং স্মৃতিচারণ করেন। পাশাপাশি তাঁরা প্রশ্ন তুললেন, আমরির ওই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে কি কোনও শিক্ষা নিয়েছে শহরের হাসপাতালগুলি? আগুন নেভানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে ক’টি হাসপাতালে?

এ দিন পারমিতা বলেন, ‘‘মা নিজেই ফোন করে জানিয়েছিলেন, আগুন লেগেছে। আমরা ছুটে যাই হাসপাতালে। দেখি, দাউদাউ করে জ্বলছে হাসপাতাল। অন্য অনেকের মতো মা-ও বেরোতে পারেনি।’’ রামলাল বাজারের বাসিন্দা শুভাশিস চক্রবর্তী জানান, তিনি প্রতি বছরই এই দিনে স্মৃতিসৌধে আসেন। ওই অগ্নিকাণ্ডে শুভাশিস হারিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী মুনমুন চক্রবর্তীকে। শুভাশিস বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। যে দিন ভোরে আগুন লাগে, তার আগের দিনই ওর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ঠিক সময়ে ছাড়া হলে ওকে ওই অভিশপ্ত রাতে হাসপাতালে থাকতেই হত না।’’ পারমিতা বলেন, ‘‘এখন কোনও হাসপাতালে গেলে অনেক সময়েই দেখি সেখানের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ নেই। শহরের সব বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে দমকলের ঢোকার পর্যাপ্ত জায়গা আছে তো? সব হাসপাতালের ফায়ার অ্যালার্ম ঠিক মতো কাজ করে তো? যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার থেকে শিক্ষা নিতে পারেনি শহর।’’

আরও পড়ুন: সোমবার থেকে ফের বাড়ছে মেট্রো

আরও পড়ুন: ওষুধ অমিল ন্যায্য মূল্যের দোকানে, ভোগান্তি

এ দিন মৃতদের পরিজনেদের তরফে ওই স্মৃতিসৌধ লাগোয়া পঞ্চাননতলা বস্তি এলাকার মানুষদের মাস্ক বিতরণ করা হয়। হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের দিনে পঞ্চাননতলার বহু বাসিন্দা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অসহায় রোগীদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন। শুভাশিস বলেন, ‘‘ওঁদের সে দিনের সেই আন্তরিক প্রচেষ্টা ভুলে যাই কী করে? ওঁদের জন্যই তো অনেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। তাই এই দিনটায় এখানে এলে ওঁদেরও ডাকি। ওঁরাও অনেকে এই স্মৃতিসৌধে মালা দেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

AMRI Fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE