জখম প্রোমোটার।
শৌচাগার ব্যবহারকে কেন্দ্র করে গোলমালের মতো সামান্য ঘটনা থেকে শুরু। তারই জেরে পরের দিন অস্ত্রশস্ত্র হাতে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াল একদল দুষ্কৃতী। সামাজিক অসহিষ্ণুতার এমনই নজির দেখল কসবার তালবাগান এলাকা।
যদিও স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের অভিযোগ, সোমবার রাতের ওই ঘটনার সুযোগ নিয়ে আসলে এলাকা দখলের উদ্দেশ্যেই মঙ্গলবার সকালে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা বেধে যায়। পুলিশ এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জয়দেব দাস ও সুরজিৎ ওরফে মুরগি ভোলাকে গ্রেফতার করেছে।
কী ঘটেছিল সোমবার?
পুলিশ সূত্রের দাবি, সোমবার রাতে কসবা থানার সুইনহো লেনের ১৬ নম্বর বস্তির বাসিন্দা বাবু হালদারের কিশোরী মেয়ে ও জয়দেব দাসের স্ত্রী মামণির মধ্যে শৌচাগার ব্যবহার করা নিয়ে কিছু গোলমাল হয়। পরে তা নিয়ে জয়দেব ও বাবুর বচসা বাধে। তা গড়ায় হাতাহাতি পর্যন্ত। পড়শিদের হস্তক্ষেপে সাময়িক ভাবে তা মিটে গেলেও জয়দেব রাতে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থানায় গিয়ে বাবুর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ জানিয়ে আসে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাতে পড়শির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পরে সেই জয়দেবই মঙ্গলবার সকালে দলবল নিয়ে এলাকায় ফিরে আসে। প্রথমে তারা বন্ডেল গেটের কাছে বাবুকে ধরে মারধর করে রেললাইনে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। পরে সঙ্গীদের নিয়ে জয়দেব ঢোকে সুইনহো লেন ও বেদিয়াডাঙা এলাকায়। সেখানে ঢোকার মুখেই সে পলাশ জানা নামে বাবুর এক আত্মীয়কে পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় বলে অভিযোগ।
সোনা পাপ্পুর সঙ্গে জয়দেব দাস। — নিজস্ব চিত্র
শুধু তা-ই নয়, জয়দেবের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, সে দলবল নিয়ে এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি করে এবং এলাকা ছাড়ার আগে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর এক প্রোমোটার ও তাঁর সঙ্গীকে বেধড়ক মারধরও করে। এমনকী, রক্তাক্ত পলাশকে স্থানীয় বাসিন্দারা হাসপাতালে নিয়ে যেতে গেলে তাঁদের লক্ষ করেও বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। দিনের বেলায় একদল দুষ্কৃতীর এমন তাণ্ডবে দোকানপাট বন্ধ করে লোকজন বাড়িতে ঢুকে পড়েন। পরে কসবা থানা এবং লালবাজার থেকে গুন্ডা দমন শাখার অফিসারেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পাশাপাশি
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু জয়দেব ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা তখন ফুঁসছেন। এক সময়ে তাঁরা কসবা সেতুর মুখে অবরোধের চেষ্টাও করেন। কিন্তু পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে সেই অবরোধ তুলে দেয়।
কে এই জয়দেব?
পুলিশের খাতায় জয়দেবের নামে প্রচুর অভিযোগ। সম্প্রতি এলাকার দাগি দুষ্কৃতী সোনা পাপ্পুর হাত ধরে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের সিন্ডিকেট চালু করেছে সে। আর সেই কারণেই বিরুদ্ধ সিন্ডিকেট ও প্রোমোটারদের হাত থেকে এলাকার দখল নিতে জয়দেব এখন মরিয়া। এর আগেও বেশ কয়েক বার এলাকা দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছে সে। কিন্তু কোনও বারই সফল হয়নি। সোমবার রাতের একটি ছোট্ট ঘটনাকে সামনে রেখে জয়দেব আবার এলাকা দখলের জন্য ঝাঁপায় বলে মনে করছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পিছনে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বিজনলাল মুখোপাধ্যায় এবং স্থানীয় বিধায়ক জাভেদ খানের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাই বলছেন। তাঁদের অভিযোগ, বিধায়কের হাত থেকে এলাকা নিজের হাতে নিতেই কাউন্সিলর সোনা পাপ্পু ও জয়দেবকে ব্যবহার করছেন। যদিও বিজনবাবু এই অভিযোগ মিথ্যে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা সামান্য কোনও ঘটনা নয়।
রীতিমতো তলোয়ার নিয়ে রাস্তায় লোকজনকে কোপানো হয়েছে। আমি পুলিশকে বলেছি, যারা করেছে, তারা দুষ্কৃতী।’’
জাভেদ খানের দাবি, ‘‘আমার লোক, ওদের লোক বলে কিছু হয় না। কোনও অপরাধ করলে পুলিশ আইন মেনে ব্যবস্থা নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy