Advertisement
১৬ জুন ২০২৪

মাথাতেই ঢুকছে না মাথা বাঁচানোর প্রচার

ওই পার্ক সার্কাসেই দেখা মিলল স্কুটার-আরোহী এক মায়ের। নিজে হেলমেট পরে থাকলেও সামনে এবং পিছনে বসে থাকা দুই শিশুর মাথায় হেলমেট নেই।

বেপরোয়া: এক মোটরবাইকে তিন জন, বালাই নেই হেলমেটেরও। বৃহস্পতিবার, মধ্য কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র

বেপরোয়া: এক মোটরবাইকে তিন জন, বালাই নেই হেলমেটেরও। বৃহস্পতিবার, মধ্য কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩৭
Share: Save:

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটে। পার্ক সার্কাস মোড়ের কাছে একটি রেস্তোরাঁর সামনে এসে দাঁড়াল মোটরবাইক। চালকের মাথায় হেলমেট থাকলেও পিছনে বসা স্কুলপড়ুয়া মেয়ের মাথা খালি। কেন? প্রশ্ন শুনেই তার দিকে চোখ পাকিয়ে প্রৌঢ় বললেন, ‘‘জানতাম, এক দিন ঝামেলায় ফেলবি!’’ বাবার দাবি, বারবার বলা সত্ত্বেও চুল নষ্ট হওয়ার ভয়েই নাকি মেয়ে হেলমেট পরতে চায় না। প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘হেলমেট পরতে বললেই বলবে, ভিতরের রাস্তা দিয়ে চলো।’’ মেয়ের আবার যুক্তি, ‘‘বাবা এত আস্তে চালায় যে, পাশ দিয়ে কেউ হাঁটলেও এগিয়ে যাবে। তাই হেলমেট পরার দরকার হয় না।’’

ওই পার্ক সার্কাসেই দেখা মিলল স্কুটার-আরোহী এক মায়ের। নিজে হেলমেট পরে থাকলেও সামনে এবং পিছনে বসে থাকা দুই শিশুর মাথায় হেলমেট নেই। কারণ জানতে চাইলে আত্মবিশ্বাসী মহিলার জবাব, ‘‘আমি খুব সাবধানে চালাই। তা ছাড়া, হেলমেট পরাতে গেলে ওরা কান্নাকাটি করে।’’

এ দিন দুপুরে হাতিবাগান মোড়ে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে এক বাইকচালক। মাথায় হেলমেট নেই। কেন পরেননি? যুবক কবুল করলেন, ‘‘ভুল হয়ে গিয়েছে। পরা উচিত ছিল।’’ তাঁর যুক্তি, বাড়ি থেকে দোকানে যাচ্ছেন। দূরত্ব বেশি নয়। তাই হেলমেট পরেননি। শহর জুড়ে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে হোর্ডিং, ঘোষণা, এমনকী পেট্রোল পাম্পে তেল না দেওয়ার নির্দেশ সত্ত্বেও বাইক-আরোহীদের একটি বড় অংশ হেলমেট পরছেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং শহরের রাস্তায় দুর্ঘটনা কমাতে উদ্যোগী হয়েছেন। কলকাতা পুলিশও কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। তা সত্ত্বেও ফি-দিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হেলমেট না পরে বেপরোয়া গতিতে বাইক চালানোর জেরে দুর্ঘটনায় পড়ছেন অনেকেই। হেলমেট নিয়ে সচেতনতা প্রসারের এত চেষ্টার পরেও কেন হেলমেট পরেন না? শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে পাওয়া গেল নানা উত্তর।

চালকদের একাংশ মনে করেন, তাঁরা এতই ভাল চালান যে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তাই হেলমেটের দরকার নেই। আশপাশের এলাকা বা স্বল্প দূরত্ব যেতে হেলমেট পরা জরুরি নয় বলেই মনে করেন তাঁদের একাংশ। অনেকের আবার ধারণা, শুধু চালক হেলমেট পরলেই হবে। এ দিন যেমন ধর্মতলায় এক দম্পতি বাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন। স্বামী হেলমেট পরলেও স্ত্রীর মাথায় শুধু ওড়না। কেন? স্বামীর উত্তর, ‘‘বাইক আমি চালাচ্ছি। তাই হেলমেট পরেছি। তা ছাড়া, ও তো ওড়না জড়িয়ে নিয়েছে। আমি খুব সাবধানে চালাই।’’

পুলিশ ধরে না? তাঁর জবাব ‘‘কোনও কোনও সময়ে পুলিশ অতিসক্রিয় হয় ঠিকই। আবার কখনও দেখেও দেখে না।’’ হেলমেট ছাড়া বেরোলে জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ এমন বেপরোয়া হন কী ভাবে। তা হলে কি ধরপাকড় ঠিক মতো হয় না? এ ব্যাপারে পুলিশের তরফে কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

তবে তরুণ প্রজন্মের বাইক-আরোহীদের বড় অংশই মনে করেন, হেলমেট পরলে দেখনদারির ব্যাপারটা ফিকে হয়ে যায়। এ দিন সিআইটি রোডে টি-শার্ট পরা দুই যুবক চোখে রোদচশমা এঁটে বাইক চড়তে বেরিয়েছিলেন। মাথায় কেন হেলমেট নেই, জানতে চাওয়া হলে তাঁদের কথা, ‘‘স্পিডোমিটারে গতি বাড়বে আর মাথার সামনের চুলটা হালকা করে উড়বে, তবেই না মজা! ওই হেলমেট পরে চোখ-মুখ ঢেকে বাইক চালালে তো কেউ ফিরেও তাকায় না।’’

শিশুদের হেলমেট না পরানোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ বাবা-মায়েরই যুক্তি, ছোটদের ভাল হেলমেট পাওয়া যায় না। আর অস্বস্তি হয় বলে নিম্নমানের হেলমেট নাকি বাচ্চারা পরতে চায় না। তবে শহরের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিভিন্ন বয়সীদের জন্যই ভাল মানের হেলমেট রয়েছে। যা পরতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

campaign helmetless driving Rules Break
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE