বি বা দী বাগে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক মোটরবাইক আরোহীর। বাইকটিকে ধাক্কা মেরেই দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায় গাড়িটি। তদন্তে নেমে পুলিশ সিসিটিভির ক্যামেরায় পুরো ঘটনাটি দেখতে পেলেও ঘাতক গাড়িটির নম্বর উদ্ধার করা যায়নি। টালিগঞ্জ থানার সামনে রাত দশটা নাগাদ সিগন্যালে লালবাতি জ্বলছে। সবুজ সিগন্যালের অপেক্ষায় দাড়িয়ে বাস থেকে ট্যাক্সি। আচমকাই একটি মোটরবাইক সিগন্যাল অমান্য করে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেল মুদিয়ালির দিকে।
এ রকম ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। সিসিটিভি-র পর্দায় ঘটনাটি দেখা গেলেও বহু ক্ষেত্রে ধরা পড়ে না অভিযুক্ত গাড়ির নম্বর। সামনের মাস থেকে রাস্তায় থাকা পুলিশকর্মীদের ফাঁকি দিয়ে ট্র্যাফিক আইন অমান্যকারী গাড়ি কিংবা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও এ বার ক্যামেরায় ধরা পড়ে যাবে অভিযুক্ত গাড়ির নম্বর। লালবাজার সূত্রে খবর, শহরের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি ক্যামেরা) বসাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিডার বা এএনপিআর ক্যামেরার মতো ওই অত্যাধুনিক ক্যামেরায় খুব সহজেই অভিযুক্ত গাড়ির রং, নম্বর— সমস্ত কিছুই ধরা পড়বে। এতে অভিযুক্ত গাড়ির হদিস পেতে সুবিধা হবে বলে দাবি তদন্তকারীদের। রাতের অন্ধকারেও ওই ক্যামেরার চোখ গাড়ির নম্বর ফাঁকি দিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ বার থেকে স্রেফ নজরদারি নয়, গোয়েন্দার কাজও করবে ক্যামেরার চোখ! ফলে ট্র্যাফিক আইন অমান্যকারীকে খুব সহজেই চিহ্নিত করে জরিমানা করা যাবে বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এখন সাতশোর বেশি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হলেও তাতে গতিশীল গাড়ির নম্বর শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত প্রথম পর্যায়ে শহরের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সংযোগস্থলে বসানো হচ্ছে এএনপিআর ক্যামেরা। প্রতিটি মোড়ে কম করে চারটি করে ওই অত্যাধুনিক ক্যামেরা বসানো হবে। যাতে ওই সংযোগস্থলের সব দিকের ছবি ধরা পড়বে ক্যামেরার লেন্সে। ফলে যাতায়াতকারী সব গাড়ির নম্বর রেকর্ড হয়ে থাকবে ওই ক্যামেরার চোখে। লালবাজার জানিয়েছে, ওই এএনপিআর ক্যামেরা এখন রাস্তার সিসিটিভি ক্যামেরার থেকে কম উচ্চতায় বসানো হবে। এতে যে কোনও গতিশীল গাড়ির নম্বর ও রং ধরে রাখতে পারবে সেই ক্যামেরা। পুলিশের দাবি, একেক জায়গায় ক্যামেরা বসাতে খরচ হবে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। ওই টাকা মঞ্জুর করার পর টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ। জায়গা চিহ্নিত করে তা বসানোর কাজ শুরু হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, এএনপিআর ক্যামেরার উপর নজরদারির জন্য লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের দোতলায় আলাদা মনিটারিং সেল করা হচ্ছে। যাতে এএনপিআর ক্যামেরা বসানো দশটি জায়গার জন্য পৃথক মনিটর থাকবে। ২৪ ঘণ্টাই ওই সেলের কর্মীরা তাতে নজরদারি চালাবেন। দুর্ঘটনার মতো অপরাধের পাশাপাশি কোনও গাড়ি ট্র্যাফিক আইন অমান্য করলে তা-ও চিহ্নিত করবেন পুলিশকর্মীরা। পরে সেই ট্র্যাফিক আইন অমান্যকারীর গাড়ির নম্বর থেকে গাড়ির মালিকের তথ্য বের করে তাঁকে নির্দিষ্ট ধারায় ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গের জরিমানার চিঠি পাঠানো হবে।
লালবাজার জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ওই ১০টি জায়গাতে এএনপিআর ক্যামেরা বসানো হলেও শহরের বাকি রাস্তাতেও ওই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy