Advertisement
E-Paper

পঁচিশের উৎসবে মিলল রাঙা উপহার

রাজ্য জুড়ে বছরভর রক্তের সঙ্কট চলে। তা মেটাতে ধীরে ধীরে রক্তদানের আন্দোলন যে জোরদার হচ্ছে, তা দেখা যায় সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় নজর দিলেই।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৫
শিবিরে এক আত্মীয়ার সঙ্গে সুভাষ ও বনশ্রী দাস। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

শিবিরে এক আত্মীয়ার সঙ্গে সুভাষ ও বনশ্রী দাস। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

অনুষ্ঠানে উপহার না আনার অনুরোধ অনেকে নিমন্ত্রণপত্রেই সেরে রাখেন। কিন্তু এ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে উপহারের অনুরোধ ছিল। কী উপহার দিতে হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন আয়োজক দম্পতি— রক্ত।

এমন অভিনব উপহারের অনুরোধে সাড়া না দিয়ে পারেননি আত্মীয়, পড়শিরা। শনিবার হাওড়ার জগদীশপুর হাটের সুভাষ ও বনশ্রী দাসের বিয়ের রজতজয়ন্তী বর্ষ ধরা রইল রক্তদান উৎসবের স্মৃতিতে। প্রায় ৫০ জন আত্মীয় ও প্রতিবেশী এ দিন রক্ত দিলেন। এমন আয়োজনে আপ্লুত ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও।

রাজ্য জুড়ে বছরভর রক্তের সঙ্কট চলে। তা মেটাতে ধীরে ধীরে রক্তদানের আন্দোলন যে জোরদার হচ্ছে, তা দেখা যায় সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় নজর দিলেই। সন্তানের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর মতো উৎসবে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার সেই তালিকায় এটি আরও একটি সংযোজন।

সুভাষবাবু পেশায় ব্যবসায়ী। “বিশেষ কোনও কারণে যদি শিবির হয়, সে যত দূরেই হোক, আমি গিয়ে রক্ত দিয়ে আসি। এটা আমার এক রকম নেশা বলতে পারেন।” নিজের বিবাহবার্ষিকীর শিবিরে রক্ত দিয়ে উঠে বললেন সুভাষবাবু। তিনি জানাচ্ছেন, এমন সিদ্ধান্ত নিতে তাঁকে সব থেকে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন স্ত্রী বনশ্রীদেবী। বাড়িতে রক্তদান শিবিরের পরিকল্পনা অবশ্য তাঁর বৃদ্ধা মা শোভারানিদেবীর, এমনটাই জানালেন বৌমা।

নিজে ডায়াবিটিসের শিকার বলে রক্ত দেওয়া হয়নি বনশ্রীদেবীর। তবে সুভাষবাবু যত ক্ষণ রক্ত দিয়েছেন, তত ক্ষণ স্বামীর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন তিনি। বনশ্রীদেবী জানালেন, পরিবারের সকলে ঠিক করেছিলেন ২৫ বছর উদ্‌যাপনটা একটু অন্য রকম করে হোক। তিনি বলেন, “ভাবনা যখন শুরু হল, তখন সকলেই যা বললেন, তাতে জাঁকজমকই ছিল মূল বিষয়। তখন আমার শাশুড়িমা রক্তদান শিবির করার কথা বলেন।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সুভাষবাবু বললেন, “মা বলল, তুই তো এখানে-ওখানে রক্ত দিয়ে আসিস। মানুষের ভালর জন্যই তো সেটা করিস। তা নিজেদের বাড়িতে তেমন শিবির করা যায় না? তাতে অন্যের ভাল হল, তোদেরও ভাল লাগল।” তার পরেই তাঁরা এক পরিচিতের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। অনুষ্ঠান হল হাওড়ায়, আর সেখানে রক্ত নিতে কলকাতা পার হয়ে উজিয়ে এল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাই যোগাযোগ করিয়ে দেন ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

ওই হাসপাতালের সহকারী সুপার সুপ্রিম সাহা বলেন, “সারা মাসে আমাদের ১২০০ ইউনিট রক্ত লাগে। কারণ ৮০০ ইউনিট দিতে হয় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের।” তিনি জানান, গ্রীষ্মে শিবির এমনিতেই কম হয়। তার উপরে ভোটের মরসুমে রাজনৈতিক দলের শিবিরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে হাসপাতালের রক্তের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। এ দিন শিবিরে এসেছিলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রা বিশ্বাস। তিনি বলেন, “এমন শিবির দেখিনি। ঋতু পাল নামে ওঁদের এক আত্মীয় জানতেন না শিবিরের কথা। কিন্তু শুনেই রাজি হয়ে যান রক্ত দিতে।”

রক্ত দিয়ে আপ্লুত দেবীদাস পাঁজি। সুভাষবাবুর ছোটবেলার বন্ধু। ব্যবসায়ী দেবীদাসবাবু বন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় রক্ত দিতে যেতেন। তাঁর কথায়, ‘‘সপ্তাহ খানেক আগে যখন এমন কিছু হতে চলেছে শুনলাম, চমকে গিয়েছিলাম। আমরাও এরকম কিছু করব।’’

এ দিন সকাল থেকেই দাস বাড়িতে উৎসবের আবহ। সব থেকে খুশি নতুন প্রজন্ম। সুভাষবাবুর বড় মেয়ে সম্পূর্ণা, তাঁর ননদের ছেলে-মেয়ে সৌস্তভ দাস ও পৌলমী খাঁড়ারা আগে কোনও দিন রক্ত দেননি। উৎসব যে এমন হতে পারে, সেই ধারণাই ছিল না তাঁদের। রক্ত দিতে পেরে তাই বেজায় খুশি ওঁরা। তাঁদের কাছে পুরো বিষয়টা ভীষণ ‘কুল’। সুপ্রিমবাবু তাই বলছেন, এই গরমে এমন ‘কুল’ শিবিরের আরও আয়োজন হলে অনেকে উপকৃত হবেন।

Blood Donation Howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy