নির্বাচনী প্রচার। বুধবার। ছবি: শৌভিক দে
দেশের ১২২টি বিমানবন্দরের মাত্র আট হাজার কর্মীর মধ্যে ইউনিয়নের নির্বাচন। আর তাকে ঘিরে কলকাতায় যতটা রাজনৈতিক চাপান-উতোর চলছে, তা সম্ভবত অন্য কোথাও চলছে না।
এ শহরে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে দুই পক্ষ। এক দিকে শাসক দলের সমর্থনপুষ্ট ক্ষমতাসীন কর্মী ইউনিয়ন। অন্য দিকে কংগ্রেস-সমর্থিত কামগর ইউনিয়ন। সাধারণ নির্বাচনের আগে যুযুধান দু’পক্ষের মধ্যে যে ধরনের শাসানি ও চোখরাঙানির অভিযোগ ওঠে, কলকাতা বিমানবন্দরের নির্বাচন ঘিরেও সেই ধরনের অভিযোগ উঠছে। অথচ, ভোটারের সংখ্যা মাত্র ১১০০। এমনকী, এক জন কর্মীকে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে। শুধু পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনের ক্ষেত্রে এ বার রাশ টেনেছেন কর্তৃপক্ষ।
তৃণমূলের যাবতীয় ইউনিয়নের দেখভাল করেন দোলা সেন। বিমানবন্দরের নির্বাচনে এত ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা কেন? দোলা সেনের বক্তব্য, ‘‘ক্ষমতাসীন ইউনিয়নের লোকজন নিজেদের তৃণমূলের লোক বলে দাবি করছেন বলে শুনেছি। কিন্তু ওই ইউনিয়নের ক্ষেত্রে আমাদের দলের কোনও অনুমোদন নেই। তাই বিমানবন্দরের নির্বাচনেও তৃণমূল নেই।’’
যদিও কামগর ইউনিয়নের সর্বভারতীয় নেতা দীপঙ্কর ঘোষ অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের মদতেই তাঁদের কর্মীকে মারধর করেছেন অন্য পক্ষের লোকজন। আর ক্ষমতাসীন ইউনিয়নের সম্পাদক প্রদীপ শিকদারের দাবি, ওই কর্মীকে মারধরের সঙ্গে তাঁদের কেউ জড়িত নন।
পাঁচ বছর আগে গত নির্বাচনের আগ দিয়ে ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গিয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দরের চৌহদ্দি। যা দেখে অবাক হয়েছিলেন এ শহরে আসা বিমানযাত্রীরাও। তখনও নতুন টার্মিনাল চালু হয়নি।
বুধবার দিল্লি থেকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের (এয়ারপোর্ট অথরিটি) চেয়ারম্যান গুরুপ্রসাদ মহাপাত্র বলেন, ‘‘সাধারণ নির্বাচন যখন হয়, তখনও নির্বাচন কমিশনের কিছু নিয়ম মানতে হয়। এ বার বলে দেওয়া হয়েছে, বিমানবন্দরের যেখানে সেখানে পোস্টার-ব্যানার লাগানো যাবে না। বিশেষত, যেখান দিয়ে যাত্রীরা যাতায়াত করেন।’’
বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিত বলেন, ‘‘টার্মিনাল তো নয়ই, নতুন ঝাঁ চকচকে প্রশাসনিক ভবনের ভিতরেও ব্যানার-পোস্টার লাগানো যাবে না। প্রশাসনিক ভবনের ১০০ মিটার দূরে গিয়ে ব্যানার-পোস্টার লাগানো যাবে।’’ ভোটারের সংখ্যা যেখানে মাত্র ১১০০, সেখানে ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টার লাগানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ, শুধু শক্তি প্রদর্শনের জন্যই ওই পোস্টার-ব্যানার লাগানো হচ্ছে। ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন। তার সপ্তাহখানেক আগে এক ইউনিয়নের কর্মীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে অন্য ইউনিয়নের বিরুদ্ধে।
যে বিমানবন্দরে অপ্রতুল এবং ভাঙাচোরা ট্রলি নিয়ে নিয়মিত অভিযোগ করেন যাত্রীরা, যেখানে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর মালপত্র ট্রলিতে তুলে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে টাকা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে বুকে পরিচয়পত্র ঝোলানো কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে, সেখানে কর্মী ইউনিয়নের ক্ষমতার এত কেন মোহ, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর বেসরকারি হাতে চলে যাওয়ার পরে সেখানে আর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মী নেই। তাই ইউনিয়নও নেই। কলকাতা ও চেন্নাইয়ের মতো বড় দুই বিমানবন্দর ছাড়াও গুয়াহাটি, চণ্ডীগড়, লখনউ-সহ বেশ কিছু বিমানবন্দরে এই নির্বাচন হয়। তবে কলকাতা ছাড়া অন্য কোথাও নির্বাচন ঘিরে মারধর, শাসানি ও রাজনৈতিক আকচাআকচির অভিযোগ নেই। কর্মীদের সুযোগ-সুবিধার কথা ভাবাই যেখানে ইউনিয়নের প্রধান কাজ, সেখানে ক্ষমতা দখলের জন্য এই চাপান-উতোর কেন? এ প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy