Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণে জলকষ্ট, বর্ষাই ভরসা মেয়রের

একেই গার্ডেনরিচের নতুন প্রকল্প থেকে জল এল না এখনও। তার উপরে যে জল আসছে, তা-ও বেআইনি ভাবে বেশি করে টেনে নিচ্ছে কিছু কিছু বহুতল। ফলে কল দিয়ে জলই পড়ছে না। যার জেরে দৈনিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করে জল কিনতে হচ্ছে শহরের বেশ কিছু এলাকার মানুষকে। একটি-দু’টি ওয়ার্ড নয়, দক্ষিণ কলকাতা এবং দক্ষিণ শহরতলির তিনটি (১০, ১১, ১২) বরোর অন্তত ১৭টি ওয়ার্ডের মানুষ গত ২০ দিন ধরে পর্যাপ্ত জল না পেয়ে চড়া দামে জল কিনছেন।

জলের অপেক্ষা। সোমবার, পার্ক সার্কাস এলাকায়। — নিজস্ব চিত্র

জলের অপেক্ষা। সোমবার, পার্ক সার্কাস এলাকায়। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০৩:৪২
Share: Save:

একেই গার্ডেনরিচের নতুন প্রকল্প থেকে জল এল না এখনও। তার উপরে যে জল আসছে, তা-ও বেআইনি ভাবে বেশি করে টেনে নিচ্ছে কিছু কিছু বহুতল। ফলে কল দিয়ে জলই পড়ছে না। যার জেরে দৈনিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করে জল কিনতে হচ্ছে শহরের বেশ কিছু এলাকার মানুষকে। একটি-দু’টি ওয়ার্ড নয়, দক্ষিণ কলকাতা এবং দক্ষিণ শহরতলির তিনটি (১০, ১১, ১২) বরোর অন্তত ১৭টি ওয়ার্ডের মানুষ গত ২০ দিন ধরে পর্যাপ্ত জল না পেয়ে চড়া দামে জল কিনছেন।
গার্ডেনরিচের নতুন প্রকল্প থেকে দিনে পাঁচ কোটি গ্যালন জল কবে থেকে আসবে, তা নিয়ে পুরসভার কোনও অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারই ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাইছেন না। যাঁরা বেআইনি ভাবে রাস্তা থেকে জল টেনে নিচ্ছেন, তাঁদের জলের লাইন কাটা হবে কি না, সে বিষয়েও কিছু বলতে পারছেন না পুর-কর্তারা। আর জল সরবরাহের দায়িত্ব যাঁর উপরে, সেই মেয়র কী বলছেন? মেয়রের আশ্বাস, ‘‘বর্ষা এলেই জল সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।’’
কিন্তু মেয়রের এই আশ্বাসের যুক্তিটি মাথায় ঢুকছে না পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের অনেক কর্তারই। ওই দফতরের এক প্রাক্তন কর্তার মন্তব্য, ‘‘কলকাতায় বৃষ্টির জল ধরে রাখার কোনও পরিকল্পনাই হয়নি। বহুতল বাড়িগুলিকে বর্ষার জল ধরে রাখার প্রকল্প রূপায়িত করতে বাধ্য করতে পারেনি পুরসভা। তাই শহরে অতিবৃষ্টি হলেও, সেই জল চলে যায় সমুদ্রে। তবে বর্ষা এলে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। জলের চাহিদা কিছুটা কমবে। এ ছাড়া তো মেয়রের কথার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।’’

কিন্তু প্রচণ্ড গরমে, তুমুল অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে মানুষ আর মেয়রের ওই ছেঁদো আশ্বাস শুনতে রাজি নন। পুরসভার ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের কালীকাপুরের এক বাসিন্দার তাই আক্ষেপ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে ঘোষণা করেছিলেন, পানীয় জল পাওয়ার জন্য আমাদের জলকর দিতে হবে না। কিন্তু যে দাম দিয়ে আমাদের রোজ জল কিনতে হচ্ছে, তার থেকে জলকর দেওয়া অনেক ভাল ছিল। তা হলে পুরসভার একটা দায়িত্ব থাকত। করের বদলে ভাল পরিষেবা অন্তত পেতাম।’’ অন্য বাসিন্দার কথায়, ‘‘বরো অফিসে গেলেই শুনি গার্ডেনরিচ থেকে অতিরিক্ত জল এই এল বলে। কিন্তু কবে আসবে, তা জানাতে পারছেন না কেউই।’’

জল দফতরের এক কর্তা জানিয়ে দিলেন, ‘‘ঠিক ছিল মে মাসে গার্ডেনরিচের ওই জল আসবে। আসেনি। জুনেও আসবে না। পরিকাঠামোর সব কাজ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত গার্ডেনরিচের অতিরক্ত জলের আশা না করাই ভাল।’’

তা হলে উপায়? কোনও উপায় নেই। পুরসভার ৯১, ৯২, ১০৬, ১০৮, ১০৯ ১০৫,১১০, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৯, ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষকে এই গরমে জলকষ্ট সহ্য করতেই হবে। যাঁদের জল কেনার সামর্থ রয়েছে, তাঁরা কিনে খাবেন। বাকিরা কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যানকে ঘেরাও করবেন। পুরসভার ট্যাঙ্ক থেকে মারামারি করে জল নেবেন। কাউন্সিলরেরা আশ্বাস দিতে দিতেও ক্লান্ত। তাঁরাও ঘেরাও-বিক্ষোভ-পথ অবরোধ নিজেদের ভবিতব্য হিসেবেই মেনে নিচ্ছেন। এক কাউন্সিলরের মন্তব্য, ‘‘অসুবিধার কথা বুঝছি। কিন্তু জলের জোগান কম থাকায় আমরাও অসহায়।’’ অথচ পুরভোটের আগে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, শহরের ৯৫ ভাগ মানুষের কাছে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে গিয়েছে। স্বভাবতই কাউন্সিলরদের এখন সেটাই শুনতে হচ্ছে মানুষের কাছ থেকে। শুনতে হচ্ছে, ‘জলের জোগান নেই কেন?’

এ বিষয়ে সোমবার মেয়র শোভনবাবুর বক্তব্য, এক শ্রেণির মানুষ বেআইনি ভাবে জল টেনে নিচ্ছেন। তাতেই আরও জলের জোগানে ঘাটতি বাড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE