Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Vikram Chatterjee

মদ খেয়ে গাড়ি চালালেও মত্ত ছিলাম না: পুলিশকে বিক্রম

মাঝে মাত্র ছ’দিনের ব্যবধান। আর এরই মধ্যে পুলিশি জেরায় পাল্টে গেল অভিনেতা বিক্রমের বয়ান। দুর্ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বিক্রম ঘোষণা করেছিলেন, সে দিন তিনি মদ্যপই ছিলেন না। কিন্তু, পুলিশি জেরায় উঠে এল অন্য তথ্য।

অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ১২:০৯
Share: Save:

মাঝে মাত্র ছ’দিনের ব্যবধান। আর এরই মধ্যে পুলিশি জেরায় পাল্টে গেল অভিনেতা বিক্রমের বয়ান।

দুর্ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বিক্রম ঘোষণা করেছিলেন, সে দিন তিনি মদ্যপই ছিলেন না। কিন্তু, পুলিশি জেরায় উঠে এল অন্য তথ্য। টালিগঞ্জ থানার দোতলায় মঙ্গলবার থেকে দু’দফায় সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিন পুলিশ অফিসারের জেরার মুখে বিক্রম স্বীকার করলেন, দুর্ঘটনার আগে মদ তিনি খেয়েছিলেন। যদিও তাতে তিনি বেসামাল হয়ে যাননি।

ঘটনার পরে বিক্রম জানান, বাঁ-দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে একটি গাড়ি এসে তাঁর গাড়িকে চেপে দেয়। তাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল তাঁর গাড়ি। আর মঙ্গলবারের পর থেকে জেরায় একাধিক বার বলেছেন, ট্রামলাইনে গাড়ি স্কিড করে যাওয়ায় ফুটপাতের পাশের স্তম্ভে ধাক্কা লেগে তাঁর গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারায়।

মদ্যপানের বিষয়টি জেরার মুখে স্বীকার করে নিলেও বিক্রমের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর যে ছবি এবং ভিডিও নিয়ে এত বিতর্ক হচ্ছে, সেখানে মোটেই তাঁর হাতে ধরা গ্লাসে মদ ছিল না। ছিল নরম পানীয়।

যা নিয়ে কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের বক্তব্য, ‘‘বিক্রমের বয়ানে এখনও বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। প্রয়োজনে ফের বিক্রমকে ডেকে জেরা করতে হতে পারে।’’

মঙ্গলবার রাত থেকে মাত্র বারো ঘণ্টার ব্যবধানে বিক্রমকে দু’দফায় প্রায় ঘণ্টা সাতেক জেরা করেছেন টালিগঞ্জ থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা।

বারো ঘণ্টার ব্যবধানে ফের থানায় হাজির বিক্রম। বুধবার বেলা পৌঁনে ২টো নাগাদ বাবা এবং আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে টালিগঞ্জ থানায় হাজির হন তিনি। শুরু হয় জেরা।

মঙ্গলবার রাত সোয়া ১টা নাগাদ একরাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টার জেরা শেষে টালিগঞ্জ থানা থেকে বাবার সঙ্গে বেরিয়ে যান বিক্রম।

রাতের জেরা শেষে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেও বেশ কিছু জায়গায় এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি তদন্তকারীদের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরে বিক্রম পুলিশকে বলেছেন, “মনে নেই”। তাই এ দিন ফের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।

তবে, মঙ্গলবার জেরার শেষে রীতিমত পুলিশি প্রহারায় বিক্রমকে থানা থেকে বের করানো হয়। বিভিন্ন স্তরের পুলিশ কর্তারা থানার পাশের একটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিক্রমের নীল রঙের গাড়ি এসে দাঁড়ায় থানার দরজার সামনে। জনা কয়েক পুলিশকর্তা সেখানে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সরাতে ব্যস্ত থাকেন। তার মধ্যেই বাবার সঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসেন বিক্রম। জেরায় তিনি কী বলেছেন, সে রাতের পার্টিতে মদ খেয়েছিলেন কি না সে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য তিনি কোনও উত্তর দেননি।

সোনিকা এবং বিক্রমের এক বন্ধুর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ শুটিং শেষ করে সোনিকাকে পার্ক স্ট্রিটের একটি রেস্তোরাঁর সামনে থেকে গাড়িতে তোলেন বিক্রম। এর পর শেক্সপিয়র সরণির একটি পানশালায় যান তাঁরা । সেখানেই দু’জনে মদ্যপান করেন। তার পর গাড়ি করে ভবানীপুরের একটি ক্লাবে যান। সেখানে তাঁদের আরও কয়েক জন বন্ধু হাজির ছিলেন। সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ও। রাত আড়াইটে নাগাদ বিক্রম ও সোনিকা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তার পর তাঁরা কসবায় যান। গাড়িতে বসেই বেশ কিছু ক্ষণ আড্ডা দেন। তার পর ফের লং-ড্রাইভে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা।

কিন্তু, কসবা থেকে লেক মার্কেটের মাঝে আর কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন বিক্রম আর সোনিকা? গাড়িতে সোনিকার সঙ্গে কোনও বিষয়ে বচসা বা মনোমালিন্য হয়েছিল কি না, এই সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় বিক্রম দাবি করেছেন, বেপরোয়া গতিতে তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলছিল। যদিও এক পুলিশ কর্তা জানান, তদন্তে জানা গিয়েছে, সিট বেল্ট না পরে ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন বিক্রম।

আরও পড়ুন...
বিক্রমের রক্তের নমুনা পাঠাতে এত দেরি কেন, উঠছে নানা প্রশ্ন

মঙ্গলবারের ম্যারাথন জিজ্ঞাবাদে এ দিন বিক্রম যা জানিয়েছেন তা হল:

প্রশ্ন: দুর্ঘটনার রাতে আপনি কি মদ্যপান করেছিলেন?

বিক্রম: হ্যাঁ, মদ্যপান করেছিলাম, কিন্তু মত্ত ছিলাম না।

প্রশ্ন: গাড়ি কে চালাচ্ছিলেন?

বিক্রম: আমি গাড়ি চালানোর মতো অবস্থাতে ছিলাম। তাই গাড়ির স্টিয়ারিং আমার হাতেই ছিল।

প্রশ্ন: গাড়ির কি ব্রেক ফেল করেছিল?

বিক্রম: না, সম্ভবত ট্রাম লাইনে চাকা পিছলে গিয়েছিল।

প্রশ্ন: দুর্ঘটনার সময় গাড়ির গতিবেগ কত ছিল?

বিক্রম: ৬০-৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।

সূত্রের খবর, বিক্রমের জবাবে সন্তুষ্ট নয় পুলিশ। দুর্ঘটনার পর গাড়িটি যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাতে প্রাথমিক অনুমান, গাড়ির গতি অনেকটা বেশি ছিল। বিক্রমের গাড়ির ইলেকট্রনিক্স ডেটা রেকর্ডার বা ইডিআর-এর তথ্য খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা। এয়ারব্যাগ কেন খোলেনি সে নিয়ে গাড়ির নির্মাতা সংস্থার সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার গাড়ির এয়ারব্যাগ বাজেয়াপ্ত করে তা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE