Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তা জুড়ে পার্কিংয়ের খেসারত নিত্য দুর্ঘটনা

বৃহস্পতিবার বাবার সঙ্গে সাইকেলে করে স্কুলে যাওয়ার পথে বেলেঘাটা-সিআইটি রোডে গাড়ির ধাক্কায় ঠিক এই কারণেই মারা যায় এক স্কুলছাত্রী।

বে-হুঁশ: এমন ভাবেই রাস্তা জুড়ে পার্কিং। বৃহস্পতিবার, বেলেঘাটা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

বে-হুঁশ: এমন ভাবেই রাস্তা জুড়ে পার্কিং। বৃহস্পতিবার, বেলেঘাটা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৪
Share: Save:

রাস্তার দু’ধার জুড়ে সারে সারে গাড়ি দাঁড়িয়ে না থাকলে চোদ্দো বছরের শ্বেতা দাসকে হয়তো প্রাণ হারাতে হত না!

মাঝখানে ডিভাইডার দু’ভাগ করেছে রাস্তাকে। তারই দু’পাশে দাঁড়িয়ে একের পর এক গাড়ি। কোথাও কোথাও ফেলা রয়েছে ইমারতি দ্রব্য থেকে শুরু করে নানা জিনিসপত্র। মাঝখানের এক চিলতে পথ দিয়ে যাতায়াত করছে বাস, ম্যাটাডর থেকে শুরু করে ছোট গাড়ি। ফলে লেগেই থাকছে যানজট। সদর রাস্তা থেকে আশপাশের রাস্তা, গলিতে ঢোকা-বেরোনোর সিগন্যাল নেই। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনাও।

বৃহস্পতিবার বাবার সঙ্গে সাইকেলে করে স্কুলে যাওয়ার পথে বেলেঘাটা-সিআইটি রোডে গাড়ির ধাক্কায় ঠিক এই কারণেই মারা যায় এক স্কুলছাত্রী। ১৪ বছরের শ্বেতার মৃত্যুর পরে রাস্তা দখলের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা। কিন্তু কেবল সিআইটি রোড নয়, রাস্তা দখলের এমন চিত্র শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের বহু অঞ্চলেই। বেলেঘাটা খালপাড়, বেকবাগান রো থেকে শুরু করে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, বাগবাজার, রাজাবাজার, যশোর রোড, সর্বত্রই এমন দৃশ্য।

পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতার কোন কোন রাস্তায় পার্কিং নিষিদ্ধ, তা ঠিক করে পুরসভা। সেই মতো পুলিশকে জানানো হয়। এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘নো পার্কিং এলাকায় কোনও গাড়ি দাঁড়ালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয় ট্র্যাফিক। কিন্তু যেখানে পার্কিংয়ের অনুমতি আছে, সে সব রাস্তায় স্থানীয় বাসিন্দারা গাড়ি রাখতে পারেন। এখানেও তাই-ই ছিল।’’ তবে সব ক্ষেত্রেই নিয়মিত পুলিশি নজরদারি চলে বলে দাবি তাঁর।

তবে এ ধরনের নিয়ম তাঁর জানা নেই বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম নিয়ম আমার জানা নেই। যখন আমাদের কাছে কেউ পার্কিংয়ের জন্য আবেদন করে, তখন তা নিয়ে পুলিশের কোনও আপত্তি আছে কি না, তা জানতে আমরা ট্র্যাফিকের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিই। ট্র্যাফিক পুলিশ অনুমতি দিলে তখন আমরাও অনুমতি দিই।’’

তবে বড় দুর্ঘটনার পরেও যে হেলদোল নেই, তা দেখা গেল এ দিনই। দুর্ঘটনার কিছু পরে হেমচন্দ্র নস্কর রোড ধরে বেলেঘাটার সিআইটি থেকে ফুলবাগানের দিকে যেতে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার দু’পাশে পরপর দাঁড়িয়ে ছোট গাড়ি, ম্যাটাডর এমনকী বাসও। স্থানীয়েরা জানালেন, কোনও কোনও বাস বেশ কয়েক দিন ধরে রাস্তার পাশে রাখা থাকে। এ দিনও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দরজা বন্ধ একটি মিনিবাসের চালক ও খালাসির কোনও সন্ধান মিলল না।

রাস্তা লাগোয়া একটি স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রাধা মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘এই রাস্তার পাশেই শুঁড়াকন্যা, শ্যামাপ্রসাদ,
দেশবন্ধুর মতো তিনটি স্কুলের ছেলেমেয়েরা যাতায়াত করে। সরু রাস্তার জন্য প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। কিছু বলতে গেলেই চালকেরা চোটপাট করেন। পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয় না।’’

ফুলবাগান এলাকায় রয়েছে কিছু নার্সিংহোমও। রাস্তার পাশে বাড়ি, দোকানের মতো ওই সব নার্সিংহোমেও আলাদা পার্কিং নেই। সেখানে আসা গাড়িগুলিও দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তা জুড়েই। এলাকার বাসিন্দা বুলা মান্না বলেন, ‘‘গাড়ি, মালপত্রে এত বড় রাস্তা দখল হয়ে সরু হয়ে গিয়েছে। যানজট লেগে থাকে। জট ছাড়লেই চালকেরা দ্রুত গতিতে যেতে চান। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।’’

শুধু ফুলবাগান নয়, আশপাশে বেলেঘাটা মেন রোডের মতো রাস্তার বেশ খানিকটা অংশও দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দখলে চলে গিয়েছে। বেলেঘাটা থানার বাজেয়াপ্ত করা বাস, ট্রাক এমনকী ক্রেনও রাখা মূল রাস্তার উপরে। আশপাশের ছোট রাস্তাগুলির হাল আরও খারাপ। পাশেই রাধামাধব গার্ডেন লেন দখল হয়ে রয়েছে গাড়ি আর ইমারতি মালপত্রে। রাস্তায় দাঁড়িয়েই ইট নামাচ্ছে ম্যাটাডর। ডাঁই করে রাখা আবর্জনাও। সেখানকার বাসিন্দা শঙ্কর দাসের অভিযোগ, বড় রাস্তার পাশে বাস দাঁড়িয়ে থাকলে গলি থেকে বড় রাস্তায় ওঠার সময় উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ি দেখা যায় না। তিনি বলেন, ‘‘এক দিকে রাস্তা দখলের জন্য প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটে, অন্য দিকে ছোট রাস্তা বা গলি থেকে সিআইটি রোডের মতো বড় রাস্তায় উঠতে গেলেও ঘটে দুর্ঘটনা।’’ ঠিক যেমন হয়েছে এ দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

accident Car parking Illegal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE